পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - দ্বিতীয় খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৪৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈষ্ণব সম্প্রদায় । 890 সত্যসঙ্কল্প বা সত্যের অনুষ্ঠান।) সেই যড়বিধ সুক্ষ্ম ভাব বিষ্ণুর স্বরূপ বলিয়াও কীৰ্ত্তিত হয়। (৫) অন্তরাত্মা বা অন্তৰ্য্যামী অর্থাৎ জীবের নিয়ন্ত জীবাত্মা মূৰ্ত্তি বিশেষ। পূৰ্ব্বোক্ত পঞ্চবিধ মূৰ্ত্তির বা ভাবের উপাসনা করিতে করিতে ভক্ত পরব্রহ্মের সামীৗপ্য লাভ করেন। রামানুজ সম্প্রদায়ের মতে উপাসনা পাচ প্ৰকার,--(১) অভিগমন, অর্থাৎ দেবমন্দিরাদি পরিষ্কার ও বিগ্রহের পবিত্রতারক্ষণ; (২) উপাদান, অর্থাৎ পুজার উদ্দেশ্যে পুষ্প ও গন্ধদ্রব্যাদি সংগ্ৰহ ; (৩) ইজ্যা, অর্থাৎ বলিদান ভিন্ন যাগযজ্ঞাদি পুজোপহার ; (৪) সাধন বা স্বাধ্যায়, অর্থাৎ মন্ত্র-জপ, স্তোস্ত্ৰ-পাঠ, নাম-কীৰ্ত্তন প্রভৃতি ; এবং ( ৫ ) যোগ অর্থাৎ ধ্যানধারণা প্ৰভৃতি দ্বারা পরমাত্মায় লীন হইবার চেষ্টা । এবম্বিধ উপাসনা প্ৰভৃতি দ্বারা ভক্ত বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হন এবং বৈকুণ্ঠে গমন করিয়া নিত্য-সুখে সুখী ত ইয়া থাকেন। রামানুজ সম্প্রদায় শৈবগণের চির-বিদ্বেষী। উত্তর-ভারতে রামানুজ সম্প্রদায়ের বৈষ্ণবগণের ংখ্যা অতি অল্প। র্যাহারা তৎপ্রদেশে বসবাস করেন, তঁাহারা ‘শ্ৰী বৈষ্ণবধ’ নামে পরিচিত। ত্ৰয়োদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে রামানুজ সম্পদায় দুই ভাগে বিভক্ত হইয়া যায়। এক বিভাগ ‘বেদগালাই’ নামে এবং অপর বিভাগ ‘তেঙ্গালাই’ নামে পরিচিত হয়। প্রথমােক্ত বিভাগ উওর-দেশীয় এবং শেষোক্ত বিভাগ দক্ষিণ-দেশীয় বলিয়াওঁ প্ৰসিদ্ধ। কঞ্জেভেরাম নগরে ( প্ৰাচীন কাঞ্চীপুরে ), এয়োদশ শতাব্দীতে, বেদস্তাচাৰ্য্য নামক জনৈক ব্ৰাহ্মণের আবির্ভাব হয় । তিনি রামানুজ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কিন্তু অল্পদিন পরেই তিনি প্রচার করেন,-“রামানুজ সম্পদায়ের মধ্যে অনেক ব্যভিচার দোষ ঘটয়াছে। সুতরাং ঐ সম্প্রদায়ের সংস্কার-সাধনের জন্য বিষ্ণু কর্তৃক তিনি মৰ্ত্ত্যে প্রেরিত হইয়াছেন।” তিনি আরও বলেন,-“দাক্ষিণাত্যের রামানুজ সম্প্ৰদায় অপেক্ষা উত্তর-ভারতের (আৰ্য্যাবৰ্ত্তের ) শ্ৰী-সম্প্রদায় সমধিক পবিত্রতা-সম্পন্ন ; তঁাহার, ধৰ্ম্ম-পালনে ন্যায়ানুমোদিত প্ৰকৃষ্ট পন্থা অবলম্বন করিয়া আছেন ; কিন্তু দাক্ষিণাত্যের রামানুজ সম্প্রদায় পথভ্ৰষ্ট হইয়া পড়িয়াছেন।” বেদান্তাচাৰ্য্যের এতদুক্তির ফলে, পূর্বোক্ত দুইটী শাখা-সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয়। বেদাগালাই বা উত্তর-দেশীয় শাখা সংস্কৃত ভাষায় রচিত বেদকে প্রামাণ্য বলিয়া স্বীকার করেন। শেষোক্ত শাখা আপনাদের জন্য তামিল-ভাষার চারি সহস্ৰ কবিতাযুক্ত এক খানি নূতন বেদ সঙ্কলন করিয়া লন। শেষোক্ত সম্পূ দায় প্রচার করিতে থাকেন, তাঁহাদের তামিল ভাষার বেদই আদি বেদ । সুতরাং সেই বেদের কবিতাই তঁহাদের মন্ত্রাদিতে ব্যবহৃত হইতে আরম্ভ হয়। ঐ বেদ “নালায়ির’ নামে পরিচিত এবং উপনিষদের অংশবিশেষের মৰ্ম্মাবলম্বনে উহা সংগ্রথিত । যাহা হউক, ‘বেদাগালাই’ এবং “তেঙ্গালাই'-এই উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এক্ষণে ঘোর মত-বিরোধ। বেদাগলাই সম্পূদায় বলেন,-“আপনার কৰ্ম্মবলে, অধ্যবসায়ের ফলে, মনুষ্যের আত্মা ( জীবাত্মা ) পরমাত্মার সামীপ্য-লাভে সমর্থ হয় ; যেমন, বানর-শিশু আপনার মাতার দেহ ধারণ করিয়া বুলিয়া থাকে, মানুষকেও সেইরূপ-ভাবে কাৰ্য্য দ্বারা পরমেশ্বরকে আকর্ষণ করিয়া থাকিতে হইবে।” কিন্তু তেঙ্গালাই বৈষ্ণবগণ বলেন,-“মানুষ আবার কি করিতে পারেন ? পরমাত্মা কাৰ্য্য না করাইলে, তিনি না উত্তোলন করিয়া লইলে, কে তঁহার সমীপস্থ হইতে সমর্থ হয় ? বিড়াল-শিশু