পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতবর্ষের ঐক্য শ্ৰীযন্ত রাধাকুমদ মখোপাধ্যায় উপরোক্ত নামে পাস্তিকা-আকারে ইংরেজি ভাষায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। যাঁরা দিবারাত্র জাতীয় ঐক্যের সর্বপন দেখেন তাঁদের পক্ষে, অর্থাৎ শিক্ষিত ব্যক্তিমাত্রেরই পক্ষে, এই ক্ষদ্র পস্তকের আলোচ্য বিষয়ের যথেস্ট মাল্য আছে। সত্বদেশ কিংবা সবজাতির নাম উল্লেখ করবামাত্রই এক দলেৰ লোক আমাদের মখ-ছোপ দিয়ে বলেন, ও-সব কথা উচচারণ করবার তোমাদের অধিকার নেই, কেননা ভারতবর্ষ বলে কোনো-একটা বিশেষ দেশ নেই এবং ভারতবাসী বলে কোনো-একটা বিশেষ জাতি নেই। ভারতবর্ষের অর্থ হচ্ছে ক্ষমূদ্র ক্ষমূদ্র এবং পরস্পর-অসংযন্ত নানা খন্ড দেশ এবং ভারতবাসীর অর্থ হচ্ছে ক্ষমূদ্র ক্ষদ্র পরস্পর-সম্পর্কহীন নানা ভিন্ন छाऊ। ভারতবর্ষ যে একটি প্রকান্ড মহাদেশ, এ সত্য আবিস্কার করবার জন্য পায়ে হেটে তীর্থ পৰ্যটন করবার দরকার নেই। একবার এ দেশের মানচিত্ৰখানির উপব চোখ বলিয়ে গেলেই আমাদের শ্রান্তি বোধ হয়, এবং শরীর না হোক মন অবসন্ন হয়ে পড়ে। এবং ভারতবর্ষের জনসংখ্যা যে অগণ্য, আর এই কোটি কোটি লোক যে জাতি ধম ও ভাষায় শত শত ভাগে বিভক্ত, এ সত্য আবিস্কার করবার জন্যও সেন্সস রিপোর্ট পড়বার আবশ্যক নেই; চোখ-কান খোলা থাকলেই তা আমাদের কাছে নিত্যপ্রত্যক্ষ হয়ে ওঠে। আমাদের জীবনের যে ঐক্য নেই, এ কথাও যেমন সত্য- আমাদের মনে যে ঐক্যের আশা আছে, সে কথাও তেমনি সত্য। এক-ভারতবর্ষ হচ্ছে। এ যাগের শিক্ষিত লোকের ইউটােপিয়া, সংস্কৃত ভাষায় যাকে বলে গন্ধব পােরী। সে পরী আকাশে ঝোলে এবং সকলের নিকট তা প্রত্যক্ষ নয়। কিন্তু যিনি একবার সে পরীর মমীরপ্রাচীর মণিময়তোরণ রাজতসৌধ ও কনকচড়ার সাক্ষাংলাভ করেছেন, তিনি আকাশরাজ্য হতে আর চোখ ফেরাতে পারেন না। এক কথায় তিনি ভারতবর্ষের একতার দিবাসস্বপন দেখতে বাধ্য। অনেকের মতে দিবাসস্বপন দেখাটা নিন্দনীয়, কেননা ও ব্যাপারে শােধ আলীকের সাধনা করা হয। মানষে কিন্তু বাস্তবজগতের অজ্ঞতাবশত নয়, তার প্রতি অসন্তোষবশতই, চোখ-চেয়ে স্বপন দেখে; সে সবপ্নের মল মানবহৃদয়ে প্রতিঠিত। এবং ইতিহাস এ সত্যের সাক্ষা দেয় যে, আজকের কলপনারাজ্য কখনো কখনো কালকের বাস্তবজগতে পাবণত হয়, অর্থাৎ দিবাসস্বপন কখনো কখনো ফলে। সতরাং ভারতবর্ষে বা ঐক্যসাধন জাতীয জীবনের লক্ষ্য কবে তোলা অনেকের পক্ষে সবাভাবিক এবং সকলের পক্ষেই অবশ্যক । সমগ্ৰ সমাজের বিশেষ-একটা-কোনো লক্ষ্য না থাকায় দিন দিন আমাদের সামাজিক জীবন নিজীব এবং ব্যক্তিগত জীবন সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে। পাবে যে ঐকোর কথা বলা গেল, তা অবশ্য আইডিয়াল ইউনিটি; এবং অধিকাংশ শিক্ষিত লোকের মনে এক