পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

voO প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ চিত্রেও সে দেশটি হঠাৎ কারো চোখে পড়ে না; অনেক খাঁজেপেতে সেটিকে বার করতে হয়। সেকালের উপ-হিন্দবস্থানের দক্ষিণে ম্যাপের গায়ে যে কতকগলো কালির ছিটেফোঁটা দেখা যায়, তারই এক বিন্দ হচ্ছে এই বৰ্তমান অনা-হিন্দ স্থান। ও দেশের হিস্টরি তোমরা না জান, তার নাম তোমরা নিশ্চয়ই শনেছ। এর নাম বলিদ্বীপ এবং এটি হচ্ছে যবন্দ্বীপ থেকে ভাঙা এক টকরো খন্ডদ্বীপ। ম্যাপে দেখতে পাওয়া যায় যে, জাভা সমদ্রের মধ্যে পশ্চিমে মাথা করে পড়বে পা ছড়িয়ে অনন্তশয্যায় শয়ে রয়েছে; আর তার পায়ের গোড়ায় পাটলি পাকিয়ে জড়োসড়ো হয়ে রয়েছে- বলি। এ দটি দ্বীপকে যদি খাড়া করে তোলা যায়- অর্থাৎ তাদের মাথা যদি পশ্চিম থেকে উত্তরে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, আর পা পাব থেকে দক্ষিণে— তা হলে ভারতবষের নীচে লণ্ডকা যেমন দেখায়, জাভার নীচে বলিও তেমনি দেখাবে। এ কথাটা এখানে বলে রাখছি। এইজন্যে যে, সিংহলের পব-ইতিহাস যেমন ভারতবর্ষের পািব-ইতিহাসের একটা ছোড়াপাতা মাত্র, বলির ইতিহাসও তেমনি জাভার ইতিহাসের একটি ছিন্নপত্রে। জাভা ও বলির মধ্যে যে সমদ্রের ব্যবধান আছে, সে অতি সামান্য। সে শাখাসমদ্রটিকু মাইল দেড়েকের বেশি চওড়া নয়, অর্থাৎ চাঁদপরের নীচে মেঘনার তুল্য। বলিদ্বীপ কতটা লম্বা। আর কতটা চওড়া তা শনলে তোমরা হাসবে। বলি দৈঘ্যে ৯৩ মাইল ও প্রস্থে মোটে ৫০ মাইল; তাও আবার সমস্তটা সমতলভূমি নয়। এই ছোট দেশের মধ্যে বহসংখ্যক হ্রদ আছে, আর সে-সব হ্রদ। এত গভীর যে, তাদের অতলপশী বললেও অত্যুক্তি হয় না। তার উপর একটি একটানা পর্বতশ্রেণীর হুবারা দেশটি দ্য ভাগে বিভক্ত। দেশ ছোটাে, কিন্তু তার পর্বত। যেমন লম্বা তেমনি উচু; অর্থাৎ ও হচ্ছে একরকম বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বিচি। সে পবতের উচ্চতা কোথায়ও সাড়ে তিন হাজার ফটের কম নয়, কোথাও-বা তা দশ হাজার ফন্ট পর্যন্ত মাথা তুলেছে। এ পর্বত বলিদেশকে উত্তরাপথ ও দক্ষিণাপথে ভাগ করেছেভারতবর্ষের নিকলে । তোমরা হয়তো মনে ভাববে যে এই দেশেরই ইংরেজি নাম হচ্ছে লিলিপট, কিন্তু তা নয়। গালিভার লিলিপট-দেশের লোকের যে বৰ্ণনা করেছেন, তার সঙ্গে বলির অধিবাসীর চেহারার কোনো মিল নেই। এরা আকারে জাভার লোকের চেয়ে ঢের বেশি দীঘাকৃতি ও বলিষ্ঠ। দেশ ছোটো হলে সেখানকার মানষে যে বড়ো হয়, তা অন্যত্রও দেখা যায়। ইউরোপের ভিতর ইংল্যান্ড সবচেয়ে ছোটাে দেশ; কিন্তু এ দেশের মতো বড়োলোক ও-ভূভাগে অন্য কুত্ৰাপি মেলে না। অপর পক্ষে, অতি ক্ষদ্র লোকের সাক্ষাৎ শােধ মহাদেশেই মেলে। বামনের জাত শােধ আফ্রিকাতেই আছে। গালিভার বলিদ্বীপে না গেলেও সিন্ধবাদ যে সে দেশে গিয়েছিলেন তার প্রমাণ, যে বদ্ধ ভদ্রলোক তার স্কন্ধে ভর করেছিলেন, তিনি ছিলেন। বলীয়ান। বলির লোক শােধ বলিষ্ঠ নয়, অত্যন্ত কমিঠ। এ চাষবাসে তারা অতিশয় দক্ষ। তারা হল-চালনা ছাড়া হাতের আরো অনেক কাজ করে। তারা চমৎকার কাপড় বোনে ও চমৎকার অস্ত্র বানায়। তাদের তুল্য তাঁতি ও কামার জাভায় পাওয়া যায় না। আল্লা বস্ত্র ও অস্ত্রের সংস্থান যে দেশে আছে, সে দেশে একালের আদশ