পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V8 প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ জীবন্ত গাছ হইতেছে সাহিত্যের আসল বাস্তব। সে গাছ তাহার শিকড়ের দ্বারা জাতির অন্তরতম হািদয়ের সহিত তাহার ঘনিষ্ঠ সম্পবিন্ধ আটটি রাখিয়াছে, সমস্ত জাতির হৃদয় হইতে তাহার রসসাচার হয়। এই রসসgারই সাহিত্যে বাস্তবতার লক্ষণ। একটা গোলাপগাছের যদি আশা হয়, সে স্থান কাল ও অবস্থাকে অগ্রাহ্য করিয়া নীচের মাটি হইতে রস সঞ্চয় না করিয়া, আলোক ও বাতাসের দানকে অবজ্ঞা করিয়া, এক কথায় বাস্তবকে না মানিয়া, সে লিলি ফল ফটাইবে--- তাহা হইলে তাহার যেরপ বিড়ম্বনা হয়, কোনো দেশের সাহিত্যের পক্ষে দেশের সমাজ ও যােগধম বাস্তবকে অগ্রাহ্য করিয়া সৌন্দৰ্য সন্টির চেষ্টাও সেইরূপ ব্যর্থ হয়। এর অনেক কথাই যে সত্য, সে বিষয়ে আর দ্বিমত নেই। মণিালের অস্তিত্ব না থাকলে পদ্মের ঢলে পড়ার চাইতেও বেশি দরবস্থা ঘটবে, অর্থাৎ তার অস্তিত্বই থাকবে না। তবে মণাল যদি বাস্তব হয়, পদ্ম যে কেন তা নয়, তা বোঝা গোল না। সম্পভবত তাঁর মতে যে যার নীচে থাকে। সেই তার বাস্তব। ফলের তুলনায় তার বলত, বান্তের তুলনায় শাখা, শাখার তুলনায় কান্ড, কান্ডের তুলনায় শিকড় এবং শিকড়ের তুলনায় মাটি উত্তরোত্তর অধিক হতে অধিকতর এবং অধিকতম বাস্তব হয়ে ওঠে। পঙ্কজের অপেক্ষা পণ্ডেক যে অধিক পরিমাণে বাস্তবতা আছে, এই বিশবাসে জোলা প্রভাতি বস্তুতান্ত্রিকেরা মানবমনের এবং মানবসমাজের পঙ্কোদ্ধার করে সরস্বতীর মন্দিরে জড়ো করেছিলেন। রাধাকমলবাব কি চান যে আমরাও তাই করি ? গোলাপগাছের পক্ষে লিলি প্রসব করবার প্রয়াসটি যে একেবারেই ব্যর্থ শােধ, তাই নয়, মাটি হতে রস সঞ্চয় না করে আলোক ও বাতাসের সঙ্গে সম্পপক রহিত করে সে গোলাপও ফোটাতে পারবে না, কেননা ওরােপ ব্যবহার করলে. গোলাপগাছ দদিনেই দেহত্যাগ করতে বাধ্য হবে। গাছের ফল আকাশে ফোটে কিন্তু তার মােল যে মাটিতে আপদ্ধ, সে কথা আমরা সকলেই জানি ; সতরাং কবিতার ফল ফটলেই আমরা ধরে নিতে পারি যে মনোজগতে কোথাও-না-কোথাও তার মল আছে। কিন্তু সে মল ব্যক্তিবিশেষেবা মনে নিহিত নয়, সমাজের মনে নিহিত, এই হচেছ নািতন মত । এ মত গ্রাহ্য করবার প্রধান অন্তরায় এই যে, সামাজিক মন বলে কোনো বস্তু নেই ; ও পদার্থ হচেছ ইংরেজিতে যাকে বলে অ্যাবসট্র্যাকশন। সে যাই হোক, রাধাকমলবাব। এই সহজ সত্যটি উপেক্ষা করেছেন যে, গোলাপের গাছে অবশ্য লিলি ফোটে না কিন্তু একই ক্ষেত্রে গোলাপও জন্মে লিলিও জন্মে। সত্বদেশের ক্ষেত্রেও যে বিদেশী ফলের আবাদ করা যায়, তার প্রমাণ স্বয়ং গোলাপ । পারস্যদেশের ফল আজ ভারতবর্ষের ফলের রাজ্যে গৌরব এবং সৌরভের সহিত নবাবি করছে। বহিজগতে যদি এক ক্ষেত্রে নানা ফল ফোটে, তা হলে মনোজগতের যে-কোনো ক্ষেত্রে অসংখ্য বিভিন্নজাতীয় ফল ফোটবার কথা। কেননা, খাব সম্পভব মনোজগতের ভগোল আমাদের পরিচিত ভগোলের অন্যরাপ নয়। সে জগতে দেশভেদ থাকলেও পরস্পরের মধ্যে অন্তত অলংঘ্য পাহাড়পবতের ব্যবধান নেই, এবং মানষের-হাতে-গড়া সে রাজ্যের সীমান্ত-দাগাসকল এ যাগে নিত্য ভেঙে পড়ছে।