পাতা:প্রবাসী কার্তিক ১৩৪৪ সংখ্যা ৭.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

32) গাড়ী হইতে নামিয়া বিশ্বনাথ দেখিল পঞ্চানন সাহ হস্তদন্ত হইয়া পিছনে আসিতেছে। বিশ্বনাথ বলিল—সাহা মশায়ের কি খবর আবার ? পঞ্চানন নিকটে, আসিয়া বলিল—আজ একবার সনঝে বেলাতে আসতে হবে দাদাবাবু আমরা নতুন বই ধরেছি, একবার মোশানটোশানগুলা দেখিয়ে দেবেন। পঞ্চানন সাহা অবস্থাপন্ন সাহা-বংশের ছেলে, মদের দোকান আছে, তাহার উপর আবার এক যাত্রার দল খুলিয়া বসিয়াছে। ঐ দলে মধ্যে মধ্যে বিশ্বনাথকে মোশান-মাষ্টারী করিতে হয়। / বিশ্বনাথ বলিল—আজ আর হয় না গরীব ভাই। আজ আবার আমাদের থিয়েটারের রিহারস্যাল আছে। অন্য দিন আসব বরং । পঞ্চানন একটু আমতা আমতা করিয়া বলিল—আর একটা কথা বলছিলাম দাদাবাবু! হাসিয়া বিশ্বনাথ বলিল—আঁচ্ছা ! বলে ফেল ! —আমাদের একটা পাট যদি আপনি ক’রে দিতেন— —ই ! না, তা পারব না গরীব ভাই । —আমরা মোট পেনামী দিতাম ! কথাটা পঞ্চানন একটু দ্বিধাভরেই বলিল। বিশ্বনাথ স্থির দৃষ্টিতে তাহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। তার পর বলিল – জান পঞ্চানন, আমাদের পূর্বপুরুষ একদিন রাজা ছিলেন । পঞ্চানন সঙ্কোচে এতটুকু হইয় গেল, সে মাথা ইেট করিয়া নীরবে দাড়াইয়া রহিল। বিশ্বনাথg আর কোন কথা বলিল না, গাড়ীতে চড়িয়া সে বাড়ীর দিকে রওনা ইল। কিছু দূর গিয়াই কিন্তু সে আবার ফিরিল, পঞ্চাননের কাছে আসিয়া বলিল—মোশানটোশান যা দেখিয়ে দেবার আমি দেব, কাল পরশু যেদিন হোক—আমাকে খবর দিও। আবার সে গাড়ীটাকে ফিরাইয়া দ্রুততর বেগে বাড়ীর দিকে রওনা হইল। পঞ্চানন মুখ ভেঙচাইয়া বলিল—রাজকোঙর আমার ! ‘ঘরে ভাভ নাই ধরমের উপোস’ সেই বিত্তান্ত ! কোন কালে ৰি পেয়েছি হাত উকে দেখ—তাই। পাশেই রাস্তার ধীরে প্রবণসী ১৩৪৪ আপন দোকানে হরিপদ দাড়াইয়াছিল, সে হাসিয়া বলিল—কি হ’ল সাহা-দাদা ? বংশৰ্থেটে কি বললেন ? পঞ্চানন কথাটা বলিবার জন্য হরিপদর দোকানে গিয়া ऐछठेिन्न । বিশ্বনাথ যখন বাড়ী ফিরিল তখন বারট বাজিয়া গিয়াছে । সমস্ত বাড়ীটা যেন থম্-থম্ করিতেছিল। মা দাওয়ার উপর একটা খুঁটির ধারে অত্যন্ত বিধঃ ব্যথাতুর মুখে বসিয়া আছেন। তাহার স্ত্রী বোধ হয় ঘরের ভিতর, কিন্তু কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না । বিশ্বনাথের তিন বছরের মেয়ে বাণী বারান্দার এক প্রাস্তে তাহার খেলাঘরে বসিয়া আছে। সেও কেমন যেন অত্যন্ত শাস্ত, মুথে তাহার আবেলি-তাৰোল কথার লহরী নাই, হাত পা নাড়িয়া অত্যন্ত চঞ্চল ভাবে সে তাহার গৃহকৰ্ম্মে ব্যস্ত নয়, মোট কথা জীবনের উচ্ছ্বাস যেন অকস্মাৎ মন্দীভূত হইয়া পড়িয়াছে। গাড়ীট এক পাশে রাথিয় দিয়া বিশ্বনাথ বাহু প্রসারিত করিয়া ডাকিল—বাণীম, রাণীমা, মণিমা, ধনিম, দিম, রাডিমা, লালিম, নীলিম, মহিম, গরিম, স্বরম, সুষম, মার্সীম, পিসীমা এস মা, হাস মা ! বিশ্বনাথের এটুকু নিজের রচনা—মেয়েকে আদর করিয়া সে এমন অনেক ছড়া রচনা করে। বাণী থেল ছাড়ির উঠিল, কিন্তু আজ আর ছুটিয়া আসিয়া বাপের কোলে ঝাপাইয়া পড়িল না। সে ধীরে ধীরে কাছে আসি৷ বলিল–গয়লাকে তুমি মেরো বাবা ! বিশ্বনাথ বলিল—আচ্ছা ! কিন্তু কেন বলত? সে কি তোমার শ্বশুর হতে চায় না কি ? মা এতক্ষণে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন—পায়ে তার জুতো ছিল না বাবা, তাই হাতেনাতে জুতো মারতে বাকী রেখে গেছে। নইলে মুখে— মা আর বলিতে পারিলেন না, ঝর ঝর করিয়া স্কারি ফেলিলেন । ঘরের ভিতর হইতে এতক্ষণে স্ত্রীর সাড়া পাওয়া গেল,— তার আর দোষ কি বলুন, পাচ মাস সে ধারে দুধ দিয়ে यttछ ।