পাতা:প্রবাসী ভাদ্র ১৩৪৪ সংখ্যা ৫.pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سر ۵۱o প্রবাসী ゞ88 এইরূপে পুত্র, বিত্ত, ব্রাহ্মণজাতি, ক্ষত্রিয়জাতি, স্বর্গাদি লোক, দেবতা, নানা প্রাণী, সৰ্ব্ববস্তু, এই সমস্ত এই সমস্তের প্রতি প্রীতি বশত: প্রিয় হয় না, আত্মপ্রীতির জন্যই, আত্মার সুখও শ্রেয়ের সাধনরূপেই, প্রিয় হয়। যে সকল বস্তু আত্মার বা শ্রেয় সাধনের উপযোগী বলিয়া বোধ হয় না, সে সকলের প্রতি প্রীতি আকৃষ্ট হয় না, বরঞ্চ ঘৃণা বা উপেক্ষাই হয়। কিন্তু আত্মজ্ঞান ও আত্মার সঙ্গে বিষয়ের সম্বন্ধজ্ঞান যতই স্পষ্ট ও উজ্জল হয় ততই দেখা যায় কোনও ব্যক্তি বা বস্তুই আত্মার অতিরিক্ত নয় এবং আত্মস্থ ও আত্মশ্রেয়ের প্রতিকুল নয়। স্বতরাং আত্মজ্ঞানের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে আত্মপ্রেমও প্রসারিত হয় এবং ক্রমশ: “আত্মনস্তু কামায় সৰ্ব্বং প্রিয়ং ভবতি”—আত্মপ্রীতি বশত: সকলই প্রিয় হয়, কেহই ঘৃণার পাত্র থাকে না, “ততে ন বিজুগুপাতে” । ( ঈশা ৬ )। আত্মবিকাশের নিম্নাবস্থায় কেবল নিজ পরিবারের ব্যক্তিদিগকেই আপন মনে হয়। ক্রমশ নিজ বর্ণ, নিজ সম্প্রদায়, নিজ জাতি, নিজ দেশ, পর দেশ, সমগ্র মানবজাতি, প্রিয় হয়ে ওঠে । প্রেমের প্রসারের সঙ্গে প্রেমের স্বল্পত এবং গাঢ়তাও বাড়ে। প্রথমতঃ কেবল শারীরিক স্বথ-স্বাস্থ্যই প্রিয় ব’লে বোধ হয়। ক্রমশঃ বিদ্য, নৈতিক পবিত্রতা, নিঃস্বার্থ প্রেম, ভগবদ-ভক্তি প্রভৃতি স্বল্পতর, উচ্চতর বিষয়, প্রিয় হয়। অবশেষে একটি সৰ্ব্বাঙ্গীন উন্নতি বা মুক্তির আদর্শ জীবনব্যাপী সাধনের বিষয় হয়ে আত্মার সমক্ষে দণ্ডায়মান হয় । এই তত্ত্ব সম্যকরূপে বুঝলে ব্রহ্মকে আর নিবিষয়, নিৰ্ব্বিশেষ, অচিন্তনীয়, অনিৰ্ব্বচনীয় সত্তামাত্র ব’লে বোধ হয় না। তিনি যেমন অন্তরতম, তেমনি প্রিয়তম হয়ে দাড়ান। যে আত্মপ্রেম পরপ্রেমরূপে, বিশ্বপ্রেমরূপে, বিকশিত হয়, তা তো ব্রহ্মেরই নিজপ্রেম, ব্রহ্মেরই জীবপ্রেম । জ্ঞানে যেমন জ্ঞাতৃ-জ্ঞেয়ের, বিষয়-বিষয়ার, ভেদাভেদ অবশুম্ভাবী, প্রেমে তেমনি প্রেমিক ও প্রেমপত্রের ভেদাভেদ অবশ্যম্ভাবী । একান্ত অভেদ, একান্ত নিৰ্ব্বিশেষ, যদি কোন বস্তু থাকৃতে, তবে তার থে, তার শ্রেয়, ব’লে কোন বস্তু থাকুতো না । মধ-সাধনের, শ্রেয়-সাধনের, এ ভিতরে