পাতা:প্রবাসী আশ্বিন ১৩৪৪ সংখ্যা ৬.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԵսՀՅ মাছগুলি স্বামীর হাত হইতে তুলিয়া লইলেন। বলিলেন, “ঐ বেশ, একটু আঁশমুখ ত করতে পারবে।” মৃণালের মনটা ক্রমেই ভার হইয়া আসিতেছে । আর কতটুকু সময় বা বাকি ? তাহার পরেই আবার সেই বোডিং-বাস । মাগো, প্রাণট। তাহার যেন হাপাইয় উঠে। মাতৃহীনা মেয়ে সে, কিন্তু মামীমার কোলে মানুষ হইয়া কোনও দিন সে দুঃখ তাহাকে অনুভব করিতে হয় নাই । এই ছোট গ্রামের গণ্ডির ভিতরই যদি তাহার জীবন কাটিয়া যাইত, তাহা হইলে দুঃখ ছিল কি ? সত্য বটে, তাহা হইলে লেখাপড় করা তাহার ঘটিয়া উঠিত না, বিশাল জগতের যেটুকু পরিচয় সে পাইয়াছে, তাহাও পাইত না । সেটা যে কতবড় ক্ষতি তাহা বুঝিবার মত বয়স ও জ্ঞান মৃণালের হইয়াছে। তবু মন তাহার যেন বুঝিতে চায় না। এই ত গ্রামে কত মেয়ে আছে, যাহাদের অক্ষর-পরিচয়ও হয় নাই, অথচ কি নিশ্চিন্ত স্থথে তাহদের দিন কাটিয়া যাইতেছে। মৃণালেরও কি তেমনই কাটিতে পারিত না ? কিন্তু মুখ, শাস্তি, নিশ্চিন্ততা, স্বাধীনতা কিছুই নাই, এমন মেয়েও সে কম দেখে নাই । তাহদের দিক্ হইতে চোখ ফিরাইয়া লইলেই চলে না। যদি শিক্ষাদীক্ষা কিছুমাত্র এই মেয়েগুলির থাকিত, তাহা হইলে পরের হাতে এমন থেলার পুতুল হইয় তাহদের জীবন কাটিত না। নোটের উপর সে স্বীকারই করে যে স্বাবলম্বনের পথে স্নাড করাইয়া দিয়া পিতা তাহার পরম উপকারই করিয়াছেন। পথে অনেক কাটা, তা আর কি করা যাইবে ? কোন পথে বা নাই ? এই পথে ত তবু ভবিষ্যতে কিছু স্বখের আভাস করন করা যায়। অন্য অনেকের ত সেটুকু মুখও নাই । চিনি-টিনিকে লেখাপড়া শিখাইতে তাঁহাদের মায়ের কেন যে এত আপত্তি, তাহা মৃণাল বুঝিতে পারে না। মামীম নিজের শাস্তির নীড়টুকুর বাহিরে কিছুই দেখিতে চান না, কিন্তু তাহার মেয়েদের অদৃষ্টও যে তাহারই মত সুপ্রসন্ন হইবে জাহার স্থিরতা কি ? মামামা রান্নাঘর হইতে ডাকিয়া বলিলেন, “ওরে মিল্প, আমার হয়ে গেছে, ঠাই করেছি, খাবি আয় ।” খোকাকে কোলে করিয়া মৃণাল রান্নাঘরের দাওয়ার আসিয়া দাড়াইল। চিনি আর টিনিও মাছের টক দিয়া প্রবণসী ১৩৪৪ গরম ভাত খাইবার লোভে তাহার পিছন পিছন আমি জুটিল। কিন্তু মা তাহাদের একেবারেই আমল দিলেন = তৎক্ষণাৎ বিদায় করিয়া দিলেন । মুণালের ভাত বাড়িয়া দিয়া থোকাকে গৃহিণী ভাষ্ট্র কোল হইতে টানিয়া লইলেন। মৃণাল থাইতে বলি। বোর্ডিঙের খাওয়ায় পয়সা যথেষ্ট খরচ হয়, কিছু যে ধারণ খাইতে দেয় বা কম দেয় তাহাও নহে, তবু সেখানে ষ্ট্রে ভরে ত মন ভরে না । অন্য মেয়ের রান্না লইয়া, রোজ । একঘেয়ে তরকারি লইয়া খুব সমালোচনা করে, ফ্লার ততটা করিতে পারে না, তাহার লজ্জাই হয়। মেরে পাড়াগায়ের মেয়ে, অতি সাধারণ গৃহস্থঘরের মেয়ে, তায় স্তু সবাই জানে। সে বেশী সমালোচনা করিলে কেহ হৰি উলটিয়া বলে, “বাড়ীতে তুমি দুবেলা কি পোলাও-কালিৰ খেতে গো ?” তাহা হইলে সে কি উত্তর দিবে ? কিন্তু মন তাহার অন্য মেয়েদের সমানই খুংখুখ করে। মামীম সামনে বসিয়া তাহাকে খাওয়াইতে লাগিলেন এত সকালে মানুষে কত ভাতই বা খাইতে পারে ? তৰু বারবার অনুরোধ করিয়া এটা-সেটা পাতে তুলিয়া নি, মামীম তাহাকে খানিকটা খাওয়াই ছাড়িলেন । মৃণাল হাত-মুখ ধুইয়া কাপড় পরিতে গেল। জ্ঞান যত দিন থাকে, জুতামোজার সঙ্গে তাহার কোনও সম্পন্ন থাকে না, যতই শীত পড়ক না কেন । কিন্তু কলিকাতাং জীবনে এ-সব ত তাহার নিত্য সঙ্গী। তাহাকে জুতামোৰ পরিতে দেখিয়া চিনি-টিনিও লাফালাফি করে, তাহাৰাষ্ট্র দিদির মত জুতামোজা পরিবে । হাতখরচের পক্ষ জমাইয়া মৃণাল একবার তাহাদের জন্য দুই জোড়া জুতামোৰ কিনিয়া জানিয়াছিল। কিন্তু ঐ লাফালাফি পৰ্যন্ত্ৰই জুতামোজা পরিলে ত অমন বনের হরিণের মত লাফাই বেড়ানো যায় না ? কাজেই জু৩মোজ তাকেই তোল থাকে, আছে যে সেই আনন্দই চিনিদের যথেষ্ট । বাহিরে গরুর গাড়ী আবার ८ञ्जॉड ट्ट्रेल । মৃণালের নির্দেশমত তাহার জিনিষপত্র গাড়োয়ান এক এক করিম গাড়ীতে তুলিয়া দিল। মামীম জিজ্ঞাসা করিলেন, “স্থান খান দু-চার চন্দ্রপুলি ছেড়া কানিতে বেঁধে দেব ? ন যেতে যদি খিদে পায় ?” *