পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।
১০৯

দেখেছিলেম, নৃপবালা, নীরবালা—একি, বিপিন যে! তুমি এখানে হঠাৎ?

 বিপিন। তোমার সম্বন্ধেও ঠিক ঐ প্রশ্নটা প্রয়োগ করা যেতে পারে।

 শ্রীশ। আমি এসেছিলুম আমার সেই সন্যাস সম্প্রদায়ের কথাটা অবলাকান্তবাবুর সঙ্গে আলোচনা করতে। ওঁর যে রকম চেহারা, কণ্ঠস্বর, মুখের ভাব, উনি ঠিক আমার সন্ন্যাসীর আদর্শ হতে পারেন। উনি যদি ওঁর ঐ চন্দ্রকলার মত কপালটিতে চন্দন দিয়ে, গলায় মালা পরে, হাতে একটি বীণা নিয়ে সকাল বেলায় একটি পল্লীর মধ্যে প্রবেশ করেন তা হলে কোন্ গৃহস্থের হৃদয় না গলাতে পারেন?

 রসিক। বুঝতে পারচিনে মশায়, হৃদয় গলাবার কি খুব জরুর দরকার হয়েছে?

 শ্রীশ। চিরকুমারসভা হৃদয় গলাবার সভা।

 রসিক। বলেন কি? তবে আমার দ্বারা কি কাজ পাবেন?

 শ্রীশ। আপনার মধ্যে যে রকম উত্তাপ আছে আপনি উত্তর মেরুতে গেলে সেখানকার বরফ গলিয়ে বন্যা করে দিয়ে আস্‌তে পারেন। বিপিন উঠ্‌চ না কি?

 বিপিন। যাই, আমাকে রাত্রে একটু পড়তে হবে।

 রসিক। (জনান্তিকে) অবলাকান্ত জিজ্ঞাসা করচেন পড়া হয়ে গেলে বইখানা কি ফেরৎ পাওয়া যাবে?

 বিপিন। (জনান্তিকে) পড়া হয়ে গেলে সে আলোচনা পরে হবে, আজ থাক্‌।

 শৈল। (মৃদুস্বরে) শ্রীশ বাবু ইতস্ততঃ করচেন কেন, আপনার কিছু হারিয়েছে না কি?

 শ্রীশ। (মৃদুস্বরে) আজ থাক, আর এক দিন খুঁজে দেখব।

উভয়ের প্রস্থান।