পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফরাসি সাহিত্যের বর্ণপরিচয় ܬܬܬ ফরাসি জাতির ক্ষাত্ৰধম জগৎবিখ্যাত। ফরাসি লেখকেরা বাক যন্ধেও সভ্যতার আইনকানন মেনে চলেন। সাহিত্যক্ষেত্রেও তাঁরা ধমন্যদ্ধের পক্ষপাতী। ফরাসি জাতি হাসতে জানে, তাই তারা কথায় কথায় ক্ৰোধান্ধ হয়ে ওঠে না। তীক্ষা হাসির যে কি মৰ্মভেদী শক্তি আছে, এ সন্ধান যারা জানে তাদের পক্ষে কটকটব্য প্রয়োগ করা অনাবশ্যক। যার হাতে তরবারি আছে, সে লগািড় ব্যবহার করে না। ভলেন্টয়ারের হাসির যে বিশ্ববজয়ী শক্তি ছিল, তার তুলনায় পথিবীর সকল দেশের সকল যাগের সকল জেরেমিয়ার উচ্চবাচ্য যে ব্যৰ্থ, এ সত্য পথিবীসদ্ধ লোক Sir ফরাসি সাহিত্য এই অর্থে সােপাল্টভাষী যে, সে সাহিত্যের ভাষায় জড়তা কিংবা অস্পষ্টতার লেশমাত্রও নেই। যে বিষয়ে লেখকের পরিস্কার ধারণা আছে, সেই কথা অতি পরিস্কার করে বলাই হচেছ ফরাসি সাহিত্যের ধর্ম। আমি পর্বে বলেছি যে, ফরাসি সাহিত্যের ভিতর সায়েন্স এবং আর্ট দইই আছে। ফরাসি মনের এই প্রসাদগণপ্রিয়তার ফলে সে দেশের দশন-বিজ্ঞানের ভিতরও সাহিত্যরস থাকে। পান্ডিত্য না ফলিয়ে অসাধারণ বিদ্যাবদ্ধির পরিচয় একমাত্র ফরাসি লেখকেরাই দিতে পারেন। জ্ঞানবিজ্ঞানের ঐকান্তিক চৰ্চাতেও ফরাসি পন্ডিতদের সামাজিক বদ্ধি ও রসজ্ঞান নম্ৰাট হয় না। প্রকৃত দার্শনিক কি বৈজ্ঞানিক কেবলমাত্র নিজের ব্যবহারের জন্য সত্য আবিভকার করতে ব্ৰতী হন না। মানবজাতির নিকট সত্য প্রকাশ ও প্রচার করাই তাঁর সব প্রধান উদ্দেশ্য। সতরাং যে সত্য তিনি আবিস্কার করেছেন, তা পরিস্কার করে অপরকে দেখিয়ে দেওয়া বঝিয়ে দেওয়া, যা জটিল তাকে সরল করা, যা কঠিন তাকে সহজ করা তাঁর পক্ষে একান্ত কতব্য। এক কথায় সায়েণ্টিসেন্টর পক্ষে আর্টিস্ট, জ্ঞানীর পক্ষে গণী হওয়া আবশ্যক। জমােন পন্ডিতদের সঙ্গে তুলনা করলেই দেখা যায় ফরাসি পন্ডিতেরা কত শ্রেষ্ঠ গণী।। জমান পন্ডিতেরা অসাধারণ পরিশ্রম করে যা প্রস্তুত করেন তা অধিকাংশ সময়ে বিদ্যার গ্যাস বই আর কিছই নয়। অপর পক্ষে ফরাসি পন্ডিতেরা মানবজাতির চোখের সমখে যা ধরে দেন, সে হচ্ছে গ্যাসের আলো। বর্তমান ইউরোপের সর্বপ্রধান দার্শনিক বেগািস-র গ্রন্থসকলের সঙ্গে যাঁর সাক্ষাৎপরিচয় আছে। তিনিই জানেন যে, সে-সকল গ্রন্থ কাব্য হিসাবেও সাহিত্যের সর্বোচচ স্থান অধিকার করতে পারে। বেগািস-র দশন অতি কঠিন, কিন্তু তাঁর রচনা যেমন প্রাঞ্জল তেমনি উডজবল। দার্শনিকজগতের এই অম্বিবতীয় শিলপীর হাতে গদ্যরচনা অপােব চমৎকাৱিত্ব লাভ করেছে। মণিকার যেমন রত্নের সঙ্গে রত্নের যোজনা করেন, বেগাস-ও তেমনি পদের সঙ্গে পদের যোজনা করেন। চিন্তারাজ্যের এই ঐন্দ্রজালিকের লেখনীর মাখে বশীকরণমন্ত্র আছে। এই স্বচ্ছতা এই উত্তজবলতার বলেই ফরাসি সাহিত্য যাগে যাগে ইউরোপের অপরাপর সাহিত্যের উপর নিজের প্রভাব বিস্তার করেছে। আলোর ধর্ম এই যে, তা দিগ দিগন্তে ব্যাপ্ত হয়ে পড়ে এবং সকল দেশকেই নিজের কিরণে উদ্ভাসিত করে তোলে। এই কারণেই আমি পাবে বলেছি, ফরাসি সভ্যতার নির্বাণের সঙ্গে সঙ্গেই মানবের মনোজগতের আলো নিবে शात् ।