পাতা:প্রবাসী কার্তিক ১৩৪৪ সংখ্যা ৭.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&. হয়, ইহাতেই তিনি এখন কাতর বোধ করেন। পাড়াগায়ের মানুষ এইটুকু ইটোকে গণনার মধ্যেই আনে না, কিন্তু পূর্বের স্বাস্থ্য আর র্তাহার নাই। সংসারের বোঝাটা ক্রমেই যেন গুরুভার হইয় তাহার কাধে চাপিয়া বসিতেছে। মাঝে মাঝে প্রাণ ইপিাইয় উঠে। এতগুল আপোগণ্ড ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ ভাবিয়া মন আশঙ্কায় ভরিয়া উঠে । তিনি যদি অকালে চলিয়া যান ত ইহাদের হইবে কি ? মামার বাড়ীর দিকে ত কাহারও কাছে অধিলার সাহায্য পাইবার উপায় নাই। কপর্দকহীন দরিদ্রের ঘরে যখন বিবাহ করিয়াছিলেন তখন এদিকটা মৃগাঙ্ক ভাবিয়া দেখেন নাই । I শীতকালের সকালটায় বিছানা ছাড়িয়া নড়িতে ইচ্ছা করে না, কিন্তু পাড়াগায়ে সকালে না উঠিলে নানা দিকে নানা অসুবিধা। কাজেই দোলাইখানা দুপাকে গায়ে জড়াইয়া কাশিতে কাশিতে মৃগাঙ্ক উঠি বসিলেন, এবং বাহিরে যাইবার যোগাড় দেখিতে লাগিলেন। বুলু রানাঘরের দাওয়া হইতে চীৎকার করিয়া বলিল, “বাব, গরম জল চাই নাকি ?” স্বগাৱ খিড়কির দরজা দিয়া বাহির হইতে হইতে বলিলেন, “এখন না, পরে দিস।” প্রিয়বালা মুখ ভাঙাইয়। বলিলেন, “পরে দিদ। টি দাগী বাদী বসে আছে কিন, তাই পঞ্চাশবার করে গরম জল ক’রে দেবে। এদিকে ত দুখানা কাঠ ভিডি আনবারও ক্ষমতা নেই, তাও আমি বেটা নিয়ে ভাঙব ।” লি এক্ট বাপের ভক্ত বেশী, সে মাসের অবিচারে ক্রুদ্ধ ཧྥ་ཧྲེ་ཧྥུ། বলিল, “আহ, কাল যত কাঠ সব ত আমি শার টেপ কুড়িয়ে লিয়ে এসেছি, তুমি আবার কথন ভাঙলে ? বাবার যদি এখন জলের দরকার না থাকে, তবু জোর করে লিতে হবেক নাকি ?” প্রিয়বাল ঝঙ্কার দিয়া বলিলেন, “অ, যl, ছুড়ি, বেশী আদিখ্যেতা করতে হবে না। আমার কথায় উনি আবার এলেন এ ধরতে, যেন বুড়ী শাশুড়ী ঠাকরুন। । দেৰি, সিধুটা কেঁদে উঠল কেনে দেখ, গিয়ে । تھی۔ বুলি অগত্যা গজর গজর করিতে করিতে উঠিয় গেল । প্রবাসী ১৩৪৪ ঝগড়ায় সেও মায়ের চেয়ে কম যায় না, তবে সকালবেলা উঠিয়াই ঝগড়া করিতে ইচ্ছা করিতেছিল না, কেমন যেন নিস্তেজ লাগিতেছিল। অন্ততঃ এক ধামি মুড়ি চালঙ্কা বা কচি পেয়াজ দিয়া পার করিতে না পারলে, কোমর বধিয়া ঝগড় করার মত জোর পাওয়া যায় না। কিন্তু মা যে এখনই মুড়ি বাহির করিবেন তাহার কোনও লক্ষণ দেখা যাইতেছে না । প্রিয়বালা ভাতের হাড়িতে ধোয়| চালগুলি ঢালিয়া দিলেন, সঙ্গে গোটা-দুই আলু-বেগুনও দিলেন। নটা বাজিতে-না-বাজিতে ত ভাতের তাগিদ আসিবে, ইহার ভিতর পঞ্চাশ ব্যঞ্জন আর তিনি কোথা হইতে রাধিবেন ? ইহারই ভিতর দুধ জালু দিয়া ছোটগুলাকে খাওয়াইতে হইবে, বড় ছেলেমেয়েদেরও মুড়ি হোক, থই হোক, কিছু খাইতে দিতে হইবে । সারাদিনের ভিতর মরিবার ফুর্সং নাই, পোড়া শীতকালের বেলা দেখিতে দেখিতে গড়াইয় যাইবে । তাহার পর এটা এখানে পড়িয়া ঘুমায়, সেটা ওখানে পড়িয়া ঘুমায় । সবগুলিকে টানিয়া তোলো, ভাত খাওয়াও, আবার কাপড় ছাড়াইয়া মুখ-হাত-পা ধোয়াইয়৷ লইয়া গিয়া বিছানায় শোওয়াও । বুলু আর গুলু এখন কিছু কিছু সাহায্য করে এই যা রক্ষা। মস্ত একটা মাটির কলসী, মুখটা তাহার ছেড়া কাপড় দিয়া ঠাসিয়া বন্ধ করা, না হইলে ভিতরের মুড়ি মিয়াইয়া যায়, থাইবার যোগ্য থাকে না । প্রিয়বালা ছেড়া কাপড়খানা টানিয়া বাহির করিয়া মস্তবড় একটা ধামায় হড় হড় করিয়া বেশ অনেকগুলি মুড়ি ঢালিয়া ফেলিলেন, সঙ্গে সঙ্গে হাক দিলেন, “ওরে আয় মুড়ি লিয়ে যা।” সিধু বাদে আর সব ক'জন ছেলেমেয়ে বেতের নান রঙের ছোট ছোট ধামা হাতে দৌড়াইয়া আসিল। যাহার যেরকম থাইবার ক্ষমতা, প্রিয়বালা তাহাকে সেই আন্দাজে মুড়ি মাপিয়া দিতে লাগিলেন। সবাইকার আবার এক রকম উপকরণ পছন্দ নয়, কেহ চায় গুড়, কেহ চায় টাটকা সরিষার তেল আর র্কাচালঙ্কা, কেহবা চায় একগোছা কচি পেয়াজ । যথাসাধ্য সকলের আবার মিটাইয় প্রিয়বালা আবার রান্নাঘরে ঢুকিলেন, এইবার দুধ জাল দিতে হইবে। সৌভাগ্যক্রমে গড়ীতে দুই-তিনটি গাই আছে, তাই কচি