পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ।
৮৭

 শ্রীশ উঠিয়া কহিল—অবলাকান্ত বাবু, আপনি এ সমস্ত কি আয়োজন করেচেন? আমাদের সভার কার্য্যাবলীর মধ্যে মিষ্টান্নটা ছিল না!

 রসিক। (উঠিয়া) সেই ত্রুটি যিনি সংশোধন করচেন তাঁকে সভার হয়ে ধন্যবাদ দিই।

 শ্রীশের মুখের দিকে না চাহিয়া থালা সাজাইতে সাজাইতে শৈল কহিল, শ্রীশ বাবু আহারটাও কি আপনাদের নিয়মবিরুদ্ধ?

 শ্রীশ দেখিল কণ্ঠস্বরটিও অবলা নামের উপযুক্ত, কহিল এই সভ্যটির আকৃতি নিরীক্ষণ করে দেখলেই ও সম্বন্ধে কোন সংশয় থাক্‌বে না।― বলিয়া বিপুলায়তন বিপিনকে টানিয়া আনিল।

 বিপিন কহিল, নিয়মের কথা যদি বলেন অবলাকান্ত বাবু, সংসারের শ্রেষ্ঠ জিনিষমাত্রই নিজের নিয়ম নিজে সৃষ্টি করে; ক্ষমতাশালী লেখক নিজের নিয়মে চলে, শ্রেষ্ঠ কাব্য সমালোচকের নিয়ম মানে না। মিষ্টান্নগুলি সংগ্রহ করেচেন এর সম্বন্ধেও কোন সভার নিয়ম খাট্‌তে পারে না—এর একমাত্র নিয়ম, বসে যাওয়া এবং নিঃশেষ করা! ইনি যতক্ষণ আছেন ততক্ষণ জগতের অন্য সমস্ত নিয়মকে দ্বারের কাছে অপেক্ষা করতে হবে।

 শ্রীশ কহিল―তোমার হল কি বিপিন? তোমাকে খেতে দেখেছি বটে কিন্তু এক নিঃশ্বাসে এত কথা কইতে শুনিনি ত!

 বিপিন। রসনা উত্তেজিত হয়েছে, এখন সবল বাক্য বলা আমার পক্ষে অত্যন্ত সহজ হয়েছে। যিনি আমার জীবনবৃত্তান্ত লিখ্‌বেন, হায়, এ সময়ে তিনি কোথায়?

 রসিক টাকে হাত বুলাইতে বুলাইতে কহিলেন, আমার দ্বারা সে কাজটা প্রত্যাশা করবেন না, আমি অত দীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে পারব না।

 নূতন ঘরের বিলাস সজ্জার মধ্যে আসিয়া চন্দ্রমাধব বাবুর মনটা