পাতা:প্রবাসী কার্তিক ১৩৪৪ সংখ্যা ৭.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●b〜 প্রবাসী SNシ8 সংসারে যাওয়া-আসার পথে, আলো-আঁধারের পর্যাবর্তনে ভিড়ের সঙ্গে মিলে যখন মৃত্যু দেখা দেয় তখন তাকে অসঙ্গত ব’লে মনে হয় না। বনে অজস্ৰ ফুল ফোটে আর ঝরে, সেই ফোটা-ঝরার ছন্দ একসঙ্গে মেলানো। তেমনি বিরাট সংসারের মাঝখানে জীবনে মৃত্যুতে চিরদিন ধরেই তাল মিলিয়ে চলে। মৃত্যু সেখানে জীবনের ছবিতে দুঃখের দাগ কাটে, চিত্রপটকে ছিন্ন করে না। কিন্তু আশ্রমের মধ্যে সেই মৃত্যুকে আমরা তো অত সহজে মেনে নিতে পারি নে। যারা এখানে মিলেছে তারা মিলেছে পান্থশালায়, সামনে তাদের এগোবার পথ, সেই পথের পাথেয় সংগ্রহ করছে, এখানে সাংসারিক সুখদু:খের দ্বন্দ্ব নেই। এখানকার আশাপ্রত্যাশা প্রভাত-স্বর্যের আলোকে দূরপ্রসারিত ভবিষ্যতের দিকে । এর মধ্যে মৃত্যু যখন আসে তখন অভাবনীয় একটা নিষ্ঠুর প্রতিবাদ নিয়ে আসে । আতি তীব্র বেদনায় অনুভব করি এখানে তার অনধিকার। বীরেশ্বর আমাদের মধ্যে এসেছিল শিশু অবস্থায়। সমস্ত আশ্রমের সঙ্গে সে অর্থও হয়ে মিলেছিল, চলছিল এখানকার তরুলত পশুপাখির অবারিত প্রাণঘাত্রার সঙ্গে সঙ্গে নিত্য বিকাশের অভিমুথে ; এথানকার বিচিত্র ঋতুপর্যায়ের রসধারায় তার অভিষেক হয়েছিল। কোনে দিকে সে দুর্বল ছিল না ; না শরীরের দিকে, না মনের দিকে, না শ্রেয়োবুদ্ধির দিকে। নবোদিত অরুণরশ্মির মতো তার মধ্যে পুণ্যজ্যোতির আভাস দেখা দিয়েছিল, সে ছিল অকলঙ্ক । যদি কেউ ত্যাগ বা সেবার দ্বারা জীবনের সত্য রূপ প্রকাশ করতে পারে, তবে তা আমাদের কেবল যে আনন্দ দেয় এমন নয় শক্তিও দেয়। স্বল্পকালীন জীবনমৃত্যুর পাত্রটিকে সে আপন সত্য দ্বারা পূর্ণ ক’রে গেছে। এই সত্যের সম্বন্ধের অবসান নেই। সত্য ভাবে যার কাছে সে আপনাকে নিবেদন করেছিল, বেঁচে থাকলে সেই আশ্রমের কাছে সে ফিরে আসতই । এখানে অনেক ছাত্রছাত্রী আসেন, যা লাভ করবার হয়তো তা সম্পূর্ণই লাভ করেন, এখানকার আনন্দ-উৎসবে আনন্দিত হন, কিন্তু এখানে তাদের আশ্রমবাস অবশেষে একদিন সমাপ্ত হয়। কিন্তু আমি অঙ্গভব করেছি, বীরেশ্বর কেবল এখানকার দান গ্রহণ করতে আসে নি, তার মনে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে এইখানকার বেদীমূলেই সমপিত হোত। মৃত্যুর থালায় সেই নৈবেদ্যই কি এখানে সে চিরদিনের মতো রেথে গেল । অল্প কিছু দিনের জন্যে সংসারে আমরা আসি আর চলে যাই। বিশ্বব্যাপী মানবপ্রাণের যে জাল বোনা নিত্যই চলেছে তার মধ্যে ছোটবড় একটি ক’রে স্বত্র আমরা জুড়ে দিই। তার মধ্যে অনেক আছে বর্ণ যার মান, শক্তি যার দৃঢ় নয়। কিন্তু যে ভালো, যে ভালোবেসেছে, মানুষের ইতিহাসস্থষ্টির মধ্যে সে অলক্ষ্যেও সার্থক হয়ে থাকে। পৃথিবীতে এমন অনেকে আছে এবং গেছে যাদের নাম জানি নে,মহাশিল্পীর শিল্পে চিরকালের জন্তে তারা কিছু রং লাগিয়ে গেছে। বীরেশ্বর তার সরলতা, তার নির্মলতা, তার সহৃদয়তায় আমাদের মনে যে প্রীতির উদ্রেক ক’রে গেছে তারই দ্বারা তার জীবনের শাশ্বতমূল্য আমরা মৃত্যু অতিক্রম করেও অনুভব করি । জীবনকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ করে বিদ্রুপ করতে এসেছে মৃত্যু, এ কথা মনে নেয় না। বিশ্বের মধ্যে এত বড় নিরর্থকতার ব্যঙ্গ তো দেখতে পাই নে। জগৎকে তো দেখতে পাচ্ছি সে মহৎ সে স্বন্দর । তার সেই মহত্ব মৃত্যুকে পদে পদে মিথ্যা করে দিয়ে, অমঙ্গলকে মুহূতে মুহূতে বিলীন করে যে, বিরাজ করে, নইলে সে যে থাকতেই পারত না। এই জগৎ নিত্যই চলছে, কিন্তু আপনাকে তো হারাচ্ছে না। জগতের সেই স্থায়ী সত্যের দিকেই সে রয়ে গেছে, মহাকালের যাত্রাপথে ক্ষণকালের অতিথিরূপে এসে যে আমাদের স্নেহ আমাদের আশীৰ্ব্বাদ নিয়ে গেছে । তাকে অমর হারাই নি, তোমরা তার প্রিয়জন, আমরা তার গুরুজন—এই কথাই আজ অন্তরের সঙ্গে উপলব্ধি করি। [ শাস্তিনিকেতন মন্দিরে রবীন্দ্রনাথের ভাষণের অনুলিপি। শাস্তিনিকেতনের অধ্যাপক শ্ৰীনিতাইবিনোদ গোস্বামীর কমাত্র পুত্র বীরেশ্বর শিশুকাল হইতে শাস্তিনিকেতনের ছাত্র ছিলেন ও সম্প্রতি প্রবেশিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়। শান্তিনিকেতন শিক্ষাভবনে আই. এ. পড়িতেছিলেন—সম্প্রতি র্তাহার মৃত্যুতে শাস্তিনিকেতনে বর্ষামঙ্গল-উৎসবের আয়োজন বন্ধ হয় । ] వ్రై মধ্যে অধ্য সঞ্চিত হয়ে উঠছিল, তার জীবনের নৈবেন্ত । - -