পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।

ললিত সৌন্দর্য্যের প্রতি কি সমাদর রক্ষা হবে? তার কি উপায় করলে?

 শ্রীশ। নারীর একটা দোষ নরজাতিকে তিনি লতার মত বেষ্টন করে ধরেন, যদি তাঁর দ্বারা বিজড়িত হবার আশঙ্কা না থাক্‌ত, যদি তাঁকে রক্ষা করেও স্বাধীনতা রক্ষা করা যেত, তা হলে কোন কথা ছিল না। কাজে যখন জীবন উৎসর্গ করতে হবে তখন কাজের সমস্ত বাধা দূর করতে চাই—পাণিগ্রহণ করে ফেল্‌লে নিজের পাণিকেও বন্ধ করে ফেল্‌তে হবে, সে হলে চল্‌বে না পূর্ণবাবু।

 পূর্ণ। ব্যস্ত হোয়না ভাই, আমি আমার শুভ বিবাহে তোমাদের নিমন্ত্রণ করতে আসিনি। কিন্তু ভেবে দেখ দেখি, মনুষ্য জন্ম আর পাব কি না সন্দেহ―অথচ হৃদয়কে চিরজীবন যে পিপাসার জল থেকে বঞ্চিত করতে যাচ্চি তার পূরণস্বরূপ আর কোথাও আর কিছু জুট্‌বে কি? মুসলমানের স্বর্গে হুরি আছে হিন্দুর স্বর্গেও অপ্সরার অভাব নেই, চিরকুমার সভার স্বর্গে সভাপতি এবং সভ্যমহাশয়দের চেয়ে মনোরম আর কিছু পাওয়া যাবে কি!

 শ্রীশ। পূর্ণবাবু বল কি? তুমি যে―

 পূর্ণ। ভয় নেই ভাই, এখনো মরিয়া হয়ে উঠিনি। তোমার এই ছাদভরা জ্যোৎস্না আর ঐ ফুলের গন্ধ কি কৌমার্য্যব্রতরক্ষার সহায়তা করবার জন্যে সৃষ্ট হয়েছে? মনের মধ্যে মাঝে মাঝে যে বাষ্প জমে আমি সেটাকে উচ্ছ্বসিত করে দেওয়াই ভাল বোধ করি—চেপে রেখে নিজেকে ভোলাতে গেলে কোন্ দিন চিরকুমারব্রতের লোহার বয়লার খানা ফেটে যাবে। যাই হোক্ যদি সন্ন্যাসী হওয়াই স্থির কর ত আমিও যোগ দেব―কিন্তু আপাততঃ সভাটাকে ত রক্ষা করতে হবে।

 শ্রীশ। কেন? কি হয়েছে?