পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।
৩৭

 বিপিন হাসিয়া কহিল; সে ঢের সময় আছে, যা কালই সুরু করা যেতে পারে এমন একটা কিছু কাজ বল। “মারি ও গণ্ডার লুঠি ত ভাণ্ডার” যদি পণ করে বস, তবে গণ্ডারও বাঁচবে ভাণ্ডারও বাঁচবে, তুমিও যেমন আরামে আছ তেমনি আরামে থাকবে। আমি প্রস্তাব করি, আমরা প্রত্যেকে দুটি করে বিদেশী ছাত্র পালন করব, তাদের পড়া শুনো এবং শরীর মনের সমস্ত চর্চ্চার ভার আমাদের উপর থাক্‌বে।

 শ্রীশ কহিল-এই তোমার কাজ। এর জন্যই আমরা সন্ন্যাসধর্ম গ্রহণ করেছি? শেষকালে ছেলে মানুষ কর্‌তে হবে, তাহলে নিজের ছেলে কি অপরাধ করেছে?

 বিপিন বিরক্ত হইয়া কহিল, তা যদি বল তাহলে সন্ন্যাসীর ত কর্ম্মই নেই; কর্ম্মের মধ্যে ভিক্ষে আর ভ্রমণ আর ভণ্ডামি!

 শ্রীশ রাগিয়া কহিল, আমি দেখ্‌চি আমাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন এসভার মহৎ উদ্দেশ্যের প্রতি যাঁদের শ্রদ্ধামাত্র নেই, তাঁরা যত শীঘ্র এ সভা পরিত্যাগ করে সন্তানপালনে প্রবৃত্ত হন ততই আমাদের মঙ্গল!

 বিপিন আরক্তবর্ণ হইয়া বলিল—নিজের সম্বন্ধে কিছু বল্‌তে চাইনে কিন্তু এ সভায় এমন কেউ কেউ আছেন, যাঁরা সন্ন্যাস গ্রহণের কঠোরতা এবং সন্তানপালনের ত্যাগ স্বীকার দুয়েরই অযোগ্য, তাঁদের—

 চন্দ্রমাধব বাবু চোখের কাছ হইতে কার্য্যবিবরণের খাতা নামাইয়া কহিলেন, উত্থাপিত প্রস্তাব সম্বন্ধে পূর্ণ বাবুর অভিপ্রায় জান্‌তে পারলে আমার মন্তব্য প্রকাশ করবার অবসর পাই।

 পূর্ণ কহিল, অদ্য বিশেষরূপে সভার ঐক্য বিধানের জন্য একটা কাজ অবলম্বন করবার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু কাজের প্রস্তাবে ঐক্যের লক্ষণ কি রকম পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে সে আর কাউকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাবার দরকার নেই। ইতিমধ্যে আমি যদি আবার