পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

s. - ." প্রবাসী । .... - ভূগোল শিক্ষা। ভারতবর্ষে অধুনা রাজনীতির সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস চর্চার বৃদ্ধি পাইতেছে। ইহা স্বলক্ষণ বটে। কিন্তু সম্যকরূপে ইতিহাসচর্চা করিতে হইলে ভূগোল পরিচয়ের বিশেষ আবশুক। যদিচ প্রকৃতপক্ষে ইতিহাস জাতির বা লোকসমষ্টির, তথাপি জাতির বা লোকসমষ্টির সহিত তাহাদের বাসস্থান বা দেশের এত নিকট সম্বন্ধ যে চলিত কথায় অমুক জাতির ইতিহাস না বলিয়া অমুক দেশের (যথা ভারতবর্ষের বা জাপানের ) ইতিহাস বলিয়া থাকি। ফলতঃ জাতির নাম দেশের নাম হইতে সাধারণতঃ উদ্ভূত হইয়া থাকে। এই নিকট সম্বন্ধ চলিত কথায় স্বীকৃত হইলেও কার্যত: শিক্ষাকালে আমরা তত লক্ষ্য রাখি না। ইতিহাস চর্চার সময় দেশ, কাল ও পাত্র এই তিনের সম্বন্ধ স্পষ্টরূপে হৃদয়ঙ্গম না করিলে ইতিহাস চর্চার প্রকৃষ্ট ফল বা শিক্ষা লাভ হয় না। প্রাকৃতিক অবস্থার দ্বারা মানুষের দৈনিক কাৰ্যকলাপ অনেকটা নির্দিষ্ট হইয়া থাকে। অবস্থার তারতম্যে দৈনিক কাৰ্য্যকলাপের তারতম্য এবং সেই সঙ্গে মানসিক ধৰ্ম্মেরও প্রভেদ হইয়া থাকে। ইংলণ্ড ও রুষিয়ার প্রাকৃতিক বৃত্তান্ত জানিলে তদেশদিগের নেবল এবং অন্তান্ত বিষয়ে প্রভেদ থাকার কার্য্যকারণ সম্বন্ধ প্রভৃতি ঐতিহাসিক তধ্যের যথার্থ জ্ঞান হওয়া সম্ভব।

  • কেবল ইতিহাস চর্চার জন্য নহে, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা প্রভৃতি নানারূপ প্রাকৃতিক বিজ্ঞানচর্চার পক্ষেও ভূৰ্বত্তান্ত বিশেষ প্রয়োজনীয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে এইরূপ প্রয়োজনীয় বিস্তা, বাঙ্গালার এবং হিন্দুস্থানের অন্যান্ত স্থানের বিদ্যালয় সমূহে, যেরূপ প্রণালীতে শিক্ষা দেওয়া হয়, তাহা অতিশয় নীরস ও নিষ্ফল। পাঠ্যপুস্তক হইতে দেশ, নদী, পাহাড়, অধিত্যক, উপত্যক, প্রভৃতি নানা পদার্থের নাম কণ্ঠস্থ করান হয়। সেই সকল পদার্থের জ্ঞান জন্মাইবার বিশেষ চেষ্টা দেখা যায় না। ভূত্তান্ত সম্বন্ধে বিদ্যালয়ে জ্ঞান লাভ করা দূরে থাকুক ইহার উপর এরূপ বিতৃষ্ণ জন্মায় যে ভূবিষ্যতে জ্ঞান লাভ করিবার আকাঙ্গ পর্যন্তও উন্মলিত হয়। ভূগোল পাঠ শিক্ষা-প্রণালীর গুণে যে বালকদিগের পক্ষে বিশেষ চিত্তাকর্ষক এবং চিত্ত্বোৎকর্ষক

করা যাইতে পারে তাহ প্রমাণের চেষ্টা করাই এই প্রবন্ধের উদ্দেশু। সেই উদ্দেশ্বে জৰ্ম্মানি, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশের বিদ্যালয়ে কিরূপ ভাবে ভূগোল শিক্ষা দেওয়া হয় তাহার আভাস দেওয়া যাইতেছে। জৰ্ম্মানি দেশের পাঠশালায় ভূগোল শিক্ষার জন্ত মানচিত্র ব্যতিরেকে অপর কোনও পাঠ্য পুস্তক ব্যবহৃত হয় না। তদেশের রাজধানী বালিন মহানগরীর পাঠশালায় প্রচলিত প্রথম শিক্ষার্থীর মানচিত্রের নিম্নলিখিত বিবরণ পাঠে বুঝিতে পারা যাইবে যে কিরূপ পৰ্য্যায়ক্রমে শিক্ষা