পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গ সাহিত্যের নবযাগ 06: সমাজকে ভ্ৰাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ করা; কাউকেও ছাড়া নয়, কাউকেও ছাড়তে দেওয়া নয়। এ পথিবীতে বহৎ না হলে যে কোনো জিনিস মহৎ হয় না, এরপ ধারণা আমাদের নেই ; সতরাং প্রাচীন সাহিত্যের কীতির তুলনায় নবীন সাহিত্যের কীতি গলি আকারে ছোটাে হয়ে আসবে কিন্তু প্রকারে বেড়ে যাবে, আকাশ আক্রমণ না করে মাটির উপর অধিকার বিস্তার করবে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে কাব্যদর্শনাদি আর গাছের মতো উচুর দিকে ঠেলে উঠবে না, ঘাসের মতো চারি দিকে চারিয়ে যাবে। এক কথায়, বহশক্তিশালী সাবলপসংখ্যক লেখকের দিন চলে গিয়ে সবলপশক্তিশালী বহীসংখ্যক লেখকের দিন আসছে। আমাদের মনোজগতে যে নবসািয উদয়োন্মােখ, তার সহস্র রাশিম অবলম্বন করে অন্তত ষষ্টিসহস্র বালখিল্য লেখক এই ভূভারতে অবতীর্ণ হবেন। এরপ হবার কারণও সসপ্যােট। আজকাল আমাদের ভাববার সময় নেই, ভাববার অবসর থাকলেও লেখবার যথেস্ট সময় নেই, লেখবার অবসর থাকলেও লিখতে শেখবার অবসর নেই ; অথচ আমাদের লিখতেই হবে, নচেৎ মাসিক পত্র চলে না। এ যাগের লেখকেরা যেহেতু গ্রন্থকার নন শােধ মাসিক পত্রের পািঠপোষক, তখন তাঁদের ঘোড়ায় চড়ে লিখতে না হলেও ঘড়ির উপর লিখতে হয়; কেননা মাসিক পত্রের প্রধান কতব্য হচ্ছে, পয়লা বেরনো। কি যে বেরল তাতে বেশি কিছ আসে-যায় না। তা ছাড়া, আমাদের সকলকেই সকল বিষয়ে লিখতে হয়। নীতির জাতোসেলাই থেকে ধমের চন্ডীপাঠ পর্যন্ত সকল ব্যাপারই আমাদের সমান অধিকারভক্ত। আমাদের নবসাহিত্যে কোনোরােপ 'শ্রমবিভাগ’ নেই- তার কারণ, যে ক্ষেত্রে ‘শ্ৰম” নামক মািল পদার্থেরই অভাব, সে স্থলে তার বিভাগ আর কি করে হতে পারে ? তাই আমাদের হাতে জন্মলাভ করে শােধ ছোটোগলপ, খন্ডকাব্য, সরল বিজ্ঞান ও তরল দশন । দেশকালপাত্রের সমবায়ে সাহিত্য যে ক্ষদ্রধমাবলম্বী হয়ে উঠেছে, তার জন্য আমার কোনো খেদ নেই। একালের রচনা ক্ষদ্র বলে আমি দঃখ করি নে, আমার দঃখ যে তা যথেষ্ট ক্ষদ্র নয়। একে স্বল্পায়তন, তার উপর লেখাটি যদি ফাঁপা হয় তা হলে সে জিনিসের আদর করা শক্ত। বালা গালভরা হলেও চলে, কিন্তু আংটি নিরেট হওয়া চাই। লেখকরা এই সত্যটি মনে রাখলে গল্প স্বল্প হয়ে আসবে, শোক শোলাকরূপ ধারণ করবে, বিজ্ঞান বামনরপে ধারণ করেও ত্ৰিলোক অধিকার করে থাকবে, এবং দশন নখদপণে পরিণত হবে। যাঁরা মানসিক আরামের চর্চা না করে ব্যায়ামের চর্চা করেছেন, তাঁরা সকলেই জানেন যে, যে সাহিত্যে দম নেই তাতে অন্তত কস (grip) থাকা আবশ্যক। R বৰ্তমান ইউরোপের সম্যক পরিচয়ে এই জ্ঞান লাভ করা যায় যে, গণধমের প্রধান ঝোঁক হচ্ছে বৈশাধমের দিকে ; এবং সেই ঝোঁকটি না সামলাতে পারলে সাহিত্যের পরিণাম অতি ভযাবহ হয়ে ওঠে। আমাদের এই আত্মাসব্যস্ব দেশে লেখকেরা যে