পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - প্রথম খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৪৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৬২ ভারতবর্ষ। সৰ্পদষ্ট, বিষজর্জরিত, ভস্মীভূত বৃক্ষকে যেরূপে শাখাপল্লবসহ পুনৰ্জ্জীবিত করিয়াছিলেন,— তাহার তুলনা আছে কি ? এইরূপ যতই আলোচনা করা যায়, প্রাচীন ভারতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সর্বাবয়ব-সম্পন্নতার পরিচয় পাইয়া, ততই বিস্ময়-বিমুগ্ধ হইতে হয়। পরমায়ু বৃদ্ধি বা যোগ-প্রভাবে দীর্ঘজীবন-লাভ — প্রাচীন ভারতেই দেখিতে পাই । কেবল কি এক দিকে ? যে দিকে দৃষ্টিপাত করি, সেই দিকেই প্রাচীন ভারতের গৌরব-গরিমার নিদর্শন বিদ্যমান। অধুনা অনেকানেক নুতন নুতন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আবিষ্কার করিয়া অনেকে যশোভাজন হইতেছেন ; পৃথিবীতে র্তাহাদের যশের অবধি থাকিতেছে না। কিন্তু একটু অনুসন্ধান করিলেই দেখিতে পাই,— সেই সকল তত্ত্বে ভারতবর্ষ কোন অনন্ত কাল হইতেই অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছিলেন ! ধৃষ্টান্ত কত উল্লেখ করিব ? শরীরের রক্ত-সঞ্চালন-ক্রিয়া পাশ্চাত্য ইউরোপে সে দিন মাত্র আবিষ্কৃত হইয়াছে ; কিন্তু ভারতের আয়ুৰ্ব্বেদ কোন দূর অতীত কালে সে তত্ত্ব প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন । পৃথিবীর গতি ও গোলত্বের বিষয়—পাশ্চাত্য জগতে কয় দিনই বা উপলব্ধি হইয়াছে ? কিন্তু প্রাচীন ভারতে কত পূৰ্ব্বে সে তত্ত্ব আলোচিত হইয়াছিল,—জ্যোতিযে পুরাণেতিহাসে তাহার সহস্ৰ সহস্র প্রমাণ বিদ্যমান রহিয়াছে। স্বর্য্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ণ, স্থৰ্য্য-রশ্মি দ্বারা চন্দ্রের আলোক প্রাপ্তি,— বেদ-পুরাণ সৰ্ব্বত্রই এ তত্ত্ব বিশদীকৃত ! আমরা পূর্বেই বলিয়াছি, যে দৃষ্টিতে দেখিবে, দৃষ্টি-শক্তির তারতম্যানুসারে ভারতে সকল দৃশুই দেখিতে পাইবে। যদি দেখিতে চাও-ভারতে কিছুই ছিল না, ভারতের সকলই ভ্রান্তিপূর্ণ ; দৃষ্ট-শক্তি সেই ভাবেই পরিচালিত হইবে। আবার যদি তত্ত্বানুসন্ধিৎসু হইয়া, সত্য আবিষ্কারের জন্য ব্যাকুল হইয়া, অনুসন্ধান কর ; তদনুরূপ দৃশুই দেখিতে পাইবে ;–তদনুরূপ সুকলই লাভ করিবে । পৃথিবীর গতি ও গোলত্বের একমাত্র দৃষ্টাস্তেই আমাদের এ সিদ্ধাত্ত্বের সার্থকতা প্রতিপন্ন হইতে পারে । বেদ, পুরাণ, প্রভৃতি শাস্ত্র-গ্রন্থ আলোচনায়, কেহ দেখিয়াছেন—পৃথিবী গোল, কেহ দেখিয়াছেন,—পৃথিবী চতুদোণ, কেহ দেখিয়াছেন—পৃথিবী গতিশীল, কেহ দেখিয়াছেন—স্বৰ্য্যই ঘুরিতেছে। শাস্ত্রের সদ্ব্যাখ্যা বা অপব্যাখ্যা অনুসারে, অথবা অভিজ্ঞ-অনভিজ্ঞ দ্বিবিধ ব্যক্তির বাক্য-পরম্পরায় নির্ভরপরায়ণ হওয়ায় এরূপ ঘটিয়াছে । ফলতঃ, পৃথিবীর গতি ও গোলত্বের বিষয় আর্য্য-হিন্দুগণের যে অবিদিত ছিল না, তাহ বলাই বাহুল্য। ঋগ্বেদে দেখিতে পাই,-“অব্রাহ গোরমন্ততত্ত্বষ্টর পীচ্যং। ইখ চন্দ্রমসে গৃহে ॥” যান্ধের নিরুক্ত-মতানুসারে ইহার অর্থ হয়,—স্বৰ্য্য-কিরণ চঙ্গে প্রতিফলিত হইয়াই চন্দ্রের আলোক হয় । এই রশ্বিপাত হইতেই চন্দ্র-গ্রহণের প্রসঙ্গ জাসিতে পারে। পৃথিবীর ছায়াপাত দ্বারা স্বৰ্য্য-কিরণের অবরোধকে চন্দ্র-গ্রহণ বলে। গ্রহণে চন্দ্রের উপরে পৃথিবীর যে ছায়া পতিত হয়, তাহ নিয়তই গোলাকার দেখায়। ধরিত্রী গোলাকার না হইলে, তাহার ছায়া নিয়তই গোলাকার দৃষ্ট হইত না। স্বৰ্য্য যে গতিশীল নহেন, শ্ৰীমদ্ভাগবতের একটা মোকেও তাহার আভাস পাওয়া যায়। স্বর্ঘ্যের মার্তগু’ নাম সম্বন্ধে সেখানে উক্ত হইয়াছে,-“মৃতেইও এষ এতদিন যদভুত ততো মাৰ্ত্তও বিবিধ বিষয়ে অভিজ্ঞতা ।