পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাপের কথা 8 চোখে পরোপরি সয় না, তখন রাপের আলোক যে মোটেই সইবে না। তাতে আর বিচিত্র কি। জ্ঞানের আলো বস্তুজগৎকে প্রকাশ করে, সতরাং এমন অনেক বস্তু প্ৰকাশ করে যা আমাদের পেটের ও প্রাণের খোরাক জোগাতে পারে; কিন্তু রাপের আলো শােধ নিজেকেই প্রকাশ করে, সতরাং তা হচ্ছে শািন্ধ আমাদের চোখের ও মনের খোরাক। বলা বাহাল্য, উদর ও প্রাণ প্রোটোেপাল্যাজমেরও আছে, কিন্তু চোখ ও মন শােধ মানষেরই আছে। সতরাং যাঁরা জীবনের অর্থ বোঝেন একমাত্র বেচে থাকা এবং তত্তজন্য উদরপতি করা তাঁদের কাছে জ্ঞানের আলো গ্রাহ্য হলেও রাপের আলো অবজ্ঞাত। এ দায়ের ভিতর প্রভেদও বিস্তর। জ্ঞানের আলো সাদা ও একঘেয়ে, অর্থাৎ ও হচেছ আলোর মাল; অপর পক্ষে, রাপের আলো রঙিন ও বিচিত্র, অর্থাৎ আলোর ফল। আদিম মানবের কাছে ফলের কোনো আব্দর নেই, কেননা ও-বস্তু আমাদের কোনো আদিম ক্ষধার নিবত্তি করে না; ফল আর-যাই হোক, চব্য-চোষ্য কিংবা লোহা-পেয় নয়। bታ এ-সব কথা শনে আমার বৈজ্ঞানিক বন্ধরা নিশ্চয়ই বলবেন যে, আমি যা বলছি সে-সব জ্ঞানবিজ্ঞানের কথা নয়, সেরেফ কবিত্ব। বিজ্ঞানের কথা এই যে, যে আলোকে আমি সাদা বলছি, সেই হচেছ এ বিশোবর একমাত্র অখন্ড আলো; সেই-সমস্ত আলো রিফ্ল্যাকটেড অর্থাৎ ব্যস্ত হয়েই আমাদের চোখে বহরপী হয়ে দাঁড়ায়। তথাস্তু। এই রিফ্ল্যাকশনের একাধারে নিমিত্ত এবং উপাদান -কারণ হচ্ছে পঞ্চভূতের বাঁহভূত ইথার-নামক রপ-রস-গন্ধ-সপশ-শব্দের অতিরিক্ত একটি পদার্থ। এবং এই হিল্লোলত পদার্থের ধর্ম হচ্ছে এই জড়াজগৎটাকে উৎফল্ল করা, রপান্বিত করা। রােপ যে আমাদের সস্থলশরীরের কাজে লাগে না তার কারণ বিশেবর সন্থলশারীর থেকে তার উৎপত্তি হয় নি। আমাদের ভিতর যে সক্ষমশরীর অর্থাৎ ইথার আছে, বাইরে রাপের সপশোঁ সেই সক্ষমশরীর সপন্দিত হয়, আনন্দিত হয়, পলকিত হয়, প্রস্ফটিত হয়। রপজ্ঞানেই মানষের জীবন্মত্তি, অর্থাৎ সস্থলশরীরের বন্ধন হতে মন্তি। রােপজজ্ঞান হারালে মানষে আজীবন পশ্চভূতেরই দাসত্ব করবে। রূপবিদ্বেষটা হচেছ আত্মার প্রতি দেহের বিদ্বেষ, আলোর বিরুদ্ধে অন্ধকারের বিদ্রোহ। রাপের গণে অবিশ্ববাস করাটা নাস্তিকতার প্রথম সত্ৰ। ܬ ইন্দ্ৰিয়জ বলে বাইরের রাপের দিকে পিঠা ফেরালে ভিতরের রাপের সাক্ষাৎ পাওয়া ‘কঠিন; কেননা, ইন্দ্ৰিয়ই হচ্ছে জড় ও চৈতন্যের একমাত্র বন্ধনসত্র। এবং ঐ সত্রেই রাপের জন্ম। অন্তরের রােপও যে আমাদের সকলের মনশচক্ষে ধরা পড়ে না, তার প্রমাণস্বরপ একটা চলতি উদাহরণ নেওয়া যাক। রবীন্দ্রনাথের লেখার প্রতি অনেকের বিরক্তির কারণ এই যে, সে লেখার রােপ