পাতা:প্রবাসী আশ্বিন ১৩৪৪ সংখ্যা ৬.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণশ্বিন ছেলেরা মদি মানুষ হয় তবে তাদের বোনের দুঃখ ঘুচবে, কিত আমার দুঃখ ঘুচাতে কেউ নেই। পরের দানা খেয়ে গড়ের টিতেই ঘুমতে হবে, দেশের মাটিতে শুতে পারলাম না। বৃদ্ধ এই পৰ্যন্ত বলিয়াই থামিয়াছিল। অকস্মাং বুকের মাঝখানটা আমার টন টন করিয়া উঠিল। নিজের এ ভাব-বিপৰ্য্যয়ে নিজেই আশ্চৰ্য্য হইলাম। হায় রে মানুষের মন, যখন বুদ্ধের সহিত একটা সাধারণ কথা বলিতেও আমার ভদ্র মন সঙ্কুচিত হইয় উঠতেছিল, ঠিক সেই মুহূৰ্ত্ত হইতেই তাঁহারই জন্য একটা সহজ সহানুভূতি আমার অন্তরে অজ্ঞাতে বাসা বাধিতে শুরু করিয়াছিল। হয়ত এত সহজে নিজেকে নিজে চিনিতে পারিতাম না যদি-না বৃদ্ধ এমনি করিয়া সকল রাস্তা পরিস্কার করিয়া দিয়া যাইত। কৃতক্ষণ ষ্টীমারের রেলিং ধরিয়া দাড়াইয়াহিলাম হুস নাই। পিঠের উপর মৃদু স্পর্শ অনুভব করিয়া মুখ ফিরাইলাম। আমার পূৰ্ব্বপরিচিত ভদ্রলোকটি। তিনি একটু হাসিয়া কহিলেন, অনেকক্ষণ ধরে ঠায় দাড়িয়ে আছেন। ইতিমধ্যে আরও বারকয়েক ঘুরে গেছি। কহিলাম—কোন দরকার আছে কি ? তিনি উত্তরে জানাইলেন—না দরকার ঠিক নয়. প্রায় ঘট দুই ধরে একই ভাবে দাড়িয়ে আছেন এই আর কি ! কঠিলাম—তা বটে ! বেশী কতকগুলি বকিতে আমার নোটেই ভাল লাগিতেছিল না। একমনে বুদ্ধকে চাই করিতে বসিয়াছিলাম। আমার চোখের সর্থে বিস্তীর্ণ জলরাশির উপর দাড়াইয়া বৃদ্ধ যেন অট্র হাসিয়া বলিতেছিল--বাবুজী, আমি জিতেছি, আমার দেশের মাটি থেকে কেউ আমায় তফাৎ করতে পারে নি। ত পারে নাই সত্য। বৃদ্ধ তার জীবন দিয়া নিজের শেষ ইচ্ছা পূরণ করিয়া গেল। কিন্তু মেয়েটার কথা কি সে একবারও ভাবে নাই ? কয়েক ঘণ্ট। পূৰ্ব্বেও যে মেয়ের কথা বলিতে গিয়া উচ্ছসিত আবেগে কাদিয়া উঠিয়াছে, মৃত্যুর পূৰ্ব্বে কি তার কথা একবারও বৃদ্ধের মনে উদয় হয় নাই ? হয়ত হইয়াছে, কিন্তু বাচিয়া থাকিয়া একমাত্র ভাবন ছাড়া অন্য কোন উপায়ই ত তার হাতে থাকিত না। সে তার সাধ্যমত নিজের ক্ষমতার সদব্যবহার মৃত্তিক । ^te-s করিয়াছে। মনের অন্ততঃ একটা আকাজক্ষাও তার পূর্ণ হইয়াছে। ইহাই বা বৃদ্ধের পক্ষে কম কি ? চাহিয়া দেখিলাম, ভদ্রলোকটি তখনও আমার অদূরে দাড়াইয়া আছেন। তার এই অনাবখ্যক আত্মীয়তা করিবার প্রয়াসকে আমি ভাল বলিয়া গ্রহণ করিতে পারিলাম না। আমি কি ভাবি না-ভাবি—কি করি না-করি সে খবরে তোমার দরকার কি হে বাপু ! অস্বীকার করিব না—আমি রীতিমত বিরক্ত হইয়া উঠিলাম, কিন্তু মুখে কোন কথা বলিলাম না। তিনি কি বুঝিলেন জানি না, কিন্তু পুনশ্চ কথা কহিয়া উঠলেন—আপনি বিরক্ত হচ্ছেন, হয়ত ভাবছেন লোকটি কি বেহায়–কিন্তু মানুষ মাত্রই কৌতুহলী একথা বোধ করি আপনিও স্বীকার করবেন। তাহার মুখের প্রতি খানিক চাহিয়া দেখিয়া একটু হাসিয়া কহিলাম—আপনি বোধ করি স্পাই ? —আজ্ঞে না। ভদ্রলোকটি অবিচলিত কণ্ঠে কহিলেন— আপনি ইচ্ছে করলে আমার প্রশ্নের উত্তর নাও দিতে পারেন, কিন্তু অযথা সন্দেহ করবেন না । ভদ্রলোকটি এক মুহূৰ্ত্তে অন্ত প্রসঙ্গে উপস্থিত হইলেন—আপনি বোধ করি শহরের লোক ! চমৎকার প্রশ্ন । হাতিয়া-দ্বীপে। আমার কথাটার পুনরুক্তি করিয়া ভদ্রলোকটি কহিলেন– বলেন কি ! হাসিয়া উত্তর করিলাম—অবাক হবেন না। হাতিয়া আমার জন্মস্থান হ’লেও আমি শহরবাসী। তাই বলুন—ভদ্রলোকটি একটু হাসিয়া কহিলেন, সেই জন্তেই—নইলে যে-দেশে এক আঙুল মাটির জন্তে মাথার পর মাথা গুড়ো হয়ে যাচ্ছে সেই দেশে জন্মে আপনি এই সাধারণ ব্যাপারে এত বেশী বিচলিত হয়ে পড়তেন ন। একটু থামিয় তিনি পুনরায় কহিলেন । যদি জন্মভূমিতে কখনও পদার্পণ হয় এ অভাগাকে স্থলবেন না 77 ক্ষুদকুড়ে যা পারি ভাই দিয়ে দু-দিন অতিথি-সৎকার করব। আর দেখিয়ে দেব এই মাটির মায়ায় মহিব কেমন ক’রে আত্মবিস্মৃত হয়ে থাকে । , কহিলাম—না, আমার জন্মস্থান