পাতা:প্রবাসী কার্তিক ১৩৪৪ সংখ্যা ৭.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রস্তাবনা সমস্ত দিন আপিসের হাড়ভাঙা খাটুনির পরে গড়ের মাঠে ফোটের কাছ ঘেষিয়া বসিয়াছিলাম। নিকটেই একটা বাদাম-গাছ, চুপ করিয়া খানিকটা বসিয়া বাদাম-গাছের সামনে ফোটের পরিথার ঢেউখেলানো জমিট দেখিয়া হঠাৎ মনে হইল যেন লব টুলিয়ার উত্তর সীমানায় সরস্বতী কুণ্ডীর ধারে সন্ধ্যাবেলায় বসিয়৷ আছি। পরক্ষণেই পলাশী গেটের পথে মোটর হণের আওয়াজে সে ভ্রম ঘুচিল । অনেক দিনের কথা হইলেও কালকার বলিয়া মনে ट्रं । কলিকাতা শহরের হৈচৈ কৰ্ম্মকোলাহলের মধ্যে অহরহ ডুবিয়া থাকিয়া এখন যখন লব টুলিয়। বইহার কি আজম'বাদের সে আরণ্যভূভাগ, সে জ্যোৎস্না, সে তিমিরময়ী প্তব্ধ রাত্রি, ধু ধূ বনঝাউ আর কাশবনের চর, দিথলয়লীন ধূসর শৈলশ্রেণী, গভীর রাত্রে বন্য নীলগাইয়ের দলের দ্রুত প্ৰদধ্বনি, খররৌদ্র মধ্যাহ্নে সরস্বতী কুণ্ডীর জলের uরে পিপাসাৰ্ত্ত বন্য মহিষ, সে অপূৰ্ব্ব মুক্ত শিলাস্তৃত প্রাস্তরে রঙীন বনফুলের শোভা, ফুটন্ত রক্তপলাশের ঘন অরণ্যের কথা ভাবি, তখন মনে হয় বুঝি কোন অবসরদিনের শেষে সন্ধ্যায় ঘুমের ঘোরে এক সৌন্দৰ্য্যভর জগতের স্বপ্ন দেখিয়াছিলাম, পৃথিবীতে তেমন দেশ যেন কোথাও নাই। শুধু বনপ্রান্তর নয়, কত ধরণের মানুষ দেখিয়াছিলাম। কুন্তা মুসম্মত কুন্তার কথা মনে হয়। এখনও যেন লুংঠিয়া বইহারের বিস্তীর্ণ বন্যকুলের জঙ্গলে সে দরিদ্র । মেয়েটি তার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে লইয়া বন্যকুল সংগ্ৰহ করিয়া তাহার দৈনন্দিন সংসারযাত্রার ব্যবস্থায় ব্যস্ত। নয়ত জ্যোৎস্না-ভরা গভীর শীতের রাত্রে সে আমার k পাতের ভাত লইবার আশায় আজমাবাদ কাছারির আরণ্যক শ্ৰীবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় --- প্রাঙ্গণের এক কোণের ইদারাটার কাছে দাড়াইয় আছে । মনে হয় ধাতুরিয়ার কথা-নাটুয়া বালক ধাতুরিয়া !-- দক্ষিণ দেশে ধরমপুর পরগণার ফসল মারা যাওয়াতে ধাতুরিয়া নাচিয়া গাহিয়া পেটের ভাত জুটাইতে আসিয়াছিল লকট্রলিয়া অঞ্চলের জনবিরল বন্তগ্রামগুলিতে-চীন ঘাসের । দানা ভাজ। আর আথের গুড় খাইতে পাইয়া কি খুশীর হাসি দেখিয়াছিলাম তার মুখে ! কোকৃড়া কোকৃড়া চুল, ডাগর চোখ, একটু মেয়েলি ধরণের ভাবভঙ্গী, বছর তেরচোদ্দ বয়সের স্বত্র ছেলেটি ; সংসারে বাপ নাই, মা নাই, কেহ কোথাও নাই, তাই সেই অল্প বয়সেই তাহাকে নিজের চেষ্টা নিজেকেই দেখিতে হয় সংসারের স্রোতে কোথায় ভাসিয়া গেল আবার... মনে পড়ে সরল মহাজন ধাওতাল সাহকে। আমার খড়ের বাংলোর কোণটাতে বসিয়া সে বড় বড় সুপারি জাতি দিয়া কাটিতেছে। গভীর জঙ্গলের মধ্যে ছোট কুঁড়েঘরের ধারে বসিয়া দরিদ্র ব্রাহ্মণ রাজু পাড়ে তিনটি মহিষ চরাইতেছে এবং আপন মনে গাহিতেছে— प्र ८शङ्के खौ মহালিখারূপের পাহাড়ের পাদদেশে বিশাল বনপ্রান্তরে বসন্ত নামিয়াছে, লব টুলিয়া বইহারের সর্বত্র হলুদ রঙের গোলগোলি ফুলের মেলা, দ্বিপ্রহরে তাম্রাভ রৌদ্রদগ্ধ দিগন্ত বালির ঝড়ে ঝাপস, রাত্রে দূরে মহালিখারূপের সাহাড়ে আগুনের মালা, শালবনে আগুন দিয়াছে। কত অতি দরিদ্র বালকবালিকা, নরনারী, কত দুর্দান্ত প্রকৃতির মহাজন, গায়ক, কাঠুরে, ভিখারীর বিচিত্র জীবনযাত্রার সদে পরিচয় হইয়াছিল। অন্ধকার প্রাস্তরে খড়ের বাংলোয় বসিয়া বন্য শিকারীর মুখে অদ্ভূত গল্প শুনিতাম, মোহনপুর রিজার্ভ ফরেষ্টের মধ্যে গভীর রাত্রিতে বন্য মহিষ শিকার করিতে গিয়া ডালপালা-ঢাকা গৰ্ত্তের ধারে বিরাটকায় বন্য মহিষের দেবতাকে তারা দেখিয়াছিল ।