পাতা:প্রবাসী আশ্বিন ১৩৪৪ সংখ্যা ৬.pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অণশ্বিন ঘটনা বলিয়াই আমাদের মনে হয়। কিন্তু ঐ বিদ্রোহই ত্ৰি সাফল্যলাভের মূল, ইহা নিঃসন্দেহে বলা যাইতে পারে। শিল্পপে দিব্য বরেন্দ্রী অধিকার করিলেন ? কবি /বলিতেছেন, ‘দস্থ্য ও উপধিব্রতী দিব্য নামক ব্যক্তি কর্তৃক বরেন্দ্রী গৃহীত হইল। এখানেও এক তর্ক উঠিয়াছে উপধিব্রতী' শব্দের ব্যুৎপত্তি লইয়া। টীকাকার ইহার ব্যাখ্যা করিতেছেন—“অবশুকৰ্ত্তব্যত্যয়া আরন্ধং কৰ্ম্ম ব্ৰতং ছদ্মনি ব্রতী’। এক পক্ষ এই ব্যাখ্যা অনুসারে অর্থ করিতেছেন "ভণ্ড বিদ্রোহী’ । তাহাদের মতে দিব্যের বিদ্রোহ করিবার প্রবৃত্তি ছিল না, ঘটনাচক্রে অবখ্যকৰ্ত্তব্য বলিয়া তিনি রাজদ্রোহ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। প্রতিপক্ষের মত এই, দিব্য রামপালের প্রতি অবশ্বকৰ্ত্তব্যবোধে মহীপালের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘটাইয়াছিলেন এবং গোপনে তাহাতে যোগদান করিয়াছিলেন—অর্থাৎ রামপালের হিতসাধনের ছলে দিব্য মহীপালের মৃত্যুর পর স্বয়ং রাজ্য আধঙ্কর করিয়াছিলেন। শেষোক্ত মতই যদি রামচরিতকারের অভিপ্রেত হয়, তথাপি ইহাকে ধ্রুব সত্য বলিয়া গ্রহণ করিতে ঐতিহাসিক দ্বিধা বোধ করিবেন। কারণ পূৰ্ব্বেই বলা হইয়াছে, রামচরিত এক পক্ষের উক্তি। কিন্তু প্রতিপক্ষের ব্যাখ্যাই কি সমীচীন ? রামপাল বিনাদোষে জ্যেষ্ঠভ্রাতা কর্তৃক যেরূপ অমানুষিকভাবে নির্যাতিত ক্টালিকা তাহাতে র্তাহার প্রতি প্রজাবর্গের অনুকম্প আকৃষ্ট rেই-ভোবিক7 এমত অবস্থায় যদি দিব্য র্তাহার ভিাল ছলে নিজেই সিংহাসন অধিকার করিতেন, .Cহা হইলে বরেন্দ্রীর প্রজাবৰ্গ বিশ্বাসঘাতক অনধিকারী রাজার পক্ষভুক্ত হইয়া তাহদের স্বপ্রাচীন বংশের বৈধ রাজার বিরুদ্ধে কি দণ্ডায়মান হইত ? তবে কি “উপধিব্ৰতিন শব্দের পূৰ্ব্বব্যাখ্যাই সঙ্গত? দিব্য উপায়ান্তর না থাকাতে রাজপদ স্বীকার করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন, ইহাই কি সত্য ? আমাদের অনুমান হয় যে উহার ব্যক্তিগত বা জাতিগত স্বাৰ্থ নহে, পরস্তু বরেন্দ্রীর প্রজাবর্গের কল্যাণসাধনই কবিকর্তৃক বর্ণিত দিব্যের তথ}কথিত ব্রত। এই কল্যাণসাধনকেই উপলক্ষ করিয়া o বরেন্দ্রী গ্রহণ করিয়াছিলেন, ইহা কবির অভিযোগ। ঐক্ষণে দেখা যাউক, বরেন্দ্রীর প্রজাবর্গের হিতসাধনের কি অবকাশ بع