পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ り প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ কেন যে নিজের দেহ পিঞ্জীর হতে নিম্পকুমণ করে পরের পঞ্জরে প্রবেশলাভ করবার জন্য ছটফট করছে, তার কারণ শাস্ত্ৰীমহাশয়ই নির্দেশ করে দিয়েছেন। তিনি 3@छन् আমার বিশ্ববাস, বাঙালি একটি আত্মবিস্মত জাতি। বিষ্ণ যখন রামরপে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন তখন কোনো ঋষির শাপে তিনি আত্মবিস্মত ছিলেন। আমরাও তেমনি বাঙালি জাতির অজ্ঞান অবতার, সম্পভবত গর-পরোহিতের শাপে। মন্তির জন্য আমাদের এই শাপমন্ত হতে হবে, অর্থাৎ জাতিসমর হতে হবে। কেননা, সত্যলাভের জন্য যেমন বাহ্যজ্ঞান চাই, তেমনি আত্মজ্ঞানও চাই। এই জাতিসমরতা। লাভ করবার একমাত্র উপায় হচ্ছে ইতিহাস। একমাত্র ইতিহাসই জাতির পবিজন্মের কথা সমরণ করিয়ে দেয়। এই জাতীয় পােবজন্মের জ্ঞান হারিয়েই আমরা নিজের ভাষার মনের ও চরিত্রের জ্ঞান হারিয়েছি। শাস্ত্ৰীমহাশয়ের মোন্দা কথা হচেছ এই যে, এক ‘আয’ শব্দের উপর জীবন প্রতিষ্ঠা করতে গেলে বাঙালির ইহকাল পরকাল দইই নষ্ট হবে, কেননা আমরা মোক্ষমলারের আবিস্কৃত খাটি আৰ্য নই। আমরা একটি মিশ্রজাতি। প্রথমত দ্রবিড় ও মোন্ডগলের মিশ্রণে বাঙালি জাতি গঠিত হয়। তার পর সেই জাতির দেহে মনে ও সমাজে কতক পরিমাণ আযািত্ব আরোপিত হয়েছে। কিন্তু তাই বলে আমরা একেবারে আযীমশ্র হয়ে উঠি নি। শাস্ত্ৰীমহাশয়ের মতে আযসভ্যতা আবতে আব্বতে বাংলায় এসে পৌচেছে। তিনি বলেন এই-সকল আবত ঘরিতে ঘারিতে যখন বাংলায় আসিয়া উপনীত হয়, তখন দেখা যায় আযের মাত্রা বড়ই কম, দেশীর মাত্রা অনেক বেশি। এ সত্য আমি নিরাপত্তিতে সত্বীকার করি, যদিচ সম্পভবত আমি এই ক্ৰমাগত আৰ্যআব্বতের একটি ক্ষ-দ্র বাদবাদ, কেননা আমি ব্রাহ্মণ। বাংলা ভাষা অন্য ভাষা নয়, উন্ত ভাষার একটি স্বতন্ত্র শাখা- এক কথায় একটি নবশাখ, ভাষা। বাঙালি জাতিও আযা জাতি নয়, একটি নবশাখ জাতি । আজকাল শিক্ষিত সম্প্রদায়ের প্রধান চেন্টা হয়েছে আমাদের মন ও ভাষার মধ্যে থেকে তার দেশী খাদটকু বাদ দিয়ে তার আযা সোনাটকু বার করে নেওয়া। প্রথমত ওরােপ খাদ বাদ দেওয়া সম্পভব নয়, দ্বিতীয়ত সম্পভব হলেও বড়ো বেশি যে সোনা মিলবে তাও নয়। কিন্তু আসল প্রশন হচ্ছে, দেশী অংশটকু বাদ দেবার এত প্ৰাণপণ চোটা কেন। ও তো খাদ নয়, ঐ তো হচেছ বাঙালি জাতির মািলধাতু। এবং সে ধাতু যে অবজ্ঞা কিংবা উপেক্ষা করবার জিনিস নয়, তা যিনিই বাঙালির প্রাচীন ইতিহাসের সন্ধান রাখেন। তিনিই মানেন। কাঁঠাল আমি নয় বলে দঃখ করবারও কারণ নেই, এবং কাঁঠালের ডালে আমের কলম বসাবার চেষটা করবারও দরকার নেই। আমরা এই বাংলার গায়ে হয় ইংরেজি নয় সংস্কৃতের কলম বসিয়ে সাহিত্যে ও জীবনে শােধ কাঁঠালের আমসত্ত্ব তৈরি করবার ব্যথা চেন্টা করছি। শাস্ত্ৰীমহাশয় বলেছেন যে, বাঙালি জাতির প্রাচীন সিদ্ধাচায্যেরা সব সহজিয়া মতের প্রবতক ও প্রচারক ছিলেন। আমরা আত্মজ্ঞানশান্য বলে যা আমাদের কাছে সহজ। তাই বজন করি ; আমরা সাধভাষায় সাহিত্য লিখি, আর জীবনে হয়।