পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ ॥ সভ্য জাপান সেদিনকার ছেলে বই না—তাহার গলা টিপিলে দুধ বেরোয় ! পক্ষান্তরে স্বসভ্য ইউরোপের বয়ঃক্রম হইতে চলিল চারি শতাব্দীর বেশী বই কম না। দেখিয়া যদি শিথিতেই হয়, তবে ইউরোপ আমেরিকার খ্যাতনামা মহাত্মাদিগের পরীক্ষাৰ্ত্তীর্ণ প্রণালী-পদ্ধতিই আদর্শ-পদবীতে দাড় করাইবার উপযুক্ত, তা বই একটা অকালপক কচিছেলের কাগুকারখানা দেখিয়া-শিখিবার জিনিসই নহে। পাশ্চাত্য প্রদেশে তো আর বিস্তাবুদ্ধিসম্পন্ন ইতিহাস-লেখকের অভাব নাই ; তাহদের লিখিত তরো-বেতরে স্বারাজ্যের তরো-বেতরো অভু্যদয়-বৃত্তান্ত পাঠ করিয়া দেখ, দেখিবে যে, সৰ্ব্বত্রই ধৰ্ম্মাধৰ্ম্ম-বিচারবর্জিত নৈরাজ্যের মধ্য হইতেই স্বারাজ্য মস্তক উত্তোলন করিয়া দণ্ডায়মান হইয়াছে। - ২। ফরাসীস দেশের অষ্টাদশ খ্ৰীষ্টাব্দীয় নৈরাজ্যের মধ্য হইতে কিরূপ স্বারাজ্য মস্তক উত্তোলন করিয়া দণ্ডায়মান হইয়াছে, তাহা তো আর কাহারো দেখিতে বাকি নাই ! সেট যে একটা সৰ্ব্বনেশে কালসৰ্প! তেমন বিষাত্মা কালসৰ্প কোথাও আর দেখা যায় না! ইংরাজিতে তাহার নাম Revolution, আর দেশীয় ভাষায় তাহার নাম রাষ্ট্রবিপ্লব। সেই সহস্রশিরা সপটাকে স্বদুরদর্শী প্রথম নেপোলিয়ন शूद ভালমতেই চিনিতেন, আর, চিনিতেন বলিয়া তাহাকে দমন করিবার জন্য বিহিত বিধানে চেষ্টা পাইয়াছিলেন ; কিন্তু হইলে হইবে কি ধৰ্ম্মের নামে নহে পরস্তু গৰ্ব্বক্ষীত ফরাসী জাতীয় গৌরবের নামে তিনি তাহার বিষ দাত ভাঙিতে গিয়াছিলেন তাই হিতে বিপরীত হইল। ঐ দুরন্ত কালসৰ্পটার কোপে পড়িয়া অবধি, তাহার বিষশ্বাসে জলিয়া পুড়িয়া ফরাসীস দেশের অধিবাসীরা একদিনের জন্যও সৌরাজ্যমুখ যে কাহাকে বলে তাহ জানিল না। স্বারাজ্যের যোগাড়যন্ত্রে প্রবৃত্ত হইয়া মার্কিনেরাই বা কেন (জাপানীদিগের মতো) অত্যন্ন কালের মধ্যে অবলীলাক্রমে আশাতীত ফল-লাভ কুরিল, আর ফরাসীসেরাই বা কেন আজও পৰ্যন্ত তাহদের হেট মস্তক উত্তোলন করিতে পরাভব মানিতেছে ? ইহার গোড়ার কারণ যে কি তাহ দেরিতেই পাওয়া যাইতেছে। ভূতগত উচ্ছৃঙ্খলতা’র ভূতগত ফল হইবে • नि:+आज=नोबाछ=बांछ-बर्लिंङ। नत्राश=अञाखकछ। ৮ম ভাগ।


তাহাতে আর বিচিত্র কি ? মার্কিনদিগের রাজনৈতিক w বসায়ের গোড়াপত্তন করা হইয়াছিল ধৰ্ম্মের উপরে, তাই জাদ ফল হইল নিষ্কণ্টক স্বারাজা-লাভ ; ফরাসীস্দিগের রাজ নৈতিক অধ্যবসায়ের গোড়াপত্তন করা হইয়াছিল আবিষ্ঠা দস্তু মাৎসৰ্য এবং অধৰ্ম্মের উপরে তাই তাহার ফল হইল জাতী অধঃপতন । পুরাকালের একটি শাস্ত্র বচন শ্রবণ কর – "অধৰ্ম্মে নৈধতে তাবৎ--অধৰ্ম্ম দ্বারা দুরাত্মাজান সমস্তই হস্তায়ত্ত হয়,” “ততো ভদ্রানি পশুতি –তাহার পরে মঙ্গল দৃপ্ত সকল দেখা স্থায়,” “ততঃ সপত্নান জয়তি-তাহার পরে