পাতা:প্রবাসী ভাদ্র ১৩৪৪ সংখ্যা ৫.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

| " করিয়া আসিল । আছেন। কি কৌশলে তাহার নিকট সিনেমা বা ফুটবল খেলা দেখিবার টিকিটের পয়সা আদায় করিয়া লওয়া যায় সেটা তাহারা এত দিনে ভাল ভাবেই অভ্যাস করিয়াছে, এবং ছেলেদের এই সব ছোটবড় উপদ্রব সহ করিবার মত উৎসাহ এবং অধ্যবসায় সত্যবালার অাছে। হরিবাবু প্রতিবেশীদের সহিত ঘনিষ্ঠ হইবার চেষ্টা করিলেন। কিন্তু সে-ঘনিষ্ঠতার মধ্যেও কোথায় যেন ফাক থাকিয় গেল। প্রতিবেশীদের মধ্যাহ্ন এবং অপরাহ্লের দাবার আড্ডায় হরিচরণ বাবু নিঃসঙ্গ বোধ করিতে লাগিলেন। খেলিবার অধ্যবসায় তাহার ছিলই না, উপরন্তু মাত্র দুই জন খেলোয়াড়কে ঘিরিয়া আর আট-দশ জনের সহিত দল বাধিয়া দাড়াইয়া থাকিবীর উৎসাহও তিনি পাইলেন না। অর্থাৎ ইহাদের মধ্যে কাজকর্মের তাগাদ যাহাঁদের নাই, হরিবাবু দেখিলেন তাহারা আলস্য এবং কৰ্ম্মবিমুখত কেমন অনায়াসে অভ্যাস করিয়া ফেলিয়াছে। খবরের কাগজের পাতায় আইন-আদালতের বিচিত্র বিবরণগুলি পড়িতে পড়িতে সমস্ত সকালট কাটাইয়া দেওয়া ইহাদের পক্ষে যেমন সহজ, খবরের কাগজ যেদিন হাতের কাছে মেলে না, সেদিন অমুক সরকার হইতে অমুক বস্তুর কলঙ্কের অাতুমানিক কাহিনীর বিচিত্ৰতর রস উপভোগ করিতে করিতে সময় কাটাইয় দেওয়াও তাহীদের পক্ষে কঠিন হয় না । কিন্তু ত্রিশ বছর ধরিয়া হরিচরণ বাবু ঠিক ইহার উন্ট দিকে চলিয়া আসিয়াছেন, সুতরাং যাহাদের তিনি নিকটে আনিবার চেষ্টা করিলেন, তাহারা তাহাকে দূরে রাখিয়া দিল । খবরের কাগজের উপর হরিচরণবাবুর আস্থা ছিল না। ভৰু সেদিন সকালে উঠিয়া তিনি সেজ ছেলেটাকে ডাকিয়া বলিয়া দিলেন, আজ থেকে ইংরিজী কাগজ একখান রোজ আমার চাই, বুঝলি ? বেশী কোন কথা বলিবার প্রয়োজন ছিল না । ছেলেটি তখনই পয়সা লইয়া চুটিয়া বাহির হইল, নগদ দামে একথান কাগজ কিনিয়া জানিল এবং আগামী কাল হইতে রোজ সকালে বাড়ী বসিয়া যাহাতে কাগজ পাওয়া যায় তাহার প্রবাসী ՏՀ88 হরিচরণ বাবু সেদিন সমস্ত দুপুর বিছানায় পড়িয়া কাণৰ পড়িলেন । প্রবন্ধগুলিও এক সময় ফুরাইয়া গেল, এমন কি ‘ওয়াস্টেভ কলম এবং বিজ্ঞাপনগুলি পৰ্য্যন্ত তিনি বাদ দিলেন না। পরদিন সকালে কাগজওয়ালার ডাক শুনিয়া হরিচরণবাবু বাহিৰে আসিতেছিলেন, হঠাৎ তাহার মনে হইল, ডান পারে হাটুর কাছটা যেন কন কন করিতেছে । ঠাণ্ডায় বা শুইবার দোষে এমন হওয়া বিচিত্র নয় মনে করিয়া হরিচরণবাৰু ব্যাপারটা গ্রাহ করিলেন না ; বাহিরে গিয়া কাগজওয়ালা। সহিত কথাবাৰ্ত্ত কহিলেন এবং কাগজ লইয়া পড়িতে স্তত্ব করিলেন। বেলা বাড়িতে লাগিল, কিন্তু হাটুর ব্যা কমিবার কোন লক্ষণই দেখা গেল না। হরিচরণ বাৰু মুখে চিন্তার ছায়া পড়িল । কিছুক্ষণ তিনি রোদে গ ছড়াইয়া চুপচাপ বসিয়া রহিলেন, তার পর চাকরটাকে ডাকিয়া হুকুম দিলেন ভাল করিয়া তেল ব্যথা কিন্তু গেল না । দুপুরবেলায় সত্যবালার সহিত দেখা হইল। সেই মাত্র ভাড়ার-ঘরে চাবি দিয়া তিনি লেপের ওয়াড় শেলাই করিতে বসিয়াছেন । হরিচরণ বাবু বিমর্ষ, করুণ মুথে তাহার নিকটেই বসিয়া পড়িলেন। এমন ব্যাপার অনেক দিন হয় নাই । সত্যবালার লজ্জা করিতে লাগিল । হরিচরণ বাবু সবিস্তারে পায়ের ব্যথার ইতিহাসটা তাহার কাছে খুলিয়া বলিলেন। তিনি মনে মনে কল্পন খবরগুলি একে একে পড়া হইল, সম্পাদকী। মালিশ করিবার। করিয়া আসিয়াছিলেন যে তাহার হাটুর এই কষ্টকর অবস্থান কথা শুনিয়া সত্যবালা আতঙ্কে বিহবল হইয়া পড়িবেন, এখনই ডাক্তার ডাকিবার জন্য ব্যস্ত হইয়া উঠিবেন। কিন্তু সেরকম কোন লক্ষণ দেখা গেল না । সভ্যবালা বলিলেন, দিন-রাত বাড়ী বসে থাকলে এমনি eয় বইকি মানুষের। দেখ দেখি, বাড়ুজ্যেদের বড়কৰ্ত্তাকে। বয়সে তোমার চেয়ে দু-দশ বছরের বড়ই হবেন, তবু রোজ সকলে উঠে পায়ে হেঁটে যান গঙ্গামান করতে। মাহুষের নড়াচড়া একটু চাই-ই, নইলে বাতে ধরবে যে ! মে-জাশঙ্কাট। হরিচরণ বাবু এতক্ষণ সযত্নে এড়াইয়া চলিতেছিলেন, সত্যবালার মুখের কথায় সেটা যেন একেবারে - স্পষ্ট হইয়া উঠিল । হয়ত শেষ পৰ্য্যস্ত র্তাহাকে বাতেই ধরিল, নিশ্চয় করিয়া কিছুই বলা যায় না ! -