পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৭৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Հ-8 ভারতবর্ষ। রচনা করিয়াছিলেন। সংসার-ত্যাগী হইয়া দেশ-দশান্তয়ে পরিভ্রমণানন্তর শঙ্কর বেদাস্ত-ভাষ্য, গী তা ভাষা প্রভৃতি বহু গ্ৰন্থ রচনা করেন । জ্যোতিষ-শাস্ত্রে ও তিনি অসাধারণ পারদর্শিতা লাভ করিয়াছিলেন । এই অবস্থায় কাশীধামে এক মহাপুরুষের সহিত র্তাহার সাক্ষাৎ হয়। মহাপুরুষ বুঝিতে পারেন, শঙ্কর উন্নতির মার্গে উপস্থিত হইয়াছেন বটে ; কিন্তু শ্রেষ্ঠ-স্থান লাভ করিবার পক্ষে তখন ও সামান্য অন্তরায় মাছে। এই বুঝিয়া, জ্যোতিষ সম্বন্ধে শঙ্করাচার্থ্যের একটু অহমিকার ভাব দেখিয়া, মঙ্গপুরুষ জ্যোতিষ-সংক্রান্ত প্রশ্নের সমাধানে শঙ্করচার্য্যকে এক সমস্যায় ফেলেন। মহাপুৰুষ আপনার একজন শিষ্যের ভাগ্য-গণনা জন্ত শঙ্করাচাৰ্য্যকে অনুরোধ করেন ; শঙ্করাচাৰ্য্য, শিষ্যের মৃত্যুর দিন নিৰ্দ্ধারণ করিয়া বজাঘাতে মৃত্যু হইবে বলিয়া দেন। মহাপুরুষ সেই নিদিষ্ট দিনে যোগবলে শিষ্যের চৈতন্ত হরণ করেন, এবং তাহাকে মৃত্তিক মধ্যে প্রেথিত করিয়া রাখেন। শঙ্করের গণন-মতে বজ্ৰ যথানির্দিষ্ট কালে যথানির্দিষ্ট স্থানে শিষ্যের উপর পতিত হয় । কিন্তু চৈতন্তীন দেহে বজ্রের ক্রিয়া হয় না । মহাপুরুষ পরিশেষে যোগবলে শিষ্যকে জাগাইয়া তুলেন। এই ঘটনায় শঙ্করাচার্য্য বিস্মিত হন। অঙ্গীকার-মতে শঙ্করাচার্য্যের গ্রন্থ-সমূহ গঙ্গার জলে নিক্ষিপ্ত হয়। সঞ্চিত-ধন গ্ৰন্থরত্ব বিসর্জন দিয়া, শঙ্করাচার্য্য বড়ই ম্ৰিয়মাণ হন । মহাপুরুষ তাঙ্গ বুঝিতে পারিয়া, শঙ্করাচাৰ্য্যকে গঙ্গা তীরে গিয়া গঙ্গাদেবীর নিকট প্রার্থন জানাইতে বলেন । সেই প্রার্থনার ফলে গ্রন্থগুলি তরঙ্গের সহিত তীরে উপনীত হয়। শঙ্করাচার্য্যের বিস্ময়ের অবধি থাকে না । মহাপুরুষ তখন , শঙ্করাচার্য্যকে কৰ্ম্ম ও আকাঙ্ক্ষা সম্বন্ধে উপদেশ দেন। শঙ্করাচাৰ্য্য তাহাতে বুঝিতে পারেন, মায়াই সকল অনিষ্টের মূলাধার। তখন গ্রন্থগুলি পুনরায় আপনিই জলমধ্যে নিক্ষেপ করেন ; বিদ্যার অভিমান, জ্ঞানের অভিমান, ধৰ্ম্মের অভিমান—সকলই সেই সঙ্গে সঙ্গে বিসর্জিত হয়। ইহার পরই শঙ্করাচাৰ্য্য অদ্বৈত-জ্ঞান লাভ করেন । বত্রিশ বর্ষ বয়সে কেদারনাথ তীর্থে শঙ্কবাচাৰ্য্য দেহরক্ষা করিয়াছিলেন। কেরল-দেশের অন্তর্গত চিদম্বর তাহার জন্মস্থান বলিয়া পরিচিত। পণ্ডিতগণের গবেষণা অনুসারে ৭৮৮ খৃষ্টাব্দ তাহার জন্ম-বর্ষ বলিয়া নিৰ্দ্ধারিত হইয়াছে । অল্পদিন মাত্র ইহসংসারে অবস্থান করিয়া শঙ্করাচার্য্য অবিনশ্বর কীৰ্ত্তি-স্মৃতি রাখিয়া গিয়াছেন । বিকৃত বৌদ্ধধৰ্ম্মের কবল হইতে তিনি ব্রাহ্মণ্য-ধর্মের পুনরুদ্ধার সাধন করেন। কৰ্ম্ম মধ্যে র্তাহার বিভূতি প্রকাশ পায় ; তিনি শঙ্করাবতার শঙ্কর বলিয়া সম্পূজিত হন । শঙ্করাচার্য্যের জীবনী-সম্বন্ধে সাধারণ দৃষ্টিতে এবম্বিধ মত প্রচারিত আছে। কিন্তু একটু অনুসন্ধান করিলে তাহার জীবনের নানা রহস্তময় কাহিনী অবগত হইতে পারা যায়। শঙ্করাচার্য্যের জীবন-কাহিনী অলৌকিক ঘটনায় পরিপূর্ণ। ভারতের বিভিন্ন ভাষায় তাহার অসংখ্য জীবনচরিত বিরচিত হইয়াছে। তৎসমুদায়ে লোকোত্তর চরিতের বহু তথ্য নিহিত আছে। দুর অতীত কালে সংস্কৃত-ভাষায় তাহার যে সকল জীবনচরিত দৃষ্ট হয়, তন্মধ্যে শঙ্করদিগ্বিজয় ( আনন্দগিরি কৃত ), শঙ্করবিজয় (চিদ্ধিলাস যতি বিরচিত ), সংক্ষেপশঙ্করবিজয় (মাধবাচাৰ্য্য কুত ), লবুশঙ্করবিজয় ( নীলকণ্ঠ, সদানন্দ, ব্রহ্মানন্দ প্রভৃতি বিরচিত ), শঙ্করাচ্যুদয় (তিরুমল্প দীক্ষিত প্রণীত ), শঙ্করবিজয়-সংগ্রহ ( পুরুষোত্তম ভারতী বিরচিত ) বিশেষ প্রসিদ্ধ । এই বিভিন্ন জীবনচরিতের আলোচনায় শঙ্করের জীবনের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