পাতা:প্রবাসী (অষ্টবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] কষ্টিপাথর—নাট্যোৎপত্তি 8`ළු নাম দেখিয়া বুঝিতে পারা যায় ভরত এইখানে নিজপুত্রদের নামচ্ছলে নানা নাট্যশাস্ত্রকায়ের মামোল্লেখ করিয়াছেন। কতকগুলি বাস্তবিকই নাট্যশাস্ত্রকারগণের নাম হইতে পারে, আর কতকগুলি কেবল মাত্র ভৌগোলিক নাম, কতকগুলি শ্লেষাত্মক এবং কতকগুলি ভাব ও রসের নাম মাত্র । এই সকল নাম পাঠ করিলে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে, ভরত এই স্থলে নানা নাট্যশাস্ত্রকারের নামোল্লেখ করিতেছেন, কারণ ভরতের পুত্রের নাম কখনই তাণ্ডায়নি বা সৈন্ধবায়ন হষ্টতে পারে না। অবশ্য বাদরায়ণ প্রভৃতিকেও ইহার মধ্যে টানিয়া আনিবার কারণ অনুমান করা দুষ্কর ; তবে বলা যাইতে পারে দার্শনিক বাদরায়ণ ভিন্ন অপর এক বাদরায়ণ হয় তো নাট্যশাস্ত্র সম্বন্ধে কোন গ্রন্থ লিখিয়া গিয়াছিলেন। - যাহাই হউক ভরত র্তাহার এই শত পুত্রকে নাট্যশাস্ত্র শিখাইয়া যোগ্যতা অনুসারে তাহাদিগকে নানা দিকে নিয়োজিত করিলেন এবং তাহা ভারতী, সাৰ্বতী ও আরভট এই তিন বৃত্তি শিখাইলেন । ভারতী বাগ বৃত্ত। পুরুষের সংস্কৃত ভাষায় বক্তৃতাচাতুৰ্য্যের নাম ভারতীবৃত্তি। পুরুষের গুণসমষ্টির নাম সাৰ্বতী বৃত্তি। অভিনবগুপ্ত বলিয়াছেন, “মনোব্যাপাররূপ সাত্ত্বিকী সাৰ্ব্বতী । সাৰ্বতী-বৃত্তি বলিতে প্রধানতঃ বীৰ্য্য, পৌরুষ প্রভৃতি পুরুষের গুণসমষ্টিকে বুঝায়। আরভটা' কথাটি লইয়া অভিনবগুপ্ত একটু মুস্কিলে পড়িয়াছেন। তিনি বলেন, “ইয়ৰ্ত্তী ত্যারভটা: সোৎসাহ অনলসাস্ত্যোমিয়মীরভটীকায়বৃত্তি:” অর্থাৎ যাহারা গমন করে তাহারাই আরভট। উৎসাহশীল, অনলস এই আরম্ভটদিগের গুণসমষ্টির নাম আরভটবৃত্তি ইহা কায়বৃত্ত্বি মাত্র। বস্তুতঃ নাট্যমধ্যে লম্ফ'বক্ষ ও যুদ্ধবিগ্রহ প্রভৃতি বীর রসের নামই আীরভটি । অভিধানে কিন্তু দেখিতে পাওয়া যায় “আরভ্যতে অনয় ইতি আরম্ভটা ।” এই তিনটি বৃত্তির নাম বড়ই অদ্ভুত, বাক্যের সহিত অর্থের কোন সম্বন্ধ নাই, কেবল টানিয়া বুনিয়া অর্থ করা হইয়াছে। মনে হয় তিনটিই প্রথমে ভৌগোলিক নাম ছিল। ভরত সাত্বৎ ও আর্যভট (অরট ? ) তিনটি জাতি ; তাহীদেরই মধ্যে প্রচলিত নাট্যপদ্ধতির সমন্বয়ে এই নাট্যশাস্ত্র গড়িয়া উঠিয়ছিল। কিন্তু ইহাতেই সম্পূর্ণ হয় নাই। ভরত উtহার শতপুত্রকে এই তিন বৃত্তি শিথাইলে বৃহস্পতি আসিয়া বলিলেন, ইহার উপর কৈশিকীবৃত্তিও শেখা দরকার এবং কে এই কৈশিকবৃত্তি প্রয়োগ করিতে সমর্থ তাহাও বৃহস্পতি ভরতকে জিজ্ঞাসা করিলেন। কৈশিকীবৃত্তি সম্বন্ধে ভরত বলিয়াছেন, “কৈশিকা প্লঙ্কনৈপথ্য শৃঙ্গাররসসম্ভবা” এবং অভিনবগুপ্ত বলিয়াছেন, “যৎকিঞ্চিালিতং তং সৰ্ব্বং কৈশিকৗবিজ স্তিতং” অর্থাৎ নাট্যমধ্যে লালিত্যসম্পন্ন যাহা কিছু আছে তৎসমুদয়ই কৈশিকৗধৃত্তি দ্বারা অনুপ্রাণিত। কৈশিকীবৃত্তিও শিক্ষা করিতে হইবে এই কথা শুনিয়া ভরত বলিলেন, “ভগবন, কৈশিকাবৃত্তি প্রয়োগ করিতে পারে এমন লোক আমার প্রদান করুন। নটরাজের নৃত্যকালে নৃত্যজহারসম্পন্ন, রস ভাব ও ক্রিয়াত্মক এই কৈশিকী বৃত্তি দেখিয়াছি ; পুরুষ তাহ প্রয়োগ করিতে অসমর্থ।” তখন