পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ 866 পায়ের নীচে হচ্ছে জড়জগৎ আর তার মাথার উপরে মনোজগৎ। প্রাণের ধর্ম যে জীবনপ্রবাহ রক্ষা করা, নবনব সন্টির দ্বারা সন্টি রক্ষা করা-এটি সব লোকবিদিত। কিন্তু প্ৰাণের আর-একটি বিশেষ ধম আছে, যা সকলের কাছে সমান প্রত্যক্ষ নয়। সেটি হচ্ছে এই যে, প্রাণ প্রতিম হতে রূপান্তরিত হয়। হিন্দদর্শনের মতে জীবের প্রাণময় কোষ, অন্নময় কোষ ও মনোময় কোষের মধ্যে অবস্থিত। প্রাণের গতি উভয়মখী। প্রাণের পক্ষে মনোময় কোষে ওঠা এবং অন্নময় কোষে নামা দই সম্ভব। প্রাণ অধোগতি প্রাপ্ত হয়ে জড়জগতের অন্তভূত হয়ে যায়; আর উন্নত হয়ে মনোজগতের অন্তভূত হয়। মনকে প্রাণের পরিণতি এবং জড়কে প্রাণের বিকৃতি বললেও অত্যুক্তি হয় না। প্রাণের স্বাভাবিক গতি হচ্ছে মনোজগতের দিকে; প্রাণের স্বাধীন সফীতিতে বাধা দিলেই তা জড়তাপ্ৰাপত হয়। প্রাণ নিজের অভিব্যক্তির নিয়ম নিজে গড়ে নেয়, বাইরের নিয়মে তাকে বন্ধ করাতেই সে জড়োজগতের অধীন হয়ে পড়ে। যেমন প্ৰাণীজগতের রক্ষার জন্য নিত্যনতেন প্রাণের সম্মিট আবশ্যক, এবং সে সন্টির জন্য দেহের যৌবন চাই, তেমনি মনোজগতের এবং তদধীন কমা জগতের রক্ষার জন্য সেখানেও নিত্য নব সন্টির আবশ্যক, এবং সে সন্টির জন্য মনের যৌবন চাই। পরাতনকে অাঁকড়ে থাকাই বাধক্য অর্থাৎ জড়তা। মানসিক যৌবন লাভের জন্য প্রথম আবশ্যক- প্রাণশক্তি যে দৈবী শক্তি- এই বিশবাস। এই মানসিক যৌবনই সমাজে প্রতিস্ঠা করা হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য। এবং কি উপায়ে তা সাধিত হতে পারে, তাই হচ্ছে আলোচ্য। আমরা সমগ্র সমাজকে একটি ব্যান্তিহিসেবে দেখলেও আসলে মানবসমাজ হচ্ছে বহ,ব্যক্তির সমন্টি। যে সমাজে বহন ব্যক্তির মানসিক যৌবন আছে, সেই সমাজেরই যৌবন আছে। দেহের যৌবনের সঙ্গে সঙ্গেই মনের যৌবনের আবিভােব হয়। সেই মানসিক যৌবনকে সন্থায়ী করতে হলে শৈশব নয়, বাধক্যের দেশ আক্রমণ এবং অধিকার করতে হয়। দেহের যৌবনের অন্তে বাধক্যের রাজ্যে যৌবনের অধিকার বিস্তার করবার শক্তি আমরা সমাজ হতেই সংগ্রহ করতে পারি। ব্যক্তিগত জীবনে ফালগন একবার চলে গেলে আবার ফিরে আসে না; কিন্তু সমগ্র সমাজে ফালগন চিরদিন বিরাজ করছে। সমাজে নািতন প্ৰাণ, নাতন মন, নিত্য জন্মলাভ করছে। অর্থাৎ নতন সখদঃখ, নািতন আশা, নািতন ভালোবাসা, নাতন কতব্য ও নািতন চিন্তা নিত্য উদয় হচ্ছে। সমগ্র সমাজের এই জীবনপ্রবাহ যিনি নিজের অন্তরে টেনে নিতে পারবেন, তাঁর মনের যৌবনের আর ক্ষয়ের আশঙ্কা নেই। এবং তিনিই আবার কথায় ও কাজে সেই যৌবন সমাজকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন। এ যৌবনের কপালে রাজটিকা দিতে আপত্তি করবেন, এক জড়বাদী আর-এক মায়াবাদী; কারণ এরা উভয়েই একমন। এরা উভয়েই বিশব হতে অস্থির প্রাণটকু বার করে দিয়ে যে এক স্থিরতত্ত্ব লাভ করেন, তাকে জড়ই বল আর চৈতন্যই বল, সে বস্তু হচ্ছে এক, প্ৰভেদ যা তা নামে। জ্যৈষ্ঠ ১৩২১