দিব্য-প্রসঙ্গ نتی برEته দিব্যের সম্মুখে উপস্থিত হইয়াছিল। অনন্তসামস্তচক্রের সমরে মহীপাল যখন নিমজ্জিত হইলেন, তখনও সিংহাসনের উত্তরাধিকারী দুই রাজভ্রাতা সম্ভবত: শৃঙ্খলিত অবস্থায় ভূগর্ভস্থ কারাগারে নিক্ষিপ্ত। স্বতরাং দেশে রাজশাসন তখন এক প্রকার বিলুপ্ত। যেখানে যেখানে সামস্তরাজগণ স্বপ্রতিষ্ঠিত হইয়াছিলেন, সেই সেই দেশে তাহারা শক্তিশালী হইয়া উঠিলেন। বরেন্দ্রীপ্রদেশেও কি এইরূপ ঘটনা ঘটয়াছিল । অন্যান্ত প্রদেশের তুলনায় বরেন্দ্রীর ইহাই বিশেষত্ব ছিল যে ইহা পালবংশের পৈতৃক রাজ্য। স্বতরাং ইহা সম্ভবতঃ পালরাজগণ কর্তৃক প্রত্যক্ষ ভাবে শাসিত হইয়া আসিতেছিল। এই জন্যই কি পালবংশের শাসনকালে রাঢ় ও বঙ্গপ্রদেশে খড়গ, চন্দ্র, শূর, সেন প্রভৃতি বহু স্বাধীন বা অৰ্দ্ধস্বাধীন বংশের উদ্ভব হইলেও বরেন্দ্রীতে অনুরূপ বংশ সমুখিত হয় নাই ? যদি সত্য সত্যই বরেন্দ্রী শক্তিশালী সামন্তরাজবিহীন হইয়া থাকে, তাহা হইলে মহীপালের ভাগ্যবিপর্যায়ের পর তথায় অরাজকতার উৎকট আশঙ্কা আবির্ভূত হওয়া কি অস্বাভাবিক ? এই সঙ্কটে বিপন্ন প্রজাবৰ্গ দিব্যের মত লক্ষ্মীর অংশভাগী অত্যুছিত কৰ্ম্মচারীর শরণাপন্ন হইবে, এবং দিব্য তাহাদের রক্ষণকল্পে শাসনদণ্ড ধারণ করিবেন, ইহা কি এক কষ্টকল্পনা ? ইহাই যদি দিব্যকৃত বরেন্দ্রী অধিকারের সত্য ইতিহাস হয়, তাহা হইলে শত্রুপক্ষীয় কবি উহাকে বিকৃত করিয়া বলিবেন, বরেন্দ্রীর নিরাশ্রয় প্রজাবর্গের রক্ষা দিব্যের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল না, তাহার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল রাজ্য অধিকার, তাহাতে বিশ্বয়ের কোনও কারণ নাই। এখানে প্রশ্ন উঠিতে পারে, দিব্য কি প্রজাদিগের নিৰ্ব্বাচনে বরেন্দ্রীর শাসনভার লাভ করিয়াছিলেন ? এই প্রশ্নের প্রত্যক্ষ উত্তর দিবার প্রমাণ আমাদের নাই। কারণ এখানে একদেশদর্শী কবির এক প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতই আমাদের একমাত্র সম্বল। তবে দিব্য ও তদীয় উত্তরাধিকারিগণ কর্তৃক ভুক্তরাজ্য বরেন্দ্রীর প্রজাবর্গের শ্রদ্ধা ও ভক্তির স্থদুঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল, ইহা অনুমান করিবার যথেষ্ট কারণ আছে। মদনপালের মনহলি লিপিতে রামপাল সম্বন্ধে উক্ত হইয়াছে— "এতস্যাপি সহোদরে নরপতিদিব্যপ্রজ-নির্ভর ক্ষোভহত-বিধুত-বাসববৃতি শ্রীরামপালোহভবৎ"