বিধান হয়। মানচিত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় দৃপ্ত এবং নকসা (views এবং map-plans) লইয়া ছয় খানি চিত্র আছে। প্রথম চিত্র "to (class room) To al perspective view ইহার পাশ্বেই দ্বিতীয় চিত্রে ঐ HAR R**T + map-plan (মান বা scale ১: ১• •)। তৃতীয় এবং চতুর্থ চিত্রে সমুদায় বিদ্যামন্দিরের দৃশু এবং নকসা (মান ১ ৩০০ )। ৫ম ও ৬ষ্ঠ চিত্রে বিস্তামন্দির এবং তন্নিকটবর্তী কতকগুলি গৃহ প্রভৃতি লইয়া বালিন সহরের একাংশের দৃপ্ত এবং নকস ( মান ১: ১৫০০ )। ২য় পৃষ্ঠায় তদপেক্ষা বৃহৎ স্থানের দৃশু এবং নকসা আছে। ইহাতে বিস্তামরিটও দৃষ্ট হয়। ৩য় পৃষ্ঠায় বৃহত্তর স্থানের দৃপ্ত এবং ন সা। ৪র্থ পৃষ্ঠায় সমুদায় বালিন সহরের নকসা (মান ১ ৩৬••• ) । ৫ম পৃষ্ঠায় বার্লিন নগরী ও নিকটবৰ্ত্তী চারিদিকের কতকগুলি স্থানের নকসা (scale ১: ১• • • • • )। ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠায় সমস্ত বালিন জেলার মানচিত্র বা নকসা ( মান ১: ১• • • • • • )। ৭ম পৃষ্ঠায় সমুদায় প্রদেশের প্রাকৃতিক ভূ-চিত্র। এই চিত্রে বার্লিন সচুরে যতগুলি রেলের রাস্তা গিয়াছে তৎসমুদায় অঙ্কিত আছে। ( মান ১: ১,২৬০,• • • )। ৮ম পৃষ্ঠায় ঐ প্রদেশের শাসনবিভাগসমূহ প্রদর্শিত আছে। ৯ম পৃষ্ঠায় জৰ্ম্মানি দেশের প্রাকৃতিক চিত্র। ১০ম পৃষ্ঠায় ঐ দেশের শাসনবিভাগের চিত্র। ১১শ পৃষ্ঠা—যুরোপ মহাদেশের প্রাকৃতিক চিত্র (physical map) । ১২শ পৃষ্ঠা যুরোপ মহাদেশের রাজ্য বিভাগ। ১৩শ পৃষ্ঠা—আসিয়া মহাদেশের চিত্র ( মান ১: ۹۰,۰ ۰ ۰,۰۰۰ ) | [ vभ उांश । - ১ম সংখ্যা । ] lA. -- ১৪শ পৃষ্ঠা—আফ্রিকার মানচিত্র। ১৫শ . —উত্তর আমেরিকার মানচিত্র। ১৬শ . —দক্ষিণ আমেরিকার মানচিত্র। ১৭শ *. —অষ্ট্রেলিয়া, ওখানিয়া ও ভিক্টোরিয়াল্যাণ্ডের আংশিক চিত্র। ইহাতে Coral reef বা প্রবাল শৈলমালার উৎপত্তির দৃষ্টান্ত আছে। . ১৮শ পৃষ্ঠা—প্যালেষ্টাইনের মানচিত্র। ইহার সাহায্যে খৃষ্টীয় ইতিহাস সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়া হয়। ১৯শ পৃষ্ঠা—পূৰ্ব্ব ভূগোলাৰ্দ্ধ। ২০শ . —পশ্চিম ভূগোলাৰ্দ্ধ। ২১শ . —প্রধান নক্ষত্র মণ্ডলী সম্বলিত উত্তর দিকের আকাশের চিত্র। ২২শ পৃষ্ঠা—স্বৰ্য্য-গ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ, পৃথিবীর বার্ষিক গতি, সৌর জগৎ, চন্দ্রের কলা প্রভৃতি চিত্রের দ্বারা প্রদর্শিত আছে। এইরূপ মানচিত্রে অনেক শুভ উদ্দেশু সাধিত হয়। ১ম-প্রাকৃতিক দৃশুমান পদার্থ চিত্রে প্রতিফলিত করিবার প্রণালী এবং ভূগোল ও মানচিত্রের পরস্পর সম্বন্ধ শিশুদিগের শীঘ্র ও সম্যক প্রকারে বোধগম্য হয়। ২য়— সাধারণ মানচিত্রে সমুদ্র, পৰ্ব্বত, নদী, রাজধানী, নগর প্রভৃতি বহুবিধ জ্ঞাত ও অজ্ঞাত পদার্থের বিষয় একত্র থাকাতে শিশুদিগের শিক্ষণীয় বিষয়ে মনোনিবেশের বাধা হয়; এবংঘংকিঞ্চিৎশিক্ষা দেওয়া