পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৬
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।

 চন্দ্র। না, এটা পূর্ণর লেখা।

 নির্ম্মলা। পূর্ণবাবুর লেখা? ওঃ।

 চন্দ্র। পূর্ণ লিখছেন—“গুরুদেব আপনার চরিত্র মহৎ, মনের বল অসামান্য; আপনার মত বলিষ্ঠ প্রকৃতি লোকেই মানুষের দুর্ব্বলতা ক্ষমার চক্ষে দেখিতে পারেন ইহাই মনে করিয়া অদ্য এই চিঠিখানি আপনাকে লিখিতে সাহসী হইতেছি।”

 নির্ম্মলা। হয়েছে কি? বোধ হয় পূর্ণ বাবু চিরকুমার সভা ছেড়ে দেবেন তাই এত ভূমিকা করছেন। লক্ষ্য করে দেখেছ বোধ হয় পূর্ণ বাবু আজ কাল কুমার সভার কোন কাজই করে উঠতে পারেন না।

 চন্দ্র। “দেব, আপনি যে আদর্শ আমাদের সম্মুখে ধরিয়াছেন তাহা অত্যুচ্চ, যে উদ্দেশ্য আমাদের মস্তকে স্থাপন করিয়াছেন তাহা গুরুভার― সে আদর্শ এবং সেই উদ্দেশ্যের প্রতি এক মুহূর্ত্তের জন্য ভক্তির অভাব হয় নাই কিন্তু মাঝে মাঝে শক্তির দৈন্য় অনুভব করিয়া থাকি তাহা শ্রীচরণ সমীপে সবিনয়ে স্বীকার করিতেছি।”

 নির্ম্মলা। আমার বোধ হয়, সকল বড় কাজেই মানুষ মাঝে মাঝে আপনার অক্ষমতা অনুভব করে হতাশ হয়ে পড়ে―শ্রান্ত মন এক একবার বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়, কিন্তু সে কি বরাবর থাকে?

 চন্দ্র। “সভা হইতে গৃহে ফিরিয়া আসিয়া যখন কার্য্যে হাত দিতে যাই, তখন সহসা নিজেকে একক মনে হয়, উৎসাহ যেন আশ্রয়হীন লতার মত লুণ্ঠিত হইয়া পড়িতে চাহে।” নির্ম্মল আমরা ত ঠিক এই কথাই বল্‌ছিলেম।

 নির্ম্মলা। পূর্ণবাবু যা লিখেছেন সেটা সত্য―মানুষের সঙ্গ না হলে কেবলমাত্র সঙ্কল্প নিয়ে উৎসাহ জাগিয়ে রাখা শক্ত।

 চন্দ্র। “আমার ধৃষ্টতা মার্জ্জনা করিবেন, কিন্তু অনেক চিন্তা করিয়া একথা স্থির বুঝিয়াছি, কুমারব্রত সাধারণ লোকের জন্য নহে,―তাহাতে