পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

0 RV9 প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ বোধ হয় তোমরা সবাই জান, কারণ ছেলেরা চিরকালই মেয়েদের কাছে শানে আসছে যে, পিপড়ে খেলে সাঁতার শেখা যায়। কিন্তু সেখানকার মহাদেব হচ্ছেন কাল, আর মহাদেবী দগা। বলিদ্বীপের দগাপজা নৈমিত্তিক নয়, নিত্য। বলিদ্বীপের অধিবাসীরা বৌদ্ধও নয়, বৈষ্ণবও নয়। ও-সব ধম গ্রহণ করলে তাদের প্রধান ব্যাবসা-অস্ত্রের ব্যাবসা-যে মারা যায়। আর বাকি থাকে শােধ বস্ত্রের ব্যাবসা। একমাত্র বস্ত্রের সাহায্যে স্বরাজ হয়তো লাভ করা যেতে পারে, কিন্তু রক্ষা করা যায় না। বলিদ্বীপের অধিবাসীদের আচার-ব্যবহার, দেবদেবতার সংক্ষেপে যে পরিচয় দিলাম, তার থেকেই বঝতে পারছি তারা যে হিন্দ, সে বিষয়ে আর সন্দেহ নেই। এমন-কি, যে-সব ইউরোপীয়ের সে দেশের সঙ্গে পরিচয় আছে, তাঁরা বলেন যে তাদের যদি কেউ অহিন্দ বলে, তা হলে তারা অগ্নিশমা হয়ে ওঠে। বলিদ্বীপে যখন ব্রাহ্মণ আছে, তখন সে দেশে নিশ্চয় পন্ডিতও আছে। এই পন্ডিতদের নাম পেন্দন্ড। বলির পন্ডিতরা সংস্কৃত পন্ডিতের অপভ্রংশ না হয়ে কি করে যে ইংরেজি pedant এর অপভ্রংশ হল, সে রহস্য আমি উদঘাটিত করতে পারি নে। তবে নামে বড়ো কিছ আসে যায় না। আমাদের দেশের পান্ডা, বিলেতেব পেডাস্ট ও বলির পেন্দন্ড, সবাই একজাত; তিনজনই সমান মাখ। কৃত্তিবাসের রামায়ণে হনমানকে বলা হয়েছে যে সব শাস্ত্র পড়ে বেটা হলি হতমােখ। ইউরোপের পন্ডিতেরা সব শাস্ত্র পড়ে পেডাস্ট হয়, বলিদাবীপের পন্ডিতরা কোনো শাস্ত্র না পড়েই পেন্দন্ড হয়; পাব পশ্চিমের ভিতর এই যা প্রভেদ। আমরা পােব, সতরাং "অন্ত’ হবার চাইতে ‘অ’ড’ হবার দিকেই আমাদের ঝোঁক বেশি। এই কারণে আমার বলিদ্বীপে যাবার ভয়ংকর লোভ হয়, উক্ত দাবীপে পেন্দন্ডদের সঙ্গে শাস্ত্রালোচনা করবার জন্য। এ দেশের পেন্দন্ডদের কাছে শাস্ত্রালোচনা ঢ়োর শানেছি, কিন্তু বলিদ্বীপের পেন্দন্ডদের কাছে অনেক নাতন কথা শািনতে পাব বলে আশা আছে। সম্পভবত সে সবই পরোনো কথা, কিন্তু এত পরোনো যে, আমার কাছে তা সম্পণে নািতন বলে মনে হবে। দঃখের বিষয়, বলিদ্বীপে যাবার বল এ বয়েসে আমার আর নেই। কারণ সে দেশে যেতে হয়। পলবেন পািলবনেন চ্য। আশা করি, তোমরা যখন মানষ হবে, তখন তোমরা কেউ কেউ ও-দেশে একবার হাওয়া বদলাতে যাবে, বিদেশে হিন্দ-সভ্যতার নয়, হিন্দ-অসভ্যতার নিদর্শন দেখতে। আমরা বিলেতি পলিটিকাল সভ্যতা ষেরােপ তেড়ে মখস্থ করছি, তাতে আশা করতে পারি। যে তোমরা যখন বড়ো হবে, তখন এ দেশের শিক্ষিত লোক এই স্থিরসিদ্ধান্তে উপনীত হবে যে, হিন্দ-সভ্যতা অতি মারাত্মক অসভ্যতা। আর পাবে যে তা সংক্ৰামক ছিল, তার পরিচয় ঐ-সব দেশেই পাবে। ভবিষ্যতে তোমাদের হিন্দধমের প্রতি যদি কিছমাত্র মায়া নাও থাকে, তব, এথনলজির উপর মায়া তো বাড়বে। আর বলিদ্বীপের পেন্দন্ডদের কাছে ও-বিজ্ঞানের সর মোটা অনেক তত্ত্ব উদ্ধার করতে পারবে। পথিবীতে অসভ্য লোক না থাকলে এখােনলজি অ্যানথ্রাপলজি প্রভাতি বিজ্ঞানের জন্ম হত না; যেমন পথিবীতে রোগ না।