হয় তাহাও পরিস্কটভাবে আয়ত্ত করা আরও দুরূহ হইয়া পড়ে। ৩য়—আমাদের পাঠশালায় ভূগোল শিক্ষার আরম্ভে অপরিচিত পদার্থের সংজ্ঞা, তৎপরে অপরিচিত স্থান, পৰ্ব্বত, নদী প্রভৃতির নাম কণ্ঠস্থ করান হয়। ভাগ্যক্রমে যদি কোন বালক কোন রাজধানীতে বা প্রধান নগরে বা বৃহৎ নদীর তীরে বাস করে তবে তাহাদের নাম পুস্তকে দেখিতে পায়। নূতন প্রণালীতে ইহার সম্পূর্ণ বিভিন্ন ভাবে শিক্ষা দেওয়া হয়। শিশুদিগকে পরিচিত পদার্থ হইতে আরম্ভ করিয়া ক্রমশ: অপরিচিত পদার্থের শিক্ষা দেওয়া হয়। তাহাতে শিক্ষণীয় বিষয় पूल्याङ्गड ना श्हेब्र छाडे अडौबमान श्य। ६४–न्ख्न প্রণালীর কার এক বিশেষত্বের উল্লেখ না করিলে ইহার গুণ ভাল বুঝিতে পারা যাইবে না। মুদ্রিত মানচিত্রের উপর ভূগোল শিক্ষা। ১১* ,


(পাঠ্য পুস্তকের মত) সম্পূর্ণ নির্ভর করা হয় না, কেবল ইহার সাহায্য লওয়া হয়। শিক্ষার প্রধান অঙ্গ কাল কাষ্ঠফলক (Black board)। বিদ্যামন্দির, নিকটবৰ্ত্তী ঘর, বাড়ী, রাস্তা, বাগান, ঝিল, প্রভৃতি আঁকিয়া লওয়া হয়। বিদ্যালয় গৃহ এবং বাগান আঁকিবার কালে শিশুরা ফিতা ধরিয়া মাপ জোপ করিয় Scale বা মান তৈয়ার করিয়া লয়। এই উপায়ে শিক্ষণীয় বিষয় বালকের মনে গভীর এবং স্থায়ী ভাবে খোদিত হইয়া যায়, এবং মানচিত্র অঙ্কনের শিক্ষার ভিত্তিও স্থাপিত হয়। নিয়ে কয়েকটি পাঠের সংক্ষিপ্ত উদাহরণ দেওয়া গেল। প্রথমে শিক্ষক মহাশয় উত্তর, দক্ষিণ, পুৰ্ব্ব, পশ্চিম এই চারিদিকের বিষয় বালকদিগকে বলিয়া দিবেন। তৎপরে একটি বালককে কাষ্ঠফলকের (কাষ্ঠফলক খানি পাঠগৃহের উত্তর দিকে বা দক্ষিণাভিমুখে থাকা উচিত ) মধ্যস্থলে ( বা শিক্ষক মহাশয়ের উদ্দেশানুসারে অন্ত কোন স্থলে) বিদ্যালয় গৃহ সন্নিবেশিত করিতে বলিবেন। শিক্ষক মহাশয় ক্রমে ক্রমে নিম্নলিখিত প্রকারে প্রশ্ন করিবেন। বিদ্যালয়ের দক্ষিণ দিকে কি আছে ? বাঃ—প্যারীচরণ সরকারের ষ্ট্রীট। ( যেমন যেমন উত্তর পাওয়া যাইবে তেমনি কাঠফলকে সন্নিবেশিত করিতে হইবে )। শি– তাহার দক্ষিণে কি ? বাং—যুনিভার্সিটি হল Fশিল্প-কলেজ ষ্ট্রীট বিদ্যালয়ের কোন দিকে ? বাং—পুৰ্ব্ব দিকে। শি:গোলদিঘি হেয়ার স্কুল ও য়ুনিভার্সিটি হলের কোন দিকে ? গোলদিঘির দক্ষিণের রাস্তা যথা স্থানে সন্নিবেশিত কর। বিদ্যালয়ের উত্তর দিকে কি ? সিয়ালদহ ষ্টেশন বিদ্যালয়ের কোন দিকে ? সিয়ালদহ ষ্টেশন হইতে বিদ্যালয়ের উত্তর দিক পৰ্য্যন্ত হ্যারিসন রোড় সন্নিবেশিত কর। এইরূপে বিদ্যালয়ের চতুৰ্দ্দিকের প্রধান প্রধান রাস্তা, বাড়ী, দিঘি, প্রভৃতির সম্বন্ধে শিক্ষক মহাশয় প্রশ্ন করিবেন এবং প্রশ্নের উত্তর কাঠফলকের যথাস্থানে সন্নিবেশিত করিতে বলিবেন। একজন বালক কাঠফলকের উপর এবং অপর সকলে সঙ্গে সঙ্গে নিজ নিজ প্রস্তরফলকের (শ্লেটের) উপর ঐ রূপ আঁকিবে। এইরূপ নকসা হইয়া,গেলে শিক্ষক মহাশয় সহজ সহজ "ঐতিহাসিক” প্রশ্ন করিবেন। যথা—(১) হেয়ার স্কুল