শত্রদিগের উপরে জয় লাভ হয়,” “সমূলস্থ বিনগুড়ি —তাহার কপালে কিন্তু লেখা আছে সমুলে বিনাশ”। ধৰ্ম্মভ্রষ্ট ফরাসীস জাতির ভাগ্যে তাহাই ঘটিল। তা" সাক্ষীঃ – ( ১ ) অধৰ্ম্মে নৈধতে তাবৎ । অধৰ্ম্ম দ্বারা সমস্ত ফরাসীস রাজ্য চকিতের মধ্যে বিপ্লব কৰ্ত্তাদিগের হস্তায়ত্ত্ব হইল। ( ২ ) ততো ভদ্রানি পশুতি । তাহার পরে চারিদিকে মঙ্গলের মুখস্বপ্ন দেখা দিন্তে আরম্ভ করিল, আর, সেই সুখ-স্বপ্নের আবেশে ফ্রান্স, ইংলণ্ড আইআরলগু, পোলাও প্রভৃতি দেশ বিদেশের ভ্রাতা ভ্ৰাতায় কোলাকুলির ধূম পড়িয়া গেল। (৩) তত: সপত্নান জয়তি। তাহার পরে ভীষণ রক্তারক্তির মধ্য হইতে প্রথম নেপোলিয়ন মাথা তুলিয়া উঠিয় তোপের ধমকে অর্ধেক ইউরোপ আপনার বজ্রকঠিন মুঠার মধ্যে আনয়ন করিলেন । { 8 ) সমূলস্থ বিনশুতি । তাহার পরে ফরাসীস্দিগের স্বারাজ্য সমূলে বিনা প্রাপ্ত হইল। বিদেশীয় রাজারাজড়া'র একযোট হই। তাহাদের চিরাভিলষিত স্বারাজ্যের মস্তকে বজাঘাত করিল। ফরাসীস দেশীয় ধৰ্ম্মদ্বেষী আদিম বিপ্লব-কর্তার বেরূপ একটা বিশাল যহা-ঘজের ফঁাদ দিয়া কাৰ্য্যারম্ভ করি ছিলেন, তাহা দক্ষযজ্ঞেরই দ্বিতীয় সংস্করণ। সে মহারাষ্ট্র বড় বড় দেবতাদের সবাইকেই বিহিত বিধানে নিমা" করা হইয়াছিল। সাম্যদেবীকে ( Equalityকে ) নিমন্ত্র **i *ề#ff**, ##ì cT#lr ( Fraternity #) ৪র্থ সংখ্যা । ] নিমন্ত্রণ করা হইয়াছিল, স্বাধীনতা দেবীকে (Liberty Coe ) ১৪:১৮, ২৪ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)~ নিমন্ত্রণ করা হইয়াছিল ; কেবল শিবকে (মঙ্গল’কে ) এর সতীকে (সদ্ধৰ্ম্মকে )অপমানিত করিয়া ঠেলিয়া রাখা স্টুয়াছিল। কুহকিনী অবিদ্যা-দেবীর ভানুমতী (enlighonment) নামের ভেস্কি বাজিতে দেশবিদেশে সাম্য ভ্রাতৃভাব এবং স্বাধীনত সংস্থাপন করিতে হইবে—এই ছিল যজ্ঞকৰ্বদিগের প্রাণগত সংকল্প। এত বড় একটা বৃহৎ ব্যাপারের প্রস্তাবনা শেষে গড়াইল আসিয়া কোথায়— শুনিলে? ফ্রান্সের ভবিষ্যৎ ঐসমৃদ্ধির সমস্ত আশাভরসা প্রথম নেপোলিয়নের সঙ্গে সেণ্ট হেলেনায় গোর প্রাপ্ত হইল ; তাহার পরে তাহার ছিটা ফোটা যৎকিঞ্চিং স্বাহ বাকি ছিল, তাহ দ্বিতীয় নেপোলিয়নের সঙ্গে ইংলণ্ডে গোর প্রাপ্ত হইল। গড়াইল আসিয়া এইখানে ! পক্ষান্তরে মার্কিন দেশীয় স্বারাজ্য পন্থীরা ধৰ্ম্মকে উল্লঙ্ঘন করিয়া একটি কথাও মুখে উচ্চারণ করে নাই –একটি কার্যও হস্ত প্রসারণ করে নাই, অপর কোনো জাতির স্থা অধিকারের অন্তঃপাতী স্বচ্যগ্র পরিমাণ ভূমিখণ্ডেও হস্তপ্রসারণ করে নাই ; আবার তাহাদের নেতা যিনি ওয়াশিংটন তাহার তে কথাই নাই! তিনি সাক্ষাৎ ধৰ্ম্মের অবতার ছিলেন বলিলেই হয়। তাই তাহাদের স্বারাজ্যের জয়-পতাকায় “যতো ধৰ্ম্ম স্ততে জয়” স্বর্ণীক্ষরে জল জল করিতেছে তারকা-বেশে । ॥