পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8S8O W প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ স্বদেশ। আর জমানির এই সবদেশী ইম্পিরিয়ালিজম জমান জাতির নৈতিক আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক অধঃপাতের যে একমাত্র কারণ, তার খোলা-দলিল তো আজকের দিনে সকলের চোখের সমখেই পড়ে রয়েছে। বহকে এক করবার চেন্টা ভালো, কিন্তু একাকার করবার চেন্টা মারাত্মক, কেননা তার উপায় হচ্ছে জবরদস্তি। যদি বল যে ভারতবর্ষের সম্পবন্ধে এ কথা খাটে না, তার উত্তর আমাদের সম্পবন্ধে সেলফ-ডিটারমিনেশন যদি না খাটে তো ইউরোপে মোটেই খাটে না। ইউরোপে কোনো জাতির সঙ্গে অপর কোনো জাতির সে প্রভেদ নেই, আমাদের এক জাতির সঙ্গে অপর জাতির যে প্রভেদ আছে। বাংলার সঙ্গে মাদ্রাজের যে প্রভেদ। ইংলন্ডের সঙ্গে হল্যান্ডের সে প্রভেদ নেই, এমন-কি, ফ্রান্সের সঙ্গে জমানিরও সে প্রভেদ নেই। তবে যে প্রাদেশিক পেট্রিয়টিজমের নাম শনলে এক দলের পলিটিশিয়ানরা অতিকে ওঠেন, তার কারণ তাঁদের বিশ্ববাস ও-মনোভাব জাতীয় সংকীর্ণ সবার্থপরতার পরিচয় দেয়। নিজের সন্তানকে সন্তন দিলে কোনো মায়ের উপর যদি এই অভিযোগ আনা হয় যে, সে মাতা অতি সাবাথািপর, যেহেতু তিনি পাড়াপড়শির ছেলেদের নিজের স্তন্যক্ষীরে বঞিত করছেন, তা হলে সে অভিযোগের কি কোনো প্ৰতিবাদ করা আবশ্যক? মানষের পক্ষে যা অস্বাভাবিক তাই করার ভিতর যে আসল মনষ্যেত্ব নিহিত, এ কথা বলে অতিমানষে আর শোনে অমানষে। ধরো, যদি কোনো জননী নিজেকে জগতজননী-জ্ঞানে পাড়াসদ্ধ ছেলেমেয়েদের নিজের সস্তনের দািধ জোগাতে ব্ৰতী হন, তা হলে কাউকে বঞ্চিত না করে সবাইকে কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ দিতে হলেও সে দধে এত জল মেশাতে হবে যে তা পান ক'রে কারো পেট ভরবে না, সকলের পেট ভরবে শািন্ধ, যকৃতে । আমার বিশ্ববাস, আমাদের পলিটিশিয়ানরা অদ্যাবধি পেট্রিয়টিজমের উত্তরােপ জলো-দাধের কারবার করছেন, এবং আর সকলকেও তাই করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। 8 যদি জিজ্ঞাসা করা যে, এই সহজ সত্যটা লোকের চোখে পড়ে না কেন - তার উত্তর, আমাদের অবস্থার গণে। সমগ্ৰ ভারতবর্ষ আজ বিদেশী রাজার অধীনে, সতরাং ভারতবর্ষের কোনো প্রদেশেরই আজ রাজনৈতিক সর্বাতন্ত্র্য নেই। আমাদের পরস্পরের মধ্যে আজ প্রধান বন্ধন হচ্ছে পরাধীনতার বন্ধন, এবং এ অধীনতার পাশ হতে কোনো প্রদেশবিশেষ নিজ চেন্টায় নিজ কম্যাগণে মন্ত হতে পারবে না। এ অবস্থায় আমাদের সবারই পলিটিকাল-সমস্যা একই সমস্যা। সে সমস্যা হচ্ছে এই যে, অধীনতা কি করে স্বাধীনতায় পরিণত করা যায়। সতরাং আজকের দিনে ত্রিশ কোটি ভারতবাসীকে ‘সংগচ্ছন্দধং সংবাদদধং” এই উপদেশ কিংবা আদেশ দিতে আমরা বাধ্য। আমাদের সকলেরই তাই একই বাদ, সে হচ্ছে অধীনতার বিরদ্ধে প্রতিবাদ, আর আমাদের সকলেরই গম্যস্থান একই- সাবরাজ্যে। প্রাদেশিক পেট্রিয়টিজমের মাল্য যে কি, তা দেশের লোক সাবরাজ্যে পৌছবামাত্র টের পাবে। অধীনতার যোগসত্ৰ স্বাধীনতার পর্শে ছিড়ে যাবে। প্রভুত্বের চাপে