পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফালগন আমাদের দেশে কিছরই হঠাৎ বদল হয় না, ঋতুরও নয়। বর্ষা কেবল কখনোকখনো বিনা-নোটিসে একেবারে হাড়দ্দাম করে এসে গ্ৰীক্ষেমর রাজ্য জবরদখল করে। নেয়। ও-ঋতুর চরিত্র কিন্তু আমাদের দেশের ধাতের সঙ্গে মেলে না। প্রাচীন কবিরা বলে গেছেন, বর্ষা আসে। দিগ বিজয়ী যোদ্ধার মতো- আকাশে জয়ঢাক বাজিয়ে, বিদ্যতের নিশান উড়িয়ে, অজস্র বরণাস্ত্র বর্ষণ করে, এবং দেখতে-না- দেখতে আসমদ্রািহমালয় সমগ্ৰ দেশটার উপর একছত্ৰ আধিপত্য বিস্তার করে। এক বর্ষাকে বাদ দিলে বাকি পাঁচটা ঋতু যে ঠিক কবে আসে। আর কবে যায়, তা এক জ্যোতিষী ছাড়া আর-কেউ বলতে পারেন না। আমাদের ছয় রাগের মধ্যে এক মেঘ ছাড়া আর-পাঁচটি যেমন এক সরে থেকে আর-একটিতে বেমালম ভাবে গড়িয়ে যায় আমাদের স্বদেশী পণ্যঋতুও তেমনি ভূমিষ্ঠ হয় গোপনে, ক্ৰমবিকশিত হয় অলক্ষিতে, ক্রমবিলীন হয়। পরঋতুতে। ইউরোপ কিন্তু ক্ৰমবিকাশের জগৎ নয়। সে দেশের প্রকৃতি লাফিয়ে চলে, এক ঋতু থেকে আর-এক ঋতুতে ঝাঁপিয়ে পড়ে; বছরে চার বার নবকলেবর ধারণ করে, নবমতিতে দেখা দেয়। তাদের প্রতিটির রােপ যেমন সর্বতন্ত্র তেমনি সপাল্ট। যাঁর চোেখ আছে তিনিই দেখতে পান যে, বিলেতের চারটি ঋতু চতুবৰ্ণ । মতুর পর্শে বহ, যে এক হয়, আর প্রাণের পশে এক যে বহ হয়, এ সত্য সে দেশে প্রত্যক্ষ করা যায়। সেখানে শীতের রঙ তুষার-গৌরী, সকল বর্ণের সমন্টি; আর বসন্তের রঙ ইন্দুধনার, সকল বর্ণের ব্যষ্টি। তার পর নিদাঘের রঙ ঘন-সবজি, আর শরতেব গাঢ়-বেগনি। বিলেতি ঋতুর চেহারা শােধ আলাদা নয়, তাদের আসা-যাওয়ার ভাণ্ডগও বিভিন্ন। সে দেশে বসন্ত শীতের শব্বশীতল কোল থেকে রাতারাতি গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠে- মহাদেবের যোগভঙ্গ করবার জন্য মদন সখা বসন্ত যেভাবে একদিন অকস্মাৎ হিমাচলে আবির্ভূত হয়েছিলেন। কোনো-এক সপ্রভাতে ঘাম ভেঙে চোখ মেলে হঠাৎ দেখা যায় যে, রাজিার গাছ মাথায় একরাশ ফল পারে দাঁড়িয়ে হাসছে; অথচ তাদের পরনে একটিও পাতা নেই। সে রাজ্যে বসন্তরাজ তাঁর আগমনবাতা আকাশের নীল পত্রে সাতরঙা ফলের হরফে এমন সম্পন্ট এমন উপেজবল করে ছাপিয়ে দেন যে, সে বিজ্ঞাপন-মানষের কথা ছেড়ে দিন-পশপক্ষীরও চোখ এড়িয়ে (VO5 9Q6 rNT ) ইউরোপের প্রকৃতির। যেমন ক্রমবিকাশ নেই, তেমনি ক্রমবিলয়ও নেই; শরৎ ও সে দেশে কালক্ৰমে জরাজীণ হয়ে অলক্ষিতে শিশিমের কোলে দেহত্যাগ কমে না । সে দেশে শরং তার শেষ-উইল- পান্ডলিপিতে নয়, রান্তাক্ষরেী-লিখে রেখে যায়; কেননা, মাতৃত্যুর সােপশে তার, পিত্ত নয়, রক্ত প্ৰকুপিত হয়ে ওঠে। প্রদীপ যেমন নেড়বার আগে জৰালে ওঠে, শরতের তাম্পত্ৰও তেমনি ঝরবার আগে অগ্নিবৰ্ণ হয়ে