পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।

মালা আনাইয়া জ্যোৎস্নাশুভ্র আকাশে সিগারেটের ধূমসহযোগে বিচিত্র কল্পনাকুণ্ডলী নির্ম্মাণ করিতেছিল।

 শ্রীশ। আচ্ছা ভাই, শিশুপালক, তুমি কি সত্যি মনে কর আমি সন্ন্যাসী হতে পারিনে?

 বিপিন। কেন পার্ব্বে না! কিন্তু অনেকগুলি তল্পিদার চেলা সঙ্গে থাকা চাই।

 শ্রীশ। তার তাৎপর্য্য এই যে, কেউ বা আমার বেলফুলের মালা গেঁথে দেবে, কেউবা বাজার থেকে লেমনেড ও বরফ ভিক্ষে করে আন্‌বে, এই ত? তাতে ক্ষতিটা কি? যে সন্ন্যাস ধর্ম্মে বেলফুলের প্রতি বৈরাগ্য এবং ঠাণ্ডা লেমনেডের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মায় সেটা কি খুব উঁচুদরের সন্ন্যাস?:  বিপিন। সাধারণ ভাষায় ত সন্ন্যাসধর্ম্ম বলতে সেই রকমটাই বোঝায়।

 শ্রীশ। ঐ শোন! তুমি কি মনে কর ভাষায় একটা কথার একটা বৈ অর্থ নেই? এক জনের কাছে সন্ন্যাসী কথাটার যে অর্থ, আর একজনের কাছেও যদি ঠিক সেই অর্থ ই হয় তা হলে মন বলে একটা স্বাধীন পদার্থ আছে কি কর্ত্তে?

 বিপিন। তোমার মন সন্ন্যাসী কথাটার কি অর্থ করচেন আমার মন সেইটি শোনবার জন্য উৎসুক হয়েছেন!

 শ্রীশ। আমার সন্ন্যাসীর সাজ এই রকম—গলায় ফুলের মালা, গায়ে চন্দন, কানে কুণ্ডল, মুখে হাস্য। আমার সন্ন্যাসীর কাজ মানুষের চিত্ত আকর্ষণ। সুন্দর চেহারা, মিষ্টি গলা, বক্তৃতায় অধিকার, এ সমস্ত না থাকলে সন্ন্যাসী হয়ে উপযুক্ত ফল পাওয়া যায় না। রুচি বুদ্ধি কার্য্যক্ষমতা ও প্রফুল্লতা, সকল বিষয়েই আমার সন্ন্যাসী সম্প্রদায়কে গৃহস্থের আদর্শ হতে হবে।