পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাধভাষা বনাম চলিত ভাষা RA O যাঁরা মাতৃভাষাকে ইতর ভাষা বলে গণ্য করেন তাঁরা হয়তো বঙ্গ ভাষায় সাহিত্য রচনা ব্যাপারটি “নীচের উচচভাষণ'-আবয়পি মনে করেন, এবং সবদ্ধিবশত ওরােপ দাম্ভিকতা হেসে উড়িয়ে দেওয়াটাই সংগত বিবেচনা করেন। সাধারণত লোকের বিশ্ববাস এই যে, প্রচলিত আচারব্যবহারকে মন দিয়ে যাচিয়ে নেওয়াতে বিপদ আছে, কেননা তাদের মতে, শািন্ধ স্ত্রী-বন্ধি নয়, বদ্ধি মাত্রই প্ৰলয়ংকরী। সমাজ সম্বন্ধে এ মতের কতকটা সার্থকতা থাকলেও সাহিত্য সম্পবন্ধে মোটেই নেই; কারণ, যে লেখার ভিতর মানব-মনের পরিচয় পাওয়া না যায়, তা সাহিত্য নয়। সতরাং ললিতবাব পর্ব পক্ষের মত লিপিবদ্ধ করবার চেন্টা করে বিষয়টি আলোচনার যোগ্য করে তুলেছেন। একটা ধরাছোঁয়ার মতো যক্তি না পেলে তার খন্ডন করা অসম্ভব। কেবলমাত্ৰ ধোঁয়ার উপর তলোয়ার চালিয়ে কোনো ফল নেই। ললিতবাব বহন অনসন্ধান করে সাধভাষার সপক্ষে দটি যান্তি আবিস্কার 卒びエー ১. সাধভাষা আর্টের অনকােল। ২. চলিত ভাষার অপেক্ষা সাধভাষা হিন্দ স্থানি মারাঠি গজরাটি প্রভাতি ভিন্নজাতীয় লোকদের নিকট অধিক সহজবোধ্য। আর্টের দোহাই দেওয়া যে কতদার বাজে, এ প্রবন্ধে আমি সে সম্পবন্ধে কোনো আলোচনা করতে চাই নে। এ দেশে প্রায়ই দেখতে পাওয়া যায় যে, যক্তি যখন কোনো দাঁড়াবার স্থান পায় না, তখন আর্ট প্রভাতি বড়ো বড়ো কথার অন্তরালে আশ্রয় গ্রহণ করে। যে বিষয়ে কারো কোনো সাপটে ধারণা নেই, সে বিষয়ে বক্ততা করা অনেকটা নিরাপদ, কেননা সে বক্ততা সে অন্তঃসারশন্য, এ সত্যটি সহজে ধবা পড়ে না। তথাকথিত সাধভাষা সম্পবন্ধে আমার প্রধান আপত্তি এই যে, ওরাপ কৃত্রিম ভাষায় আর্টের কোনো স্থান নেই। এ বিষয়ে আমার যা বক্তব্য আছে তা আমি সময়ান্তরে সর্বতন্ত্র প্রবন্ধে বলব। এ স্থলে এইটকু বলে রাখলেই যথেষ্ট হবে যে, "রচনার প্রধান গণ এবং প্রথম প্রয়োজন, সরলতা এবং স্পষ্টতা">— লেখায় সেই গণটি আনবার জন্য যথেষ্ট গণপনার দরকার। আর্টহীন লেখক নিজের মনোভাব ব্যক্ত করতে কৃতকাষ হন না। দ্বিতীয় যক্তিটি এতই অকিঞ্চিৎকর যে, সে সম্পবন্ধে কোনোরাপ উত্তর করতেই প্রবত্তি হয় না। আমি আজ দশ-এগারো বৎসর পড়বে, আমার লিখিত এবং ভারতী পত্রিকাতে প্রকাশিত ‘কথার কথা' নামক প্রবন্ধে এ সম্প্রবন্ধে যে কথা বলেছিলাম, এখানে তাই উদ্ধত করে দিচ্ছি। যক্তিটি বিশেষ পরনো, সতরাং তার পরনো উত্তরের পািনরাপ ও অসংগত নয় এ বিষয়ে শাস্ত্ৰী মহাশয়ের বক্তব্য যদি ভুল না বঝে থাকি, তা হলে তাঁর মত সংক্ষেপে এই দাঁড়ায় যে, বাংলাকে প্রায় সংস্কৃত করে আনলে, আসামি হিন্দ স্থানি প্রভৃতি বিদেশী লোকদেব পক্ষে বঙ্গ ভাষা -শিক্ষাটা অতি সহজসাধ্য ব্যাপার হয়ে উঠবে। দ্বিতীয়ত, অন্য ভাষায় যে সংবিধাটুকু নেই, বাংলার তা আছে- যে-কোনো সংস্কৃত কথা যেখানে হােক ১, বঙ্কিমচন্দ্র। “বাওগলা ভাষা", বিবিধ প্ৰবন্ধ