পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।

যে চম্কে যাবে! ডিমের খোলা ভেঙে ফেল্লেই কিছু পাখী বেরয় না। যথোচিত তা’ দিতে হবে, তাতে সময় লাগে।

 শৈল একটুখানি চুপ করিয়া রহিল—তার পরে হঠাৎ হাসিয়া বলিয়া উঠিল—বেশত তা দেবার ভার আমি নেব মুখুজ্জে মশায়!

 অক্ষয়। আর একটু খোলসা করে বল্তে হচ্চে।

 শৈল। ঐ ত দশ নম্বরে ওদের সভা? আমাদের ছাদের উপর দিয়ে দেখন্-হাসির বাড়ি পেরিয়ে ওখানে ঠিক যাওয়া যাবে। আমি পুরুষবেশে ওদের সভার সভ্য হব, তার পরে সভা কতদিন টেঁকে আমি দেখে নেব!

 অক্ষয় নয়ন বিস্ফারিত করিয়া মুহূর্ত্তকাল স্তম্ভিত থাকিয়া উচ্চ হাস্য করিয়া উঠিল। কহিল, আহা কি আপশোষ যে, তোমার দিদিকে বিয়ে করে সভ্য নাম একেবারে জন্মের মত ঘুচিয়েছি, নইলে দলেবলে আমি সুদ্ধ ত তোমার জালে জড়িয়ে চক্ষু বুজে মরে পড়ে থাক্তুম! এমন মুখের ফাড়াও কাটে! সখী তবে মনোযোগ দিয়ে শোন,—

  (সিন্ধু ভৈরবীতে গান)
 ওগো হৃদয়-বনের শিকারী!
মিছে তারে জালে ধরা যে তোমারি ভিখারী!
সহস্রবার পায়ের কাছে আপনি যে জন ম’রে আছে,
নয়নবাণের খোঁচা খেতে সে যে অনধিকারী!

 শৈল কহিল—ছি মুখুজ্জে মশায় তুমি সেকেলে হয়ে যাচ্চ! ঐ সব নয়ন বাণটান গুলোর এখন কি আর চলন আছে? যুদ্ধবিদ্যার যে এখন অনেক বদল হয়ে গেছে!

 ইতিমধ্যে দুই বোন্ নৃপবালা, নীরবালা, ষোড়শী এবং চতুর্দশী প্রবেশ করিল। নৃপ শান্ত স্নিগ্ধ, নীর তাহার বিপরীত, কৌতুকে এবং চাঞ্চল্যে সে সর্ব্বদাই আন্দোলিত।