পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৭৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Qb" ভারতবর্ষ। পারি। আলেকজাণ্ডার প্রত্যাবৃত্ত হইলে তাহার প্রতিনিধি-শাসনকৰ্ত্ত ইউডেমাস কর্তৃক পৌরবদেশের বৃদ্ধ রাজা পোরাসের হত্যাকাও সাধিত হয়। তাহাতে ঐ দেশের অধিবাসীরা উত্তেজিত হইয়া উঠে । এই সময় চন্দ্রগুপ্ত সেই উত্তেজিত জনসাধারণের সহিত যোগদান করেন। ফলে গ্রীসের সম্বন্ধ-স্বত্র একেবারে ছিন্ন হইয়া যায়। ৩১৭ পূৰ্ব্ব-খৃষ্টাব্দে চন্দ্রগুপ্ত কর্তৃক ভারতবর্ষ হইতে গ্রীকদিগের উচ্ছেদ-সাধন হইয়াছিল। ফলতঃ, সামান্ত কয়েক বৎসর মাত্র পঞ্চনদ প্রদেশের একটা অংশবিশেষে সামান্তরূপ আধিপত্য রাখিয়া গ্ৰীকগণ সে অধিকার পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন । ইহাতে এই সময়ে গ্ৰীকগণের কোনও জ্ঞানের অনুসরণ ভারতবর্ষ করিয়াছিল বলিয়া মনে হয় না । মৌর্য্য রাজবংশের প্রতিষ্ঠার দিনে ভারতের সহিত গ্রীসের কতকটা সম্বন্ধ স্থাপিত হইয়াছিল বটে ; কিন্তু সে সম্বন্ধ-স্থত্রে গ্রীস লাভবান হইয়াছিল ভিন্ন, ভারতবর্ষ কখনই লাভবান হয় নাই। মম্বাদি সংহিতা-শাস্ত্র তখন ভারতবর্ষে প্রবৰ্ত্তিত ছিল ; ব্রাহ্মণগণ, যোগিগণ, শ্রমণগণ ধৰ্ম্মপ্রচার কার্য্যে ব্ৰতী ছিলেন ; কৃষ্ণ, বিষ্ণু, শিব প্রভৃতির পূজা-পদ্ধতি গ্রীকগণ এ দেশে প্রত্যক্ষ করিয়াছিলেন ; অদ্বিতীয় নীতিশাস্ত্রবেত্ত চাণক্য, চন্দ্রগুপ্তের দক্ষিণ-হস্ত রূপে রাজদণ্ড নিয়ন্ত্রিত করিতেছিলেন । সুতরাং বেশ বুঝিতে পারা যায়, তখনও ভারতের কাহারও নিকট কিছু গ্রহণের আবগুক হয় নাই । এতাদৃশ জীবন্ত প্রমাণ-পরম্পরা সত্ত্বেও যাহারা ভারতের কাব্য, মহাকার্য বা নাট্যসাহিত্যে পাশ্চাত্যের প্রভাব দেখিতে পান, তাহারা নিশ্চয়ই ভ্রান্ত পথে পরিচালিত, অথবা অযথা আত্ম-প্রাধান্ত-থ্যাপনে প্রযত্নপর । এ ভ্রাস্তি—এ আত্ম-প্রাধান্ত"" খাপনের প্রয়াস যে অধুনাসংঘটিত ইয়াছে, তাহা নহে। ডাইরোক্রাইসেষ্টোমস (Dio chrysostomos)–গ্ৰীসদেশের একজন প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ অলঙ্কার-শাস্ত্ৰবিং । ৫০ খৃষ্টাব্দ হইতে ১১৭ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত র্তাহার বিদ্যমানকাল প্রতিপন্ন হয়। তিনি কিনা লিথিয়া গিয়াছেন,—‘ভারতবাসীরা হোমারের আদর্শে কাব্য-মহাকাব্য প্রভৃতি রচনা করিয়াছেন।” আমরা পূৰ্ব্বেই দেখাইয়াছি, মহাভাবতের সহিত ইলিয়াড মহাকাব্যের ঘটনা-বিশেষের ও চরিত্র-বিশেষের সাদৃশু আছে। ইহাতে কোথায় মনে করা উচিত,— ইলিয়াডে মহাভারতের ছায়াপাত ঘটিয়াছে ; কিন্তু তাহা না মনে করিয়া মহাভারতই ইলিয়াডের আদর্শে লিখিত,—এইরূপ ঘোষণা করা হইয় থাকে। ইহা কতদূর অযৌক্তিক, সহজেই বুঝা যায় না কি ? গ্রীসের সহিত সম্বন্ধ হইল কবে, আর মহাভারত রচিত হইয়াছিল কৰে,—এই তত্ত্ব অনুসন্ধান করিলেই সকল তথ্য নিষ্কাষিত হয় না কি ? ধুে সময়ে ইলিয়াড মহাকাব্য রচিত হয়, তাহার পূৰ্ব্বে এ দেশের সম্পং সে দেশে পৌছানরই প্রমাণ পাওয়া যায় ; পরস্তু সে দেশের সম্পৎ এ দেশে কেহু সংগ্রহ করিয়া আনিয়াছিলেন বলিয়া কেহই প্রমাণ প্রদর্শন করিতে সমর্থ হন না। অধ্যাপক ওয়েবার তুলনায় কল্যকার লোক ; তিনি আবার রামায়ণে গ্রীসের প্রভাব দেখিতে পাইয়াছেন। ওয়েবারের যুক্তি এই যে,—ত্রোজান যুদ্ধে হেলেন অপহৃত হইয়াছিলেন ; লঙ্কাসমরে সীতা অপহৃত হন। ইউলিসিসের অলৌকিক কাৰ্য্যাবলীর মধ্যে স্ত্রীরামচন্দ্রের হরধমুর্ভঙ্গের স্মৃতি জাগরুক হয়। রামায়ণের দুই স্থানে ( প্রথম আদিকাণ্ডে এবং চতুর্থ কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ডে ) দুই বার ‘যবন’ শব্দের উল্লেখ আছে।