পাতা:প্রবাসী ভাদ্র ১৩৪৪ সংখ্যা ৫.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳoՋ প্রবাসী ... মহেন্দ্র বলিল, “আমি খুব শীগগিরই জাৰ্ম্মাণী চলে যাচ্ছি। আগে মনে করেছিলাম কিছু দিন পরে গেলেও চলবে। এখন ভাবছি যত তাড়াতাড়ি যাওয়া যায় ততই ভাল। আপনার বন্ধুবান্ধবদের, জানিয়ে দেবেন তাদের চক্ষুশূল কেউ আর থাকবে না।” সুধা বলিল, “আপনি কি যে বলেন তার ঠিক নেই। আপনার সঙ্গে আমাদের কি ওই রকম সম্পর্ক ? আমার ত কোন দিন তা মনে হয় নি।” মহেন্দ্র বলিল, “আপনার না হতে পারে, আমারও এক সময় মনে হত না । কিন্তু এখন যতই দিন যাচ্ছে ততই সকলের য়্যাটিচুড দেখে তাই মনে হচ্ছে।” দুঃখের ভিতরও স্বধার হাসি আসিল । মহেন্দ্র “বন্ধুবান্ধব, সকলে’ ইত্যাদি সকল কথাতেই গৌরবে বহুবচন বসাইতেছে। কাজ ফেলিয়া সে একবার ভাড়ার-ঘরের দিকে চলিল । হৈমন্তী তাহাকে এড়াইয়া চলিতেছে সুধা বুঝিয়াছিল, তবু মহেন্দ্র-বেচারার বিদায়বাৰ্ত্তাটা তাহার নিজের মুখেই হৈমন্তীর শোনা উচিত মনে করিয়া সুধা তাহাকে একবার ছাদে ডাকিয় আনিবে ঠিক করিল। মস্ত বড় একটা পাকা কুমড়াকে দুইখানা করিবার চেষ্টায় হৈমন্তী তখন ব্যস্ত। পালিত-গৃহিণী তাহার কাজে বাধা দিতেছিলেন, কারণ স্ত্রীলোকের নাকি লাউ কুমড়া দুখান৷ করা শাস্ত্রে বারণ আছে । শাস্ত্রের কথা অমান্ত করিবার জন্যই হৈমন্তীর জেদ বেশী । স্থধা আসিয়া বলিল, “একবারটি উপরে এস দেখি । ছাদে একটা কাজ আছে।” কুমড়াটা তখনকার মত রাখিয়া হৈমন্তী কুধার পিছন পিছন চলিল। একবার সে জিজ্ঞাম্ববৃষ্টিতে স্বধার মুখের দিকে চাহিল, কিন্তু স্বধা কোনই জবাব দিল না। ছাদের দরজার পাশে চিলেকোঠায় মহেন্দ্র বড় বড় পালাস জল বোঝাই করাইতেছিল, উড়ে ভারীদের চাংকারটেগমেচিতে ছাদ তখন মুখরিত। অকস্মাৎ মৃধা ও হৈমন্তীকে সেখানে দেখিয়া মহেন্দ্র কুঠরির বাহিরে বাহির হইয়া আসিল । স্বধা বলিল, “জালার ভিতর একটা ক'রে কপূরের ছোট পুটলি ফেলে রাখলে কেমন হয় ? অনেকে বলে ওতে জন্ম সুগন্ধিও হয়, আর জলের দোষও কেটে যায় ” হৈমন্তী বলিল, “ভাল হয় বলেই ত আমারও মনে ठ्८घ्छ ।” “আচ্ছ, দাড়াও আমি কিছু কপূর জোগাড় কৰে আনি।” বলিয়া সুধা তখনই তাড়াতাড়ি সিড়ি নি নামিয়া গেল । স্বধা চলিয়া যাইতেই মহেন্দ্র বলিল, "হৈমন্তী, তুমি মেলি থেকে আমার সঙ্গে আর কথা বল না, আমার উপর ভূমি খুব রাগ করেছ, না ?” হৈমন্তী বলিল, “রাগ কেন করব ? রাগ আমি এ ফোটাও করি নি। আপনি কিছু অন্যায় কাজ ত আ করেন নি। আপনার সঙ্গে আমার যদি কোন বিষ্ণ মতভেদ হয় তাতে কিছু রাগ করবার কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।” মহেন্দ্ৰ হাসিয়া বলিল, “এটা ঠিক মতভেদ নয়। আমি তোমার দরজায় প্রার্থী হয়ে দাড়িয়েছিলাম, ভূR দরিদ্রের প্রার্থনা শুনতে রাজি নও এই তোমার আমাৰ ঝগড়া। কিন্তু তা ব’লে আর কি এদিকে ফিরেও তাকা না ?” হৈমন্তী বলিল, “আপনার সব বাড়াবাড়ি কথা। আমি রোজই ত আপনার সঙ্গে কথা বলছি। কোন দিন কং বলিনি বলুন।” মহেন্দ্র বলিল,"র্হ্য বল বটে, পাচফোড়নের একফোড়নে মত। ওটা আমার সঙ্গে কথা বলাও যত আর জেন গোয়ালার সঙ্গে বলাও তত । আমি কানে তোমার গল। স্বরটা শুনতে পাই, এতে যদি আমার সঙ্গে কথা বলা । তবে নিশ্চয়ই বল ।” হৈমন্তী মান হাসিয়া বলিল, “কি করব মহেন্দ্র-দ, আণনি আবার কিসে রাগ করে বসবেন ; তাছাড়া ওইরকম মন্ত্ৰ কথার পর আমার কি রকম অপ্রস্তুত লাগে আগের মন্ত ৰঞ্জ বক্‌ করতে।” মহেন্দ্র হঠাৎ কথার স্বর বদলাইয়া বলিল, "হৈমন্তী, ভূমি কি তোমার ভবিষ্যৎ ঠিক করে ফেলেছ ? আমার এক্ষটুকুর অন্তত ঠিক জবাব দিও।”