পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।
১১৩

 বিপিন। ও কেহে! পূর্ণ দেখ্‌চি। ও বেচারার এ গলি থেকে আর বেরবার জো নেই! ঐ বীরপুরুষের অশ্বমেধের ঘোড়াটি বেজায় খোঁড়াচ্চে। ওকে একবার ডাক দেব?

 শ্রীশ। ডাক। ও কিন্তু আমাদেরই দুজনকে অন্বেষণ করে গলিতে গলিতে ঘুরচে বলে বোধ হচ্ছে না।

 বিপিন। পূর্ণবাবু, খবর কি?

 পূর্ণ। অত্যন্ত পুরোনো। কাল পর্শু যে খবর চল্‌ছিল আজও তাই চল্‌চে।

 শ্রীশ। কাল পর্শু শীতের হাওয়া বচ্ছিল, আজ বসন্তের হাওয়া দিয়েছে―এতে দুটো একটা নতুন খবরের আশা করা যেতে পারে।

 পূর্ণ। দক্ষিণের হাওয়ায় যে সব খবরের সৃষ্টি হয়, কুমার সভার খবরের কাগজে তার স্থান নেই। তপোবনে এক দিন অকাল বসন্তের হাওয়া দিয়েছিল তাই নিয়ে কালিদাসের কুমার সম্ভব কাব্য রচনা হয়েছে—আমাদের কপালগুণে বসন্তের হাওয়ায় কুমার-অসম্ভব কাব্য হয়ে দাঁড়ায়।

 বিপিন। হয় ত হোক্ না পূর্ণ বাবু—সে কাব্যে যে দেবতা দগ্ধ হয়েছিলেন এ কাব্যে তাঁকে পুনর্জীবন দেওয়া যাক্।

 পূর্ণ। এ কাব্যে চিরকুমার সভা দগ্ধ হোক্! যে দেবতা জ্বলেছিলেন তিনি জ্বালান্! না, আমি ঠাট্টা করচিনে শ্রীশ বাবু আমাদের চিরকুমার সভাটি একটি আস্ত জতুগৃহ বিশেষ। আগুণ লাগ্‌লে রক্ষে নেই। তার চেয়ে বিবাহিত সভা স্থাপন কর স্ত্রীজাতি সম্বন্ধে নিরাপদ থাক্‌বে। যে ইঁট পাঁজায় পুড়েছে তা’ দিয়ে ঘর তৈরি করলে আর পোড়বার ভয় থাকে না হে!

 শ্রীশ। যে সে লোক বিবাহ করে করে বিবাহ জিনিষটা মাটি হয়ে গেছে পূর্ণ বাবু। সেই জন্যেইত কুমার সভা। আমার যত দিন প্রাণ আছে ততদিন এ সভায় প্রজাপতির প্রবেশ নিষেধ।