পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তেল নন লকড়ি O86 পৌরষের একান্ত অভাব্যবশত পরিষ সাজাবার ইচ্ছাটা অত্যন্ত বলবতী। কাজেই আমরা ইংরেজের অন্যাকরণে অন্য-সব রঙ ত্যাগ করে কাপড়ে ছাইপাশি মাটির রঙ চাপিয়েছি। আমাদের ধারণা, সবচেয়ে সভ্য এবং সবচেয়ে পরষালি রঙ হচ্ছে কালো রঙ । সতরাং আমাদের নাতন সভ্যতা শত্রবসন ত্যাগ করে কৃষ্ণচ্ছদ অবলম্বন করেছে। শেবতবণ আলোকের রঙ, সকল বর্ণের সমাবেশে তার উৎপত্তি; আর কৃষ্ণবর্ণ অন্ধকারের রঙ, সকল বর্ণের অভাবে তার উৎপত্তি। আমরা করজোড়ে ইউরোপীয় সভ্যতার কাছে প্রার্থনা করেছি যে “আমাদিগকে আলোক হইতে অন্ধকারে লইয়া যাও” এবং আমাদের সে প্রার্থনা মঞ্জর হয়েছে। আমরা ইউরোপীয় সভ্যতার খিদমতগারির পরিস্কারস্বরপ হ্যাট-নামক কিম্ভূতকিমাকার এক চিজ শিরোপা লাভ করেছি, তাই আমরা আনন্দে শিরোধাৰ্য্য করে নিয়েছি। কিন্তু ইংরেজি পোশাক আমাদের পক্ষে শােধ যে অসংখ্যকর এবং দটিকট তা নয়। বেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ লোকের মনের পরিবর্তনও অবশ্যম্ভাবী। পরোহিতের বেশ ধারণ করলে মানষেকে হয়। ভন্ড নয়। ধামিক হতে হয়। সাহেব কাপড়ের সঙ্গে মনেও সাহেবিয়ানার ছোপ ধরে। হ্যাট-কোট ধারণ করলেই বিভাগসন্তান ইংরেজি এবং হিন্দি এই দাই ভাষার উপর অধিকার লাভ করবার পাবেই অত্যাচার করতে শর করেন। গলায় ‘টাই’ বাঁধলেই যে সকলকেই ইউরোপীয় সভ্যতার নিকট গললপানীকৃতবাস হতে হবে, এ কথা আমি মানি নে। যে মনে দাস, সে উত্তরীয়কেও গলবস্ত্ৰসাবরােপ ব্যবহার করে থাকে। তবে ‘টাই’ যে মনকে সাহেবিয়ানার অনকল করে নিয়ে আসে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। ইউরোপের মোহ কাটাতে হলে ইউরোপীয় বসন বয়কট করাই শ্রেয়। ইউরোপবাসীর বেশে এবং এশিয়াবাসীর বেশে একটা মলগত প্ৰভেদ আছে। ইউরোপের বেশের উদ্দেশ্য দেহকে বাঁধা, আমাদের উদ্দেশ্য দেহকে ঢাকা। আমাদের চেন্টা দেহকে লকানো, ওদের চেটা দেহকে ফলানো। আমাদের অভিপ্ৰায় লতাজা নিবারণ করা, ওদের অভিপ্রায় শীত নিবারণ করা; তাই আমরা যেখানে ঢিলে দিই, ওরা সেখানে কষে। ইংরেজরা মধ্যে মধ্যে রমণীর বেশকে কবিতার সঙ্গে তুলনা করেন। ইংরেজরমণীর বেশের ভিতর একটা ছন্দ আছে, তার গতি বিলাসিনীদের দেহভঙ্গি অনসরণ করে; সে ছন্দের ঝোঁক উন্নত-অবনত অংশের উপরই পড়ে। লতাজা আমাদের দেশে নারীর হদয় অবলম্পবন করে থাকে, ওদের দেশে চরণে শরণা গ্ৰহণ করে। আমাদের মহাসৌভাগ্য এই যে, ভারতরমণী সত্বদেশী লতাজা পরিহার করে বিদেশী সজা গ্রহণ করেন নি। সত্ৰীজাতি সবত্রই স্থিতিশীল, আমরা পরীষরা গতিশীল বলেই দৰগতি বিশেষরাপে আমাদেরই হয়েছে। যদি ইংরেজি বেশ উপযোগিতা সৌন্দয ইত্যাদি সকল বিষয়েই সর্বদেশী বেশের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হত, তা হলেও বিদেশী বেশ অবলম্পবন অনমোদন করা যেত না। ইংরেজি বেশের আর-একটি বিশেষ দোষ এই যে, ও পদার্থে দেহ মন্ডিত করবামাত্রেই অধি ংশ লোকের মস্তিকের গোলযোগ উপস্থিত হয়। অতিশয় বন্ধিমান লোকেও বেশের পক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে আতিশয় নিবোধের মতো তাক করেন। এ বিষয়ে যে-সকল ব্যক্তি সচরাচর শোনা যায়, সে-সকল এতই অকিঞ্চিৎকর যে বিচারযোগ্য নয়! যাঁরা বেশ পরিবর্তন করেন। তাঁরা তকের দ্বারা যক্তির দ্বারা নিজেরাই সাফাই হতে