পাতা:প্রবাসী আশ্বিন ১৩৪৪ সংখ্যা ৬.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐবিভূতিভূষণ গুপ্ত পথ চলিতে কত লোকের সহিতই ত দেখা হয়—কয়ট লোকের কথা আমাদের মনে থাকে । ভুবন পোদারও আমার পথের চেনী—মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য, কিন্তু আজও মাঝে মাঝে তার কথা আমার মনে পড়ে, আর ভাবি যে লোকটি কেন আত্মগোপন করিয়া নিজেকে ভুবন পোদার বলিয়া চালাইয়াছিল। জানি না কিসের জন্য, কিন্তু তার প্রবঞ্চনা আমাকে যে শিক্ষা দিয়াছে তাহাকে আমি জীবনের একটা বড় অভিজ্ঞতা বলিয়া নিঃসঙ্কোচে ঘোষণা করিতে পারি। সেই কথাই বলিব— ছেলেমেলা হইতেই আমার কেমন একটা ভ্রমণের নেশা । জীবনের এই সামান্ত কয়টা বছরের মধ্যে অনেক দেশই ত ঘুরিলাম, কিন্তু বলিতে লজ্জা হয় আজও আমি আমার জন্মস্থান জ্ঞান হইবার পর দেখি নাই। ইহার কারণ অকারণ দুই আছে, কিন্তু তাহ লইয়া মিথ্যা কথা বাড়াইব না। - দিনকয়েক ধরিয়া শরীরটাও খারাপ যাইতেছিল, তা ছাড়া বাবা সপ্তাহে অন্ততঃ একবার করিয়া তাগাদ করিতেছেন তাহার কাছে যাইবার জন্য। প্রস্তুত হইলাম । ভাবিলাম, এই সুযোগে যদি একবার জন্মস্থানটা দর্শন করিয়া আসিতে পারি। যাত্রা করিলাম। ট্রেনে চলিয়াছি। আশেপাশের বন-বাদাড়, কুঁড়েঘর, দিগন্তজোড়া দিগম্বর মাঠ লইয়া কবিত্ব করিব না। তৃতীয় শ্রেণীর অসম্ভব ঠাসাঠাসি হইতে আত্মরক্ষা করিতেই ঘামিয়া উঠিয়াছি, তার উপর নিজের লগেজ বাঁচান এবং পকেট বাঁচান। চতুদিকেই সমভ। এ ছাড়া হকারের জালাময় কষ্ঠের বক্তৃত আছে, ভিনগ্নপালের করুণ-আকর্ষণের মৰ্ম্মস্পর্শী আবেদন আছে—টিকিটচেকারকে টিকিট দেখাইবার আইন-কানুন আছে। নিশ্চিন্তে বসিয়া থাকিবারও জো নাই। – si ষ্টীমারে উঠিয়া ভাবিলাম, এইবারে হয়ত দুর্ভোগের জন হইবে। কিছুক্ষণ বেশ নিরুপদ্রবে ছিলামও, কিন্তু তৃতী শ্রেণীর যাত্ৰিগণের বোধ করি অভিশাপ আছে। দেখি শুনিয়া এক কোণে একটু স্থান আবিষ্কার করিয়াছিনা কিন্তু স্থানাভাবে পুনরায় গুটিগুটি হইয়া বসিতে হয়। সকলকেই যখন যাইতে হইবে তখন এ ছাড়া আর উষ্ণ কি ! আমার সম্মুখে ষ্টীমারের একাংশের প্রায় অৰ্দ্ধেক জুড়ি মোট দড়ির সাহায্যে সাধারণ হইতে আলাদা ব্যবস্থা ক্ষ -হইয়াছে, এবং ঐ অভখানি স্থান জুড়িয়া জনআটী বন্দুকধারী প্রহরী, জন-বার-চোদ আসীদ পর নিৰ্ব্বিকার চিত্তে বসিয়া গল্প জুড়িয়া দিয়াছে। কি আর কংি বসিয়া বসিয়া একাগ্রচিত্তে উহাদের কথোপকথনের মৰ্ম্মাৰ্ধক্ৰং করিতেছিলাম এবং মাঝে মাঝে আসামীদের মুখে উহাদে অপরাধের ছাপ অনুসন্ধান করিয়া ফিরিতেছিলাম। সম্ভৱ আশী বছরের প্রাচীন হইতে আরম্ভ করিয়া চোদ্ধ-জুন বছরের তরুণ উহাদের মধ্যে ছিল। আশ্চৰ্য্য, ইহাদের মংে কেহ নাকি করিয়াছে খুন, কেহ দাদা, কেহবা সিদ নট চুরি, অথচ মুখ দেখিয়া কিছুই বুঝিবার " নাই। বিচিত্র এই মানব জাতি । আমার মনের ঐ জানি উহাদের সঙ্গে আলাপ করিবার জন্য ব্যগ্র হইয়া উঠিল, ত্রে অপর দিকট। চোখ রাঙাইয়া ধিক্কার দিল, অথচ এমনি মজা তখন পর্য্যন্ত উহাদের কাহারও স্বরূপ আমার কাছে প্রকাশ পায় নাই। কিন্তু আমার ভদ্র মন এরই মংে উহাদের প্রতি বিরুদ্ধ ভাব পোষণ করিতে স্থর করিয়াছে। | মানুষ এমনিই বটে—এমনি করিয়াই মানুষের বিচারে মানুষ পায় অবজ্ঞা, পায় ঘৃণ । কিছুক্ষণের জন্য অন্যমনস্ক হইয় পড়িয়াছিলাম। মূত্র লীলাকাশে সাদা মেঘের খেলা চলিয়াছিল। নী পদ্মা ঘোলা জল আবৰ্ত্ত রচিয়া খরবেগে নিজের - لف