পাতা:প্রবাসী ভাদ্র ১৩৪৪ সংখ্যা ৫.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রিলে পিঠে দুই-চার ঘা বসাইয় দিয়া তাহদের বাড়ীর বারি বরিয়া দেওয়া যায়। ঘরের ভিতর যে দুরন্তপন। স্বদন্ত বোধ হয়, খোলা মাঠে, পুকুর-ঘাটে, জমিদারের পুরানো আমবাগানটায় তাহ দিব্য মানাইয়া যায়, কাহারও গায়ে তাতে ফোস্ক পড়ে না। টনি আর চিনির হাত পা ড়িয়া, মাঝে মাঝে কাটিাও যায়, পরনের ভূরে বাড়ীতে অনেক জায়গায় খোচা লাগে, ধূলাকণদায় মাখামাখি স্ট্রা সেগুলি পরার অযোগ্যও হইয়া যায়, কিন্তু এসব লইয়া কেহ মাথা ঘামাইতে বসে না। দুপুরবেলা মাদের সঙ্গে পুকুরঘাটে গিয়া স্নান করিয়া তাহারা আবার বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হইয়া আসে, কাদামাখা শাড়ীগুলিও মারের লক্ষ্মী-হস্তের স্পর্শ পাইয়া আবার শাদা ধবধবে হইয়া উঠে। টিনির বয়স হইবে বছর সাত, চিনি এখনও পাচের গণ্ডীপার হয় নাই। টিনির বড় ভাই গোপাল তাহার চেয়ে অনেক বড়, বছর চোঁদ তাহার বয়স হইবে। গ্রামের স্কুলের পড়া তাহার শেষ হইয়া গিয়াছে, বেলা আটটায় ভাত খাই। সে পাশের গ্রামের হাইস্কুলে পড়িতে যায়, বেলা একেবারে গড়াইয়া গেলে তবে ফিরিয়া আসে। গোপালের পর মল্লিক-গৃহিণীর যে-মেয়েটি হইয়াছিল, বাচিয়া থাকিলে সে এতদিনে বারো বৎসরের হইত। মৃণাল মল্লিক-মহাশয়ের ছোট বোন শৈলজার মেয়ে । তাহার পাঁচ বৎসর বয়সে মা মারা গিয়াছে। বাবা গামোহন বছর দুই পরেই আর একটি বিবাহ করিয়া বদি, ভাঙা সংসার আবার পূর্ণ বিক্রমে জোড়া লাগাইতে সমর্থ হইয়াছেন। দ্বিতীয়া গৃহিণী অনেক ছেলেমেয়ের মা । মৃণালকে এই নূতন সংসারে মানায় না। নূতন মাও তাহাকে খুব বেশী স্থনজরে দেখেন না। মা মারা যাইবার পর সে মামার বাড়ীতেই মানুষ হইতেছিল। প্রবাদ-বাক্যের মামীর মত হুড়ক ঠ্যাদা দিয়া গালকে তাহার মামীম আপ্যায়িত করিতেন না, বরং শাস্তশিষ্ট বলিয়া এই মেয়েটির প্রতি তাহার একটা পক্ষপতেই ছিল। মৃণাল দেখিতে স্বন্দরী নয়, অন্ততঃ বাঙালীর ঘরে তাহাকে কেহ স্বন্দরী বলিত না, কারণ তাহার রংটা ছিল হামবর্ণ। বিবাহের সময় মৃণাল যে আত্মীয়স্বজনকে অথৈ জলে ফেলিয়া দিবে এ-বিষয়ে সকলে একমত। __ - মাটির বাস। তবু মামা মামী এই হ্যামবর্ণ মেয়েটিকে আন্তরিক স্নেহ করিতেন। দ্বিতীয় বার বিবাহ করিবার পর মৃগাঙ্কমোহন চক্ষুলজ্জার খাতিরে একবার মৃণালুকে লইয়। যাইতে আসিলেন । মৃণালকে পাঠাইতে মামা মামীর একেবারেই ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু যাহার মেয়ে সে যদি জোর করে তাহা হইলে তাহারা ধরিয়া রাখেন কি করিয়া ? অনেকখানি ভয়মিশ্রিত কৌতুহল লইয়া মৃণাল তাহার বাবার সঙ্গে নূতন মায়ের সংসারে আসিয়া ঢুকিল । সংমা অবহু উপকথার সৎমার মত এক গ্রাসে সতীনঝিকে থাইয়া ফেলিতে চাহিলেন না, তবে খুব যে তুষ্ট হইলেন তাহাও নয়। যথেষ্ট বয়সে তাহার বিবাহ হইয়াছিল। আসিয়াই যাহাতে ঘরের গৃহিণী হইতে পারে সেই রকম বয়স্থা মেয়ে দেখিয়াই মৃগাঙ্ক বিবাহ করিয়াছিলেন। প্রিয়বালা আসিয়াই ঘর-সংসার বুঝিয়া লইলেন। বেশ সম্পন্ন সংসার, বাড়ীখানা মৃগাঙ্কের নিজের, আবহু পাকাবাড়ী নয়। গোয়ালে গরু, মরাইয়ে ধান, ঘরের ভিতর জিনিষপত্র সবই আছে। তবে গৃহিণী-অভাবে সংসার বিশৃঙ্খল। সতীন যেন প্রিয়বালার জন্য সংসার পাতিয়া দিয়া চলিয়া গিয়াছে। প্রিয়বালা নিপুণ হাতে ঘরগৃহস্থালী সাজাইতে লাগিলেন । এ তাহার এক রকম ভালই হইল । অতি-দরিদ্র ঘরের মেয়ে তিনি। তাহার বাপ-মা এতই গরীব যে এই অতি সাধারণ গৃহস্থ ঘরে আসিয়া পড়িয়াই প্রিয়বালার মনে হইতে লাগিল কত যেন ধন-ঐশ্বর্ঘ্যের ভাণ্ডারে আসিলেন । তাহার রূপ ছিল না, বিদ্যাও ছিল না। নিতান্ত দ্বিতীয় পক্ষের বিবাহ বলিয়াই সুগন্ধমোহন অমন ঘরে বিবাহ করিলেন, না হইলে ফিরিয়াও তাকাইতেন না। তাহার আশা ছিল যে কৃতজ্ঞতার খাতিরে অন্তত: নূতন বেী মৃণালকে একটু স্থনজরে দেখিবেন। কিন্তু “যে-বেটী সতীনে পড়ে, তারে বিধি ভিন্ন গড়ে ।” মৃণালকে দেখিয়াই প্রিয়বালার মনে স্বপ্ত সতীন-বিদ্বেষ জাগিয়া উঠিল । মৃণালের ম-ই, এ-সংসার পাতিয়া গিয়াছেন, এখনও তাহার হাতের চিহ্ন এ-সংসার হইতে মুছিয়া যায় নাই। কত তৈজসপত্র, কত ছোট বড় জিনিষ, ৭১৩ .

->