পাতা:প্রবাসী কার্তিক ১৩৪৪ সংখ্যা ৭.pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سو چ প্রবণসী ১৩৪৪ ৷ অমৃথটা করল ? তা বেশ, তাদেরও কথা থাক, আমারও কথা থাক। পূজোর তত্ত্বটি আগেভাগে ভাল ক’রে পাঠিয়ে দিন, দিয়ে মেয়ে নিয়ে গিয়ে যত খুশী সোহাগ করুন।” পটুরাণীর এ-সব ঝগড়াঝাটি তর্কাতর্কি ভাল লাগে না, ল ভাড়াতাড়ি নিজের সেলাই গুটাইয়া লইয়া সেখান হইতে প্রস্থান করিল। শশিনাথ বলিলেন, “তবে তাই লিখে দিই?" গৃহিণী বলিলেন, “হ্যা, সেই কথাই ভাল ক’রে গুছিয়ে লেখ । আমাদের কি কেউ ছেড়ে কথা কয় যে আমরা যাব লোককে দয়া করতে ? এই পূর্ণিকে তত্ত্ব করতেই আমার একশ টাকা থ’সে যাবে। না হলে মেয়ের খোয়ারের একশেষ হবে । আমি পাচ্ছি কোথায় ? আমরাও ত নবাব-বাদশা নই ? মেয়ে গর্ভে ধরলে অত পয়সা বাচানো চলে না।” কৰ্ত্ত চলিয়া গেলেন, যাইতে যাইতে জিজ্ঞাসা করিলেন, “হেম ফিরেছে নাকি ? বড় বৃষ্টি আসছে।” স্বরবালা বলিলেন, “কে জানে, আমি ত আসতে দেখিনি। আ বৌমা !” * কপাল পর্য্যন্ত ঘোমটা টানিয়া একটি উনিশ-কুড়ি বছরের মেয়ে পাশের ঘরের দরজার কাছে আসিয়া দাড়াইল । স্বরবালা জিজ্ঞাসা করিলেন, “হেম ফিরেছে ?” বধু মাথা নাড়িয়া জানাইল যে স্বামী আসেন নাই । "তা আসবে কেন ? তাহলে যে জলে ভিজে সর্দিজরটা হয় না ?” বলিতে বলিতে সুরবাল ভাড়ার ঘরের দিকে চলিয়া গেলেন। গৃহিণীর চেহারাপানি বেশ দশাসই, রংটা এককালে ফরশাই ছিল বোধ হয়, এখন তামাটে হইয়া গিয়াছে। চুল এখনও পিছনে নিতান্ত মন্দ নাই, তবে সামনের দিকে টাক পড়িতে আরম্ভ করিয়াছে, বেশ চওড়া করিয়া সিদুর পরিয়া সে সুখদুকু তিনি ঢাকা দিবার চেষ্টা করেন। গলার আওয়াজটিও তাহার চেহারার সঙ্গে মানানসই। একবার মুখ খুলিলে কাহারও বুঝিতে বাকী থাকে না যে স্বরবাল কোন বিষয়ে মতামত প্রকাশ করিতেছেন। কাজেই বেহাইয়ের অমুখ সম্বন্ধে তাহার মন্তব্যগুলি হনয়নীর কানে বেশ স্পষ্ট হইয়াই পৌছিল। তাহার বড় বড় চোখদুটি জলে ভরিয়া উঠিল, অবাধ্য অধরও কঁাপিয়া কঁপিয় উঠতে লাগিল। জানালার পাশে সরিয়া দাড়াইয় সে প্রাণপণে চেষ্টা করিতে লাগিল অশ্র সম্বরণ করিতে। শ্বশুরবাড়ীতে তাহার কান্না দেখিবার জন্য বসিয়া আছে কে ? সে ত এখানে রক্তমাংসের মানুষ বলিয়া গণ্য হয় না, সে কেবলমাত্র বধু। তাহার প্রতিপদে ক্রট, তাহার ভালটুকুও ইহাদের চোখে মন্দ হইয়া দেখা দেয়। স্বামী মুখে মধ্যে মধ্যে সাত্বনা দেন বটে, কিন্তু কাৰ্য্যত কিছু করিবার ক্ষমতা তাহার আছে বলিয়া ত বোধ হয় * পরের একটা মেয়ে, তাহার পক্ষ লইয়া নিজের আত্নীস্বজনকে কথা বলা, এ তাহাদচিন্তারও অতীত। আজ রবিবার, থাইয়া-দাইয়া একটুখানি গাইন লইয়া, হেমেন্দ্র বন্ধু-বান্ধবের সন্ধানে বাহির হইয়া দিছে। আজ রাত্রের খাওয়াদাওয়া অনেক রাত করিয়াই য়ৰ, কাজেই সন্ধ্যাবেলা স্থনয়নীর খানিকক্ষণের ছুটি মিলিয়ছে। স্বরবালার সংসারের নিয়ম বিকালের রান্নাও সকালে সৱি রাখা, ঠিক সকালে না হোক অন্ততঃ দুপুরের মধ্যে ন্ত নয়। দুই বেলা সমানে কয়লা পোড়ানোর পক্ষপাতিনী তিনি মন স্বামী কিছু হাজার টাকা রোজগার করেন না, বল্প সঞ্চ ছাড়াইতে চলিল, দেড়শ টাকা পৰ্য্যস্ত র্তাহার भूक्षम । কতকালই বা তিনি চাকরি করিতে পাইবেন ? মই মধ্যে ছপয়সা গুছাইয়া না রাখিলে মেয়ের বিবাহ ও কেমন করিয়া ? তবু ত ঋণ না করিয়া পারা গেল না। ছেলে ত যা রোজগার করেন, তা তাহার নিজের হান্তৰত্ন । করিতেই ফুরাইয়া যায়। নিজের ও স্ত্রীর কাপড়লেগ । ঔষধপথ্যের ভারও অবহু তাহার ঘাড়ে। বাড়ীতে সংৰক্ৰিয় | ইলেকটিক বাতি সে-ই আনিয়াছে, খরচটাও সে-ই নে। ইহা ভিন্ন টানাটানি পড়িলে পাচ টাকা দশ টাকা যখন মঞ্জ পারে তাহা দেয়। কিন্তু এগুলি গৃহিণী ধৰ্ত্তব্যের মধ্যে আনেন না । এক মেয়ের বিবাহ হইয়া গিয়াছে, আরএকটিও মায়ের কাধ পৰ্য্যস্ত বাড়িয়া উঠিয়াছে, সেটকে বড় জোর আর দু-এক বছর রাখা যাইবে। ইহারই ভিতর বিবাহ দিবার টাকা আসিবে কোথা হইতে ? মৃত ভাৰেন ততই স্বরবালার মেজাজ খারাপ হইয়া যায়, এবং পরের ৰে মেয়েটিকে তাহার বাপ-মায়ের দায়মুক্ত করিয়া তিনি নিজে ঘরে আনিয়া তুলিয়াছেন, তাহার উপর মনটা বিরূপ হই ।