পাতা:পৌরাণিকী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌরাণিকী রাখিয়া, বেহুলা তাহার আলুলায়িত কুন্তল মার্জনা করিতে করিতে দুই-একটি অশ্রুবিন্দু পাত করিত, তখন তাহাকে ঠিক একটি দেবতার ন্যায় দেখাইত ; শোকাৰ্ত্তার বিহবল চক্ষু তাহার দিকে পড়িলে সে মনে ভাবিত, তাহার দুঃখ যেন স্বর্গের কোন করুণাময়ী দেবীর বুকে বাজিয়াছে ; তিনি স্বর্গের সুখ ত্যাগপূর্বক তাহার ব্যথায় ব্যথিত হইয়া সাস্তুনা দিতে আসিয়াছেন। বেহুলা কথা বলিত না, কিন্তু তাহার স্নিগ্ধ করুণার ভাবে অপূর্ব শান্তি বিতরণ করিত। কখনও কোন জলন্ত চিতার পার্শ্বে দাড়াইয়া নিনিমেষ চক্ষে বেহুলা দেখিত,-সতী স্বীয় উজ্জ্বল ললাটদেশ সিন্দূর-রঞ্জিত করিয়া কোন স্বৰ্গলোক দেখিতে দেখিতে স্বামীর পার্থে পুড়িয়া ছাই হইতেছেন, সেই দৃশ্য দেখিয়া বেহুলার গণ্ডদ্বয় উজ্জল হইয়া উঠিত, যে পুণ্যলোকে সতী চলিলেন তাহা বেহুলার চক্ষে যেন প্রত্যক্ষবৎ মনে হইত। কখনও সীতার কষ্টের কথা পড়িতে পড়িতে শিশিরাপুত পদ্মদলের ন্যায় তাহার চক্ষু ভাৱাক্ৰান্ত ও রক্তিম হইত ; কিন্তু যখন সাবিত্ৰা কিরূপে মৃত স্বামীকে বক্ষে ধারণ করিয়া, মৃত্যুর নিকট হইতে র্তাহার জীবন পুনরুদ্ধার করিয়া লইয়াছিলেন, বেহুলা সেই কাহিনী পাঠ করিত, তখন সেই পুণ্যময়ী সতীর ভাব তাহার হৃদয় পূর্ণ করিয়া ফেলিত, বালিকা একেবারে তন্ময় হইয়া যাইত । চতুৰ্দশ বৎসর বয়সে যখন বালিকা ‘অরক্ষণীয়া’ হইয়া উঠিয়াছে, তখন সায়-বেণে বর খুজিতে খুজিতে পাত্রীসন্ধানে-ভ্রমণশীল জনাৰ্দন শৰ্ম্মার মুখে চান্দ-সদাগরের পুত্র লক্ষ্মীন্দরের কথা জানিতে পারিলেন। চান্দ-বেণে স্বর্ণ-চতুৰ্দোলায় চাপিয়া নিছনি নগরে আসিলেন। কন্যাকে “পাকা দেখা’ হইবে-একশত ভারী তত্ত্ব লইয়া চলিল; সন্দেশ, ३७