পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

दऊभान द७ी मार्गश्ठा Nè O6 সতরাং নবসাহিত্যকে বিশেষত্বহীন এবং প্রতিভাহীন বলায়। সহৃদয়তার পরিচয় দেওয়া হয় না। আরো বিপদের কথা এই যে, আমরা উভয়সংকটে পড়েছি। কেননা যদি আমরা গত শতাব্দীর সাহিত্যের অনসরণ করি, তা হলে সমালোচকদের মতে আমরা নকল সাহিত্য রচনা করি। আর যদি অন্যাকরণ না করি, তা হলে পবোেন্ত মতে আমরা কাব্যের উচ্চ আদশ থেকে ভ্ৰাট হই। অথচ আসল ঘটনা এই যে, নবযাগ কতক অংশে পােব যাগের অধীন এবং কতক অংশে স্বাধীন। এই কারণে নবীন সাহিত্যিকেরা গত যাগের সাহিত্যের কোনো কোনো অংশের অন্যাকরণ করতে অক্ষম এবং কোনো কোনো অংশের অনসরণ করতে বাধ্য। একালে যে মেঘনাদবধ কিংবা দাগেশনন্দিনীর অন্যাকরণে গদ্য এবং পদ্য কাব্য রচিত হয় না, তার কারণ বাঙালি জাতির মনের কলে সকট মিলটন মিল ও ক’ৎ-এর চাবির দম ফরিয়ে এসেছে। অপর পক্ষে বতমান কাব্যসাহিত্যের উপর রবীন্দ্রনাথের প্রভাব যে অতিবিস্তৃত এবং অপ্রতিহত, তা অস্বীকার করবার জোও নেই, প্রয়োজনও নেই। রবীন্দ্রনাথের কবিতা বত মান কাব্যসাহিত্যের একমাত্র আদশ বলে যে সে-সাহিত্যের কোনো মাল্য কিবা মযাদা নেই। এ কথা বলায় শািন্ধ সস্থলদশি তার পরিচয় দেওয়া হয়। সতরাং নবসাহিত্যকে নকল সাহিতা বলার কি সার্থকতা আছে, তাও একটা পরীক্ষা করে দেখা দরকার। সাধারণত লোকের বিশ্ববাস যে, পরের লেখার অন্যাকরণ কিবা অনসরণ করে সাহিত্য রচনা করা যায় না। এ কথাটা ষোলো-আনা সত্য নয়। ও উপায়ে অবশ্য কালিদাস হওয়া যায় না, কিন্তু শ্ৰীহৰ্ষ হওয়া যায়। রত্নাবলী মালবিকাগিনিমিত্রের ছাঁচে ঢালা, অথচ সংস্কৃত সাহিত্যের একখানি উপাদেয় নাটক। পথিবীর মহাপ্ৰাণ কবিদের সপশে বহা লেখক প্রাণবন্ত হয়ে ওঠেন, এবং এই কারণেই তাঁদের অবলম্বন করেই সাহিত্যের নানা স্কুল গড়ে ওঠে। ফরাসি এবং জমােন সাহিত্যে এর ভুরি ভূরি প্রমাণ পাওয়া যায়। গ্যেটের আনগত্য স্বীকার করাতে শিলারের প্রতিভার হ্রাস হয় নি। ভিক্টর হিউগোর পদাণ্ডক অনসরণ করে মােস সে Musset অ-কবির দেশে গিয়ে পড়েন নি। এবং ফ্লোবেয়রের কাছে শিক্ষানবিশি করার দরবন গী। দ্য মোপাসরি গলপ সাহিত্য-সমাজে উপেক্ষিত হয় নি। প্রাচীন বঙ্গ সাহিত্যেও এরপ ঘটনার যথেস্ট পরিচয় পাওয়া যায়। যাকে আমরা বৈষ্ণব কবিতা বলি, তা চন্ডীদাস ও বিদ্যাপতির পদাবলীর অন্যাকরণেই রচিত হয়েছিল। কিন্তু তাই বলে জ্ঞানদাস গোবিন্দদাস লোচনদাস অনন্তদাসের রচনার যে কোনো মাল্য নেই, এ কথা কোনো সমালোচক সজ্ঞানে বলতে পারবেন না। আর যদি এ কথা সত্য হয় যে, পরসাহিত্যের অন্যাকরণে সাহিত্য গঠিত হয় না, তা হলে উনবিংশ শতাব্দীতে বাংলায় সাহিত্য রচিত হয় নি- কেননা গত শতাব্দীর মধ্যযাগের গল্প এবং উপন্যাস, কাব্য এবং মহাকাব্য, সবই যে-সাহিত্যের অনাকরণে রচিত হয়েছিল, সে-সাহিত্য আমাদের নিতান্তই পর ; তা অপর দেশের অপর জাতের অপর ভাষায় লিখিত। এ সত্ত্বেও আমরা গত যাগের এই আহেলা বিলাতি সাহিত্যকে বাংলা সাহিত্য বলে আদর করি। তার কারণ এই যে, যে সাহিত্য উপর-সাহিত্য, তা অপরই হোক আর আপনিই হােক, মানবমনের উপর তার প্রভাব অনিবায ।