ব্ৰহ্মা মানসিক বলের সাহায্যে অন্সরগণের স্বষ্টি করিলেন। এইখানে স্পষ্টই বুৰ৷ যাইতেছে যে, পূৰ্ব্বে নাট্যকলা কেবল মাত্র পুরুদিগের মধ্যেই আবদ্ধ ছিল ; পরে নারীগণও তাহাতে যোগদান করিয়াছিলেন। ভরতকর্তৃক প্রথমোক্ত তিনটি বৃত্তির মধ্যে নারীর স্থান নাই, বৃহস্পতি নির্দিষ্ট চতুর্থ কৈশর্কীবৃত্তির মধ্যেই কেবল নারীর স্থান আছে । ইহার মধ্যে আরও একটি লক্ষ্য করিবার বিষয় এই যে—পরবর্তী যুগে কৈণিকীবৃত্তিকে তৃতীয় এবং আরম্ভটি বৃত্তিকে চতুর্থ বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে ; কিন্তু নাট্যবেদ সম্বন্ধে অাদি গ্রন্থ এই ভারতীয় নাট্যশাস্ত্রে আয়তটি বৃত্তিকে তৃতীয় বৃত্তিরূপে উল্লেখ করা হইয়াছে এবং স্পষ্টই বলা হইয়াছে অপর তিনটি বৃত্তির প্রয়োগশিক্ষার পর বৃহস্পতির উপদেশে এই কৈশিকীবৃত্তি শিক্ষা করা হইয়াছিল । এইরূপে চতুবৃত্তি শিক্ষা করা হইলে স্বাতি শিল্পগণের সহিত বাদ্যযন্ত্রের ভার প্রাপ্ত হইলেন এবং নারদাদি গন্ধৰ্ব্বগণ গানে নিয়োজিত হইলেন। রামকৃষ্ণ কবি মনে করেন, স্বাতি একজন ঋষি ; অবস্থ এন্থলে স্বাতি নক্ষত্রও বুঝাইতে পারে। অতঃপর স্বাতিও নারদ কর্তৃক সমলস্কৃত বেদবেদাঙ্গ ; কারণ এই নাট্যবেদ শতপুত্রের সহিত সম্যক্ৰ হৃদয়ঙ্গম করিয়া ভরতমুনি ব্ৰহ্মার নিকট উপস্থিত হইয়া কৃতাঞ্জলিপূর্বক জিজ্ঞাসা করিলেন, “নাট্যশিক্ষা আমাদের সমাপ্ত হইয়াছে, এখন আমরা কি করিব ?" একথা শুনিয়া ব্ৰহ্মা বলিলেন, “তোমাদের এই নাট্যশাস্ত্র প্রয়োগের উপযুক্ত সময় উপস্থিত। ইত্রের ধ্বজেtৎসব হইতেছে ; ইহাতেই তোমরা নাট্যকলা দেখাইয়া দেবতাদিগকে পরিতুষ্ট কর। “অতঃপর সেই মহেন্দ্রবিজয়োৎসবে বহু অভ্যাগত দেবগণের সমক্ষে মঙ্গলাচরণ দ্বারা বিঘ্নাদি অপসারিত করিয় ভরতমুনি প্রথমে আশীৰ্ব্বচনমণ্ডিত, অষ্টাঙ্গপদ-সংযুত, বেদনির্শ্বিত বিচিত্র নানী উচ্চারণ করিলেন এবং তৎপরে স্বরগণ দৈত্যদিগকে কিরূপে পরাস্ত করিয়াছিলেন অভিনয় দ্বারা তাহাই দেখাইতে লাগিলেন। সেই অভিনয়ে পরিতুষ্ট হইয়া ব্ৰহ্মাদি দেবগণ ভরতের পুত্রদিগকে নানা দ্রব্য প্রদান করিলেন ; ইন্দ্র উহার শুভধ্বজ দিলেন, ব্ৰহ্মা দিলেন বিদুষকের কুটিলক দণ্ড, বরুণ দিলেন ভৃঙ্গার, স্বর্য দিলেন ছত্র, শিব দিলেন সিদ্ধি, বায়ু ব্যঞ্জন, বিষ্ণু দিলেন সিংহাসন, কুবের দিলেন মুকুট এবং সেই সভাস্থ আর আর যক্ষ, রাক্ষস ও পন্নগগণ নিজ নিজ অভিরুচি অনুসারে নানা গুণ প্রদান করিলেন এবং দেবতাগণ প্রহৃষ্ট হুইয়া রূপ, রস, ভাব ও ক্রিয়া প্রদান করিলেন । এইখানে আর একটি কথা আছে ; শ্রাব্যত্বং প্রেক্ষণায়স্ত দদৌ দেবী সরস্বতী । রামকৃষ্ণ কাব মনে করেন এই চরণদ্বয় প্রক্ষিপ্ত। কিন্তু প্রক্ষিপ্ত হউক আর নাই হউক ইহা হইতে স্পষ্টই বুঝা যায় যে, প্রথমে নাট্যে শ্রাব্যবস্তু কিছু ছিল না, ছিল শুধু দৃষ্ঠ বস্তু, অর্থাৎ নাট্য প্রথমে মৃত্যপ্রধান ছিল । সরস্বতী দেবী শ্রাব্যবস্তুর যোজনা করেন। অন্ত উপায়ে এই কথাই পূর্বে প্রমাণ করা হইয়াছে। (সঙ্গীতবিজ্ঞান-প্রবেশিকা, ' জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৫ ) ঐকালিদাস নাগ শ্ৰীবটকৃষ্ণ ঘোষ