পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ হচ্ছে ইউরোপীয় সভ্যতাকে সমলে বিনাশ করা। এ হচ্ছে ভূতপবে জমান কাইজারের প্রসিদ্ধ আবিস্কার। কারণ, এশিয়াবাসীরা যে ইউরোপের মারাত্মক শত্ৰ, তার কোনো বাহ্যপ্রমাণ নেই। ইউরোপীয় সভ্যতাকে যে-এশিয়া মারবে সে-এশিয়া বোধ হয় এখন গোকুলে বাড়ছে; কারণ, তার সন্ধান সকলে জানে না। এ-সব কথা শানে মনে হয়, এশিয়ার উপর ইউরোপের যে বতমান আধিপত্য আছে, ভবিষ্যতে তা নন্ট হতে পারে। এই ভয়েই ইউরোপের বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক সম্প্রদায় আকুল হয়েছেন। এশিয়ার অভু্যুদয় হলেই যে ইউরোপ অধঃপাতে যাবে, এই বোধ হয় জমােন দশনের স্থিরসিদ্ধান্ত। আমার ছেলে বাড়লেই যে তোমার ছেলে বামন হবে, এ সত্য কোন লজিকের হাতে ধরা পড়ে তা আমার অবিদিত। সম্পভবত বৈজ্ঞানিকরা যাকে কনজাভেশন অব এনাজি বলেন, তারই যোগবিয়োগের নিয়মানসারে। কিন্তু সে যাই হোক, পন্ডিতমহাশয়ের বক্তব্য বোঝা যাচ্ছে। পথিবীর অপর ভূভাগের উপর যদি মালিকীস্বত্ব বজায় রাখতে হয় তো ইউরোপীয়দের দলবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন, এবং এই কারণেই তাঁর মতে লীগ অব নেশনস, ডিসআমামেন্ট, ইকনমিক কনফারেন্সেস, ইনটেলেকচুয়াল কো-অপারেশন প্রভাতির সন্টি হয়েছে। কিন্তু ইউরোপীয়েরা যে মনে এক, তা প্রমাণ না করতে পারলে তাদের জীবনে এক করা যাবে না। অতএব ইউরোপীয় মনের মাল ঐক্যের সন্ধান নিতে হবে। 8 ইউরোপীয়দের বিশেষত্ব কোথায় তার সন্ধান নিতে হলে প্রথমেই জানা দরকার, ইউরোপ বলতে কি বোঝায়। তাই অধ্যাপক হাস প্রথমেই প্রশন করেছেন, What is Europe তাঁর মতে ইউরোপের অর্থ একটি বিশেষ ভূভাগ নয়; কেননা পরাকালে ভৌগোলিক হিসেবে ইউরোপের যে সবাতন্ত্র্যই থাকুক-না কেন, বতমানে সে সর্বাতন্ত্রা নেই, অন্তত থাকবে না। কারণ Every hing connected with space, position and distance is steadily dwindling in importance. এ সত্যটি ইউরোপীয়দের স্মরণ করিয়ে দেবার আবশ্যক ছিল। কারণ, গত শতাব্দীর বৈজ্ঞানিক দার্শনিকরা প্রমাণ করেছিলেন যে, ইউরোপীয়দের মাহত্যের মলে আছে ইউরোপের মাটি। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বলেছেন যে, ‘বিলেত-দেশটা মাটির’। ও-কথা শানে আমরা হেসে কুটি-কুটি হয়েছিলাম, কিন্তু ইউরোপীয় বৈজ্ঞানিক দার্শনিকরা আমাদের বঝিয়েছিলেন যে, বিলেত-দেশটা মাটির হলেও যে-সে মাটির নয়, একেবারে বিলেতি মাটির। অতএব তা নিগণ নয়, সগণ। আমরাও দেখতে পাই যে, ন্যাংড়া-আমের অঠি বাংলায় পািতলে সে অাঁঠর গাছে আমি ফলে না, ফলে আমড়া। মাটির গণের ভক্ত হবার জন্য বৈজ্ঞানিক হবার প্রয়োজন নেই, কবি হলেই আমরা ভান্তি-গদগদকণ্ঠে “আমার দেশ’ বলতে বলতে