পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলার ভবিষ্যৎ SO6 কমের উপরে ভক্তির প্রাধান্য প্রচার করতে উদ্যত হলেন, সেদিন তাঁকে সংস্কৃত ত্যাগ করে বাংলার আশ্রয় নিতে হল। চৈতন্যের ধর্মসংস্কারকে বাংলাদেশের রিফমেশন বলা অসংগত নয়। তার পর এসেছে আমাদের রেনেসাঁস; ইউরোপ একদিন যেমন গ্ৰীক সাহিত্য আবিস্কার করে ল্যাটিন ভাষার একাধিপত্য থেকে মন্তি লাভ করে, আমরাও তেমনি ইংরেজি সাহিত্য আবিস্কার করে সংস্কৃত ভাষার একাধিপত্য হতে মন্তিলাভ করেছি এবং সে একই কারণে। পশ্চিম ইউরোপে গ্ৰীক, ধমের নয়, বিদ্যাশিক্ষার ভাষা বলেই গ্রাহ্য হয়েছিল ; আমাদের কাছেও ইংরেজি তেমনি ধমের নয়, বিদ্যাশিক্ষার ভাষা বলেই গ্রাহ্য হয়েছে। ল্যাটিন অবশ্য তাই বলে ইউরোপে বাতিল হয়ে যায় নি, সে ভাষার অধ্যয়ন-অধ্যাপনা আজও সে দেশে সজোরে চলছে। কিন্তু সে বিদ্যাশিক্ষার ভাষা হিসাবে। অবশ্য রোমান ক্যাথলিক জাতির কাছে সে ভাষা আজও কতক পরিমাণে ধমের ভাষা বলে মান্য কিন্তু প্রধানত বিদ্যাশিক্ষার ভাষা বলেই গণ্য। আমাদের বাঙালিদের কাছে সংস্কৃত আজকের দিনে ঐ হিসাবেই थCM €3 II । nN অতএব দেখা গেল যে, পরিভাষা, তা মতই হোক আর বিদেশীই হোক লোকভাষার উপর প্রভািত্ব করে এই গণে যে, তা জ্ঞানবিজ্ঞানের ভাষা, এক কথায় বিদ্যাশিক্ষার ভাষা; বলা বাহাল্য, ধমের ভাষাও আসলে বিদ্যার ভাষা। অপর বিদ্যার সঙ্গে এ বিদ্যার প্রভেদ এই যে, তা অপরা বিদ্যা নয়, তা হচ্ছে থিয়োলজি অর্থাৎ ব্রহ্মবিদ্যা। এই গণেই ইংরেজি আজ বাংলার উপর প্রভািত্ব করছে। এ প্রভাতৃত্ব হতে মন্তিলাভ করবার একমাত্র উপায় হচ্ছে বাংলাকে বিদ্যাশিক্ষার ভাষা, অধ্যয়ন-অধ্যাপনার ভাষা, এক কথায় বিদ্যালয়ের ভাষা করে তোলা। আমাদের উচচ আশা এই যে, ভবিষ্যতে বাংলা উচ্চশিক্ষার ভাষা হবে; শােধ বাল্যবিদ্যালয়ে নয়, বিশববিদ্যালয়েও এ ভাষা পাবে প্রথম আসন, এবং ইংরেজি দ্বিতীয় আসন গ্রহণ করবে। যতদিন বাংলা, হয় বিদ্যালয়ের বহি ভর্তিত হয়ে থাকবে, নয়। ইংরেজির অনাচর কিংবা পাশবচর হিসাবে সেখানে স্থান পাবে, ততদিন বাংলা সাহিত্য সবগুগসন্দির ও সব শক্তিশালী হয়ে উঠবে না। এবং বাঙালির প্রতিভাও ততদিন পণবিকাশ লাভ করবার পণে সযোগ পাবে না। সাহিত্যেই জাতীয় মনের প্রকাশ, অতএব সাহিত্যের ঐশীবযেই জাতীয় মনের ঐশীবয্যের পরিচয়। আমি পাবেই বলেছি, ভাষা ও মন একই বস্তুর এপিঠ আর ওপিঠ। বাংলা ভাষাকে বিদ্যালয়ের ভাষা করে- তোলবার পথে কত এবং কি গারতের বাধা আছে, সে বিষয়ে আমি সম্পণে সচেতন। তৎসত্ত্বেও আমি বলি, সে-সকল বাধা আমাদের অতিক্রম করতেই হবে, নচেৎ বাঙালির মন চিরকাল অধ্যাপক অবস্থাতেই থেকে যাবে। বঙ্গ সাহিত্যের গরগাম্ভীর প্রবন্ধনিবন্ধাদি পাঠ করলেই দেখা যায় যে, সে-সকল রচনা কোনো অংশে পাকা আর কোনো অংশে কাঁচা। এ-সব লেখার সঙ্গে বিশ্বববিদ্যালয়ের পরীক্ষাথীদের উত্তরপত্রের একটা পারিবায়িক সাদশ্যে আছে। পঠিত পশতকের সমিতি লেখকদের