পাতা:প্রবাসী ভাদ্র ১৩৪৪ সংখ্যা ৫.pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

エ অলখ-বোগরণ ৭০১ কোন অন্তধাচরণ নাই, কোন মানুষ কি জীবের অমঙ্গল কামনা নাই, তাহ এক মুহুর্ভে তাহারই মনের কাছে এমন অপরাধ হইয়া উঠিল কেন ? কেন ইহা হইতে মুক্তির উপায় সে ধুজিয়া পাইতেছে না ? শৈশবের স্বপ্নে একদিন যেমন সে তলাইয়া গিয়াছিল, তাহার এ ীেবন-স্বপ্নেও সে তেমনই করিয়া ডুবিয়া যাইবে বলি কত মায়ায়, কত সাধে, কত রহস্তে ইহাকে সে অপূৰ্ব্ব বরিদ গড়িয়া তুলিতেছিল। এই প্রথম ধাপের পর হয়ত কত দীর্ঘ দিনের দীর্ঘ পথ পড়িয়াছিল বিস্ময়ে আনন্দে ও দৌন্দর্ঘ্যে অপরূপ। কিন্তু মরীচিকার মত কোথায় মিলাইয়৷ বাইতেছে সে স্বপ্ন কাননেন ছায় ? তপনের মনে মৃধা কি হৈমন্তী কাহার ও সম্বন্ধে কোনও চিন্ত উঠিয়াছে কি না, জীবনে সঙ্গীর কোন প্রয়োজন কি জাহান সে অনুভব করিয়াছে কি না মৃধা কিছুই জানে না। হইতে পারে সে এ-বিষয়ে কিছু ভাবে না, যদিও স্বধার সেকথা বিশ্বাস হয় না। তবে যাহার ধ্রুব প্রমাণ সে কিছু পায় aাই তাহ বিশ্বাস করিতে চেষ্টা করাই ভাল। হইতে পারে এহেন্দ্রের মত সেও ওই উপকথার রাজ-কন্যাটিকে দেখিয়া দুগ্ধ হইয়া ভালবাসিয়াছে। স্বধা তাহ জানিবার জন্য ব্যগ্রতা দেখাইবে না। আপনি যখন তাহা সুধার নিকট প্রকাশ হইবে তখন ত সে জানিতেই পারিবে । ভোরবেলা কখন বিছানা ছাড়িয়া হৈমন্তী চলিয়া দিছিল, ভোরের সামান্ত একটু ঘুমের মধ্যে সুধা তাহা ভানিতে পারে নাই। সকালে বিছানা হইতে উঠিয়া এই সব চিন্তায় ঘরের বাহির হইতে তাহার দেরী হইয়া গিছিল। তাড়াতাড়ি তৈয়ারী হইয়া লইয়। সে বাহির হইদ পড়িল। হয়ত নীচে কাজকৰ্ম্ম মুরু হইয়া গিয়াছে, কত লোকজন আসিয়া পড়িয়াছে। হয়ত তপন নিথিলরাও সাদিয়া কাজে লাগিয়াছে । সে সকলের চেয়ে দেরী করিয়া নীচে নামিলে লোকের কাছে বলিবে কি ? সকলেই কাজে ব্যস্ত দেখা গেল। কিন্তু আজ কেহ কাহারও সঙ্গে কথা বলিতেছে না। হৈমন্তী তরকারি কোটায় মোটেই অভ্যন্ত নয়। হয় লেখপড়ার কাজ, নাছয় ঘর সাজানো, এই দুইটার একটাতেই তাহার হাতযশ বেণী। কথা ছিল বাসরঘর সাজাইবার ভার সে লইবে, তাহার কথামতই ছেলেরা ঘর সাজাইবে । কিন্তু অকস্মাৎ সকালে উঠিয়া সে বলিল, “আমার অত হুড়োছড়ির কাজ ভাল লাগছে না। আমি এক জায়গায় বসে তরকারি কুটি। স্নেহ এসেছে, ওর বেশ টেষ্ট আছে, ওই ঘর সাজাতে সাহায্য করতে পারবে ।” অগত্যা তপন স্নেহলতার সাহায্যেই ঘর সাজাইতে লাগিয়াছে। যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ সারিয়া সে চলিয়া যাইবে। আজ এ-বাড়ী বেশীক্ষণ সে থাকিবে না, স্বরেশের বাড়ীতে বরযাত্রীর আদর-অভ্যর্থনার কাজেও তাহার প্রয়োজন আছে। সেখানে কাজ করিবার মাহুষ বিশেষ কেহই নাই। এত দিন সকলে মিলিয়া মেয়ের বাড়ীর কাজে মাতিয়াছিল, একটা দিন অন্ততঃ কিছুক্ষণ বরের বাড়ীর কাজও করা দরকার। বিবাহ ব্যাপারে কন্যার স্থান যতই উপরে হউক, বরের অন্ততঃ সভা জণকাইয়া একবার আসার আয়োজনমত আছে ৷ সভায় চেয়ার সাজানো ও কার্পেট পাতার কাজে নিখিলের খুব যে প্রয়োজন ছিল তাহা নয়, কিন্তু সে গিয়া জুটিয়াছে সেইখানে। যত মুটের মাথা হইতে চেয়ার নামাইয়া ও কাপেটের রোল খুলিয়া সে ঘর্ষাক্ত হইয় উঠিয়াছে। হৈমন্ত্রীদের গ্রামের আত্মীয় আর দুই-তিনটি ছেলে তবিধি সহিত কাজে মাতিয়াছে ; মানুষগুলি একেবারেই অচেনা বলিয়া নিখিলের সঙ্কুচিত ভাবটা অনেকখানিই এখানে কাটিয়া গিয়াছে। মহেন্দ্র গিয়া মুরু করিয়াছে আহারের ঠাই করার কাজ । ছাত জুড়িয়া আসন পাত, ফুটা গেলাস বাছিয়া ফেলা, ছোট ছেলেমেয়ের ছেড়ান্যাকড়ায় করিয়া সব পতি মুছিয়াছে কিনা তদারক করা, এই সব নানা কাজ। এখানে বেশীর ভাগই কুচোকাচার দল। স্বধা আর সকলের অপেক্ষা মহেন্দ্রকেই আজ বেশ নিরাপদ মনে করিয়া এইখানেই গিয়া জুটিল । কিছুক্ষণ দুই জনেই নীরবে কাজ করিল। তার পর মহেন্দ্রই নীরবতা ভঙ্গ করিয়া বলিল, “আপনাদের সভায় আমিই ছিলাম হংস মধ্যে বকে যথা, এবার ৩ অামি চললাম, আপনার নিষ্কণ্টক হবেন ।” মৃধা বলিল, “এর মধ্যে আপনি আবার কোথায় ২ চললেন ?” !