১ ॥ তোমার ওকথা আমি মাথা পাতিয়া গ্রহণ করিতাম-যদি ইংরাজের নিকটে বুয়ারের যুদ্ধে পরাজিত না श्झेछ। - ১। কে বলিল বুয়ারের পরাজিত হইয়াছে—পরাজিত হইতে তাহদের শত্রপক্ষেরাই পরাজিত হইয়াছে। ইংরাজি সংবাদপত্রের সম্পাদক যিনিই যাহা বলুন না কেন, যাহাঁদের চক্ষু আছে তাহারা দিবালোকের দ্যায় স্পষ্ট দেখিতে পাইতেছেন যে, বিগত বুয়ার যুদ্ধে ইংরাজদিগের লাঞ্ছনা, গঞ্জন, ধনহানি, মানহানি এবং প্রতাপহানির একশেষ ইয়াছে। কিন্তু বুয়ারদের কি হইয়াছে ? কিছুই হয় নাই! বরং তাহারা পূৰ্ব্বে যাহা ছিল তাহ অপেক্ষ জাতীয় গৌরবসোপানের অনেক ধাপ উচ্চে উঠিয়াছে বই একধাপও নীচে সাবে নাই ;-আর-যে-এখন কোনো বলবান জাতি তাহা $☾ দিগকে ঘাটাইতে সাহসী হইবে তাহার পথ জন্মের মতে অবরুদ্ধ হইয়া গিয়াছে। বুদ্বারদিগকে ধৰ্ম্মপুস্তক হাতে করিয়া রণে অবগাহণ করিতে দেখিয়া ইংরাজ বণিকেরা মৃদুমন্দ হাসিতে পারেন, এবং তাছাদের দেখাদেখি বঙ্গের , ধামাধরেরা হাসির চোটে ভূত ভাগাইয়া দিতে পারেন, কিন্তু তাহারা সহস্ৰ হাসিলেও আমার এ বিশ্বাস একচুলও টলিবে না যে, বুয়ারেরা যে, পরাজিত হইয়াও জয়ী হইয়াছে, তাহার কারণই ঐ—কি ? না ঈশ্বরের প্রতি দৃষ্টি করিয়া ধৰ্ম্ম-যুদ্ধে প্রবৃত্ত হওয়া । বৃথা আমি অরণ্যে রোদন করিতেছি! বুয়ারদের, জাপানিদের এবং মার্কিনদের প্রদর্শিত মনুষ্যত্বের দৃষ্টান্ত কি আমাদের দ্যায় লক্ষ্যভ্রষ্ট এবং লক্ষ্মীভ্রষ্ট বিপথপন্থীদিগের মনের এক কোণেও স্থান পাইতে পারে ? তাহা হইলে আর আমাদের ভাবনা ছিল না ! আমরা এতদিন ঠেকিয়া শিথিয়াও এখনো আমাদের ঠেকিয়া শিখিবার অাশ মিটিতেছে না। নৈরাজ্যই আমাদের স্বারাজ্যের আদর্শ ; পিপীলিকার পক্ষই আমাদের জয়পতাকা’র আদর্শ ; আর আমাদের রাজনৈতিক গোরা-গুরুদিগের প্রসাদাৎ একটি জপমন্ত্র যাহা আমরা শিখিয়াছি তাহাই আমাদের ব্রহ্মাস্ত্র, তাহ এই –“ঈশ্বর চাহিন—ধৰ্ম্ম চাহিন—কেবল চাই স্বারাজ্য —খাটি স্বারাজ্য—যাহার গাত্রে ঈশ্বরের এবং ধৰ্ম্মের নাম গন্ধও নাই সেইরূপ নিষ্কণ্টক স্বারাজ্য ।” ৷ ১ ৷ তুমি এই যে সকল শক্ত শক্ত কথাগুলি বলিলে, তাহা হিতবাক্য হইতে পারে, কিন্তু মনোহার একটুও না! “হিতং মনোহারিচ দুর্লভং বচঃ।” আমি তাই বলি যে, তোমার ব্যবস্থানুযায়ী তিক্ত হিতবচনের সঙ্গে একটু আধটু মনোহারি বচনের অনুপান মিশাইয়া উহাকে মুখসেবা করিয়া লইলে ভাল হয়। আমি একটা অনুপানের জোগাড় করিয়াছি—বোধ করি তাহ চলিতে পারে ; তাহা এই – স্বারাজা-পথের আমরা নূতন ব্ৰতী। সে পথে যাত্র করিবার সময় পদে পদে আমাদের যে ভুল ভ্রান্তি ব্যতিক্রম এবং পতন ঘটবে, তাহ ঘটিবারই কথা। পাঠশালার ছাত্রের যেমন লিখিতে লিখিতেই ক্রমে ক্রমে হাত তাহাদের পাকিয়া ওঠে, তেমি আমাদের দেশের স্বারাজা-পন্থীরা কোমর বাধিয়া