পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Rik V প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ আয়াসে বিনা ক্লেশে বহুকাল হতে প্রকাশ করে আসছি, এবং সম্পভবত আরো বহকাল পর্যন্ত প্ৰকাশ করব, সেই ভাষাই বাংলা ভাষা ? বাংলা ভাষার অস্তিত্ব প্রকৃতিবাদ অভিধানের ভিতর নয়, বাঙালির মাখে। কিন্তু অনেকে, দেখতে পাই, এই অতি সহজ কথাটা স্বীকার করতে নিতান্ত কুণ্ঠিত। শনতে পাই কোনো কোনো শাস্ত্ৰজ্ঞ মৌলবি বলে থাকেন যে, দিল্লির বাদশাহ যখন উদ্য ভাষা সন্টি করতে বসলেন, তখন তাঁর অভিপ্ৰায় ছিল একেবারে খাঁটি ফারসি ভাষা তৈয়ার করা, কিন্তু বেচারা হিন্দদের কান্নাকাটিতে কৃপাপরবশ হয়ে হিন্দিভাষার কতকগলো কথা উদ্দীতে ঢাকতে দিয়েছিলেন। আমাদের মধ্যেও হয়তো শাস্ত্ৰজ্ঞ পন্ডিতদের বিশ্ববাস যে, আদিশরের আদিপরষ যখন গৌড়ভাষা সন্টি করতে উদ্যত হলেন, তখন তাঁর সংকলপ ছিল যে, ভাষাটাকে বিলকুল সংস্কৃত ভাষা করে তোলেন, শােধ গৌড়বাসীদের প্রতি পরম অন কম্পপাবশত তাদের ভাষার গাটিকতক কথা বাংলা ভাষায় ব্যবহার করতে অনািমতি দিয়েছিলেন। এখন যাঁরা সংস্কৃত বহল ভাষা ব্যবহার করবার পক্ষপাতী, তাঁরা ঐ যে গোড়ায় গলদ হয়েছিল। তাই শধরে নেবার জন্যে উৎকণ্ঠিত হয়েছেন। আমাদের ভাষায় অনেক অবিকৃত সংস্কৃত শব্দ আছে, সেইগালিকেই ভাষার গোড়াপত্তন ধরে নিয়ে, তার উপর যত পার আরো সংস্কৃত শবদ চাপাওকালক্ৰমে বাংলায় ও সংস্কৃতে দ্বৈতভাব থাকবে না। আসলে জ্ঞানী লোকের কাছে এখনো নেই। মাতৃভাষার মায়ায় বদ্ধ বলে, আমরা সংস্কৃত-বাংলায় অদ্বৈতবাদী হয়ে উঠতে পারছি নে। বাংলায় ফারসি কথার সংখ্যাও বড়ো কম নয়, ভাগ্যক্রমে ফারসি-পড়া বাঙালির সংখ্যা বড়ো কম। নইলে সম্পভবত তাঁরা বলতেন, বাংলাকে ফারসিবহল করে তোলো। মধ্যে থেকে আমাদের মা-সরস্বতী, কাশী যাই কি মক্কা যাই, এই ভেবে আকুল হতেন। এক-একবার মনে হয় ও উভয়সংকট ছিল ভালো, কারণ একেবারে পন্ডিতমণ্ডলীর হাতে পড়ে মার আশ কাশীপ্রাপিত হবারই অধিক সম্পভাবনা। এই প্রসঙ্গে পন্ডিতপ্রবার সতীশচন্দ্ৰ বিদ্যাভূষণ মহাশয়ের প্রথম বক্তব্য এই যে, সাহিত্যের উৎপত্তি মানষের অমর হবার ইচ্ছায়। যা-কিছ বতমান আছে, তার কুলজি লিখতে গেলেই গোড়ার দিকটে গোঁজামিলন দিয়ে সারতে হয়। বড়ো বড়ো দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক, যথা শংকর স্পেন্সার প্রভাতিও ঐ উপায় অবলম্বন করেছেন। সতরাং কোনো জিনিসের উৎপত্তির মািল নির্ণয় করতে যাওয়াটা ব্যথা পরিশ্রম। কিন্তু এ কথা নিভয়ে বলা যেতে পারে যে, আর যা হতেই হোক, অমর হবার ইচ্ছে থেকে সাহিত্যের উৎপত্তি হয় নি। প্রথমত, অমরত্বের ঝকি আমরা সকলে সামলাতে পারি নে, কিন্তু কলম চালাবার জন্য আমাদের অনেকেরই আঙলি নিসপিস করে। যদি ভালো-মন্দা-মাঝারি। আমাদের প্রতি কথা প্রতি কাজ চিরস্থায়ী হবার তিলমাত্র সম্পভাবনা থাকত, তা হলে মনে করে দেখােন তো আমরা কজনে মখ খলতে কিংবা হাত তুলতে সাহসী হতুমি ? অমরত্বের বিভীষিকা চোখের উপর