ভেদাভেদ অবস্তম্ভাবীরূপে বৰ্ত্তমান। সসীম জীব, | * নিজ সুখ, নিজ শ্রেয় সঙ্কল্প ক'রে সাধনের চেষ্টা করে, তা ভুলে যায়, এমন ভাবে ঘুমিয়ে যায় যে কাৰ্য্যতঃ ভা ব্যক্তিত্ব কিছুই থাকে না, তার ভিতরে যদি সৰ্ব্বজ্ঞ, অভোল অনিদ্র, চিরজাগ্রত, পূর্ণ প্রেমিক পুরুষ না থাকতেন, তন সে পুনরায় জাগত না, তার সঙ্কল্প পুনরায় স্মরণ ইত্ব না, সঙ্কল্পসাধনের চেষ্টা পুনরারব্ধ হ’ত না, সঙ্কল্প সাষিতং হ’ত না। আমাদের জীবনের প্রত্যেক ঘটনায় এ জীব-ব্রহ্মের, পূর্ণ ও অপূর্ণের, ভেদাভেদ বৰ্ত্তমান। এ ভেদাভেদ-বোধ থাকাতেই আমাদের ধাৰ্ম্মিক আমাদের ধৰ্ম্মনিষ্ঠা, আমাদের আস্তিকতা ; আর এ বোধ না থাকাতেই আমাদের ধৰ্ম্মহীনতা, নিষ্ঠাহীন নাস্তিকতা । বিষ্ণুপুরাণ’, ‘ভাগবত প্রভৃতি বেদান্তমূলক ভক্তিত্ব সমূহে উপনিষদ-ব্যাখ্যাত আত্মপ্রেমকেই ভগবদ-শ্ৰীৰ ও ভগবদ-ভক্তিরূপে উপদেশ করা হয়েছে। কিন্তু এ আত্মপ্রেমকে যখনই নিবিষয়, নিৰ্ব্বিশেষ বলে হাৰ করা হয়েছে, তখনই ইহা প্রকৃত প্রেমভক্তির আক্ষা ছেড়ে নির্বিষয়, নিৰ্ব্বিশেষ, অচিস্ত্য, অনিৰ্ব্বচনীয় সত্তাময় লীন হবার ইচ্ছারূপে প্রকাশ পেয়েছে, আর এই ইচ্ছ: মুমুক্ষুত্ব, মুক্তির ইচ্ছা, রূপে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ষে মন্ত্ৰ পৌরাণিক বেদান্ত-ব্যাখ্যাতৃদিগের এই লয়বাদ বর্জন কং কাৰ্য্যতঃ বেদান্তই বর্জন করেছেন এবং প্রেমভক্তির সাং সসীম মানুষেই আবদ্ধ রেখেছেন, তাদের হাতে প্রেমভক্ত বিকৃত আকার ধারণ ক’রে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীং প্রভূত অনিষ্ট সাধন করেছে। বৈদাস্তিক ব্রহ্মবাদে གར་། རྩེ་སྭཱཧཱ། ། ভেদাভেদ দর্শন ক’রে ইহাকে ভক্তিসাধনের ভিত্তি ক্ষয় উক্ত উভয়বিধ অনিষ্ট পরিহার করা যায় । । বেদান্তম ভেদাভেদবাদই প্রকৃতপক্ষে ভক্তিধর্মের বীজ | এই বীজৰ কৰ্ম্ম, প্রেম, জ্ঞান, রূপ সাধনত্রয়দ্বারা পোষণ করলেই ভক্তিৰ পূর্ণরূপে বিকশিত হয়ে ব্যক্তিগত, জাতিগত ও অন্তর্জাড়ী জীবনকে সফল ও সার্থক করে । বিশুদ্ধ আত্মজ্ঞান আত্মগ্রেমে, যতই অগ্রসর হওয়া যায়, ততই ঈশ্বরকে আং হ’তে অধিকতর অন্তর, স্বন্দর ও মধুর বলে অনুভূত । এবং এই আন্তৰ্য্য, সৌন্দর্য্য ও মাধুর্য্য মানবপ্রেমে প্রসাৰৰ হয়। ফলতঃ ঈশ্বরপ্রেম ও মানবপ্রেম মূলে একই বৰ সাধনক্ষেত্রে একে অন্যে চিরসঙ্গী, চিরসহায় ।