পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩০ সীমা থাকে না। এগুলি অধিকাংই গোর হইতে খুজিয়া লওয়া হইয়াছে। কারিগরের যন্ত্রগুলি ও ব্যবহার্য্য বাসনকোষণগুলি প্রায় আমাদেরই মত। তাদেরও পেয়াল, থালা, ঘটী, হাড়ী, কলসীর ব্যবহার ছিল। অলঙ্কারগুলি নান ধাতুর ও নানা ছাদে গড়া। বালা আছে হার আছে কর্ণ ভূষণ আছে, সবগুলিই অতি পরিপাটীরূপে নক্স কাট৷ মুখ দেখিবার আরসীগুলি চকচকে ধাতু নিৰ্ম্মিত, কাচের নহে। চিরুণী ও মাথার কাটাগুলি ঠিক ৫ায় আধুনিক মতই দেখিতে। ডাক্তারী যন্ত্রগুলি আমি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে দেখিলাম। তাদেরও অস্ত্র চিকিৎসার ছুরিগুলি আমাদের মত ছাদে গড়া। সলা বা “প্রো গুলিও আধুনিক মত। চিমটা ও কাচিগুলির নাচি নাই, তারা শ্ৰীংএ কাজ করে। তাহারাও "আরসিনিকৃ” ও “পারার” ব্যবহার জানিতেন। এই সকল দেখিয়া বুঝা যায়—পুরাকালেও আধুনিকদিগের মত অনেক দ্রব্যাদি ছিল। কেবল কালক্রমে তাহারাই সংস্কৃত হইয়া বৰ্ত্তমান কালের দ্রব্যাদির মত হইয়াছে। একথা সকল বিষয়েই খাটে। মনের ভাব, সামাজিক প্রথা, দর্শন বিজ্ঞান ও তত্ত্বচিন্তা, সবই সমান ছিল। কেবল কালক্রমে সে সব আরও উন্নত হইয়াছে। "History repeats itself"—অর্থাৎ ইতিহাসেরও পুনরাবৃত্তি হয়— একথার বোধ হয় এই মানে । যে ঘরগুলিতে “মানী” ও “কবর” গুলি রক্ষিত আছে সে ঘরগুলি সৰ্ব্বাপেক্ষ লোমহর্ষক । সেখানে গিয়া সে সকলের কথা ভাবিলে গায়ে কাটা দিয়া উঠে। খৃষ্টপূৰ্ব্ব ৬০০০ বছরেরও নরদেহ সেখানে রক্ষিত আছে। একটি দেহ শুকাইয়া তার অস্থি পঞ্জর ও ক্ষীণ দেহের শুকুন চামড়া মৃদ্ধ—একটি গোরের ভিতর খুলা অবস্থায় দেখান আছে। ঠিক যে অবস্থায় পাওয়া গিয়াছিল, সেই অবস্থাতেই রক্ষিত। মাথার চুলগুলি অবধি বিদ্যমান। আর একটি কবরে অনেকগুলি পুরোহিতের দেহ একত্র রক্ষিত আছে। তাদের যজমানেরা নিজ হাতে বুনিয়া যে সকল বস্ত্রাদি তাদের অস্তেষ্টক্রিয়ার জন্য উপহার দিয়াছিল সে গুলিও রাখা আছে। অতি পরিপাট করিয়া বুনা ও কারুকাৰ্য্যে খচিত। কোনওটিতে একটুও দুর্গন্ধ নাই। আবৃত গোরের উপরও হাতগড় নান ছাদের প্রতিমূৰ্ত্তি কোথাও কোথাও রাধা দেখিলাম, সে সবই ভোগবিলাসে রত। এক রাণী নিজের গোরের উপর বিবস্ত্রা হইয়া বসিয়া দপণে আপনার প্রতিমূৰ্ত্তি দেখিতেছেন। আর একটির উপর রাজা ও রাণী দুজনে একত্রে পাশাপাশি উপবিষ্ট। এইরূপ অবস্থায় আমাদের দেশে জপমালা সমেত জোড় হস্ত একটি মূৰ্ত্তি স্থাপিত হইত। শবকোষের ভিতরকারদিকের চিত্রগুলি ও দেওয়ালের প্রবাসী। আছে সে ঘরটি দেখিলে বিয়ের মর [ ৮ম ভাগ। বৃহৎ চিত্রগুলিতে অনেক পরলোকের কল্পনা অঙ্কিত আছে। মৃত্যুর পর কিছু দিন আত্মা সেই দেহের নিকটই যুীে পরে পাতালের কোন রাজ্যে চলিয়া যায়—অস্তমান স্বৰ্যোরও সেই স্থানে থাকিবার স্থান। দেহকে যত যত্নে রাখা যায় আত্মাও পরলোকে তত মুখে থাকে। " আত্মার প্রতিকৃতি o তাহাদের কল্পনায় কতকটা পার্থীর মত, কারণ পার্থীর মত সেটিও উড়িয়া যায়। এইরূপ পার্থীর মুখবিশিষ্ট সেখানে অনেক ছবি দেখিলাম। পরলোকের বিচারের কথা অতি সুন্দর ছবিতে, দেওয়ালের উপর, বরাবর, পরে পরে, চিত্রিত আছে। তার নাম “ইনির” বিচার। মৃত্যুর পর “ইনি” জোড় হাড় একটি তৌল দাড়ির পাশে দাড়াইয়া বিচারের অপেক্ষ করিতেছে। এই দাড়িতে তাহার আত্মা ওজন হইবে। নিকতির অপর দিকে একটি মাত্র পক্ষীর পালক রাখ| আর “ইসিস" নিকতির কাটাটি সাবধানে পরীক্ষা করি জানাইলেন যে “ইনির” আত্মা তাহার বিরুদ্ধে সাক্ষী দে নাই। অমনি দেবতারা আসিয়া তাহাকে স্বর্গের দ্বার লইয়া গেলেন। সৎকর্মের পুরস্কার ও অসৎ কৰ্ম্মের সন্ন তাহাদের মতে পরলোকে অবশ্যম্ভাবী ফল । - নীচের তলায় যে সকল মিশর দেশীয় প্রতিমূৰ্ত্তি ও | অট্টালিকা বা মন্দিরের ভগ্নাংশগুলি সংগৃহীত আছে | সেগুলিও অতি মনোহর ও বিস্ময়কর। তাহা হইতেওঁ ! মিশরের অনেক ইতিহাস জানা যায়। তার কারণ সেসব গুলি অতিশয় পরিপাটি ও সুরক্ষিত। মন্দিরের ভিতরদিকেী এইসব বেশী লক্ষিত হয় । তার কারণ আমাদের দেশের ধৰ্ম্মগ্রন্থের জ্ঞান সম্বন্ধে যেরূপ একটা সাধারণ লোক হইত্ত্বে লুকানর ভাব আছে, সকল পুরোহিতবিধ্বস্ত দেশী সেরূপ ছিল। . সে সম্বন্ধে বাহিরে সাধারণ লোকৰে কিছু দেখান যুক্তিযুক্ত বা স্বার্থ সম্বন্ধে নিরাপদ মন হয় নাই। • এই সকল ইতিহাস হইতে আর একটি বিস্ময়কর কথা জানা যায়। সে এই, যে পুরাতন জাতি মাত্রেই বংশ বন্ধ বড় আবশ্যকীয় ও ধৰ্ম্মানুমোদিত বলিয়া বিবেচনা করিত। পারলৌকিক কাজের জন্য তাহ বড়ই আবশ্যকীয়। ধন সম্পত্তি সব সংসারের সকল লোকের একত্রে ও সমান স্বত্ব। কাহারও কোনও অংশে আলাহিদা অধিকার নাই। ঠিক আমাদের দেশের মিতাক্ষরা আইনের মত। তাহদের সংসারে অনেক ক্রীত দাস দাসীও থাকিত এা পোষ্যপুত্র লইয়া বংশরক্ষা করা তাহদেরও প্রথা ছিল। আমাদের দেশেও ওইরূপ পোষ্যপুত্র গ্রহণের বা f আছে ;--জাপানেও ওইরূপ চিরকাল চলিয়া ੋ। বংশ পরম্পরায় একই রাজ্য চলিয়া আসিতেছিল। ছবি আছে সেটিকেই “স্ফিংস্" বলে। 8র্থ সংখ্যা । ] খৃষ্টপূৰ্ব্ব ৪,০০০ বৎসরে প্রথম মিশরের রাজপুরোহিত বা রাজা বা "ফেরোয়ার” কথা জানা যায়। তারপর হইতে অনেক বংশ চলিয়া আসিয়াছে। মোটামুটি এই পরবর্তী কালকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা প্রথম হইতে একাদশ বংশ পৰ্য্যন্ত বা ২,৫০০ খৃঃ পূঃ বৎসর অবধি রাজত্বকে—পুরাতন রাজ্য বলা যায়। সেইরূপ ১২ হইতে উনবিংশতম বংশ পর্য্যন্ত অর্থাৎ ১২ খৃ: পূ বৎসর অবধি—মধ্যম রাজ্য। এবং বিংশ হইতে ত্রিংশ বংশ বা ৩৫০ খৃঃ পূঃ বৎসর অবধি—মূতন রাজ্য বলা যায়। প্রথম রাজা “মেনিস্"ই “মেমফিস" নামক রাজধানী স্থাপন করেন। কিন্তু চতুর্থ বংশের রাজারাই যত বড় বড় কীৰ্ত্তি রাখিয়া গিয়াছেন। “গীজার” বড় "পরামিদ" তাদেরই কীৰ্ত্তি, এইরূপে তিনটি পিরামিদ সৃষ্ট হয়—তাতে অনেক বৎসর সময় লাগে ও অনেক অর্থব্যয় হয়, সৰ্ব্বাপেক্ষ বড়টি ৫০০ ফিট উচু। ইহাদের ভিতরকার সুড়ঙ্গগুলি সব ধ্রুব তারার দিকে ফিরান। তার নিকটেই যে নরমুণ্ড বিশিষ্ট এক সিংহের প্রকাও সেটি ইহাদের প্রধান দেবতা সূৰ্য্যদেবেরই ছবি—ও পিরামিদ হইতেও পুরাতন। অনেক হাজার বৎসর পরে মিশর পরাধীন হইয়া পড়ে ও নিকটবৰ্ত্তী সিরিয়ার লোক আসিয়া রাজ্য দখল করে। এত সহজে দখল করিবার কারণ—যে, অনেক ভিন্ন দেশীয় লোকে মিশর দেশে আসিয়া বাস করিতেছিল, তাহারাও বিদ্রোহী হইয়া সিরিয়ানদের সাহায্য করে। ইহাদেরই # Shepherd King as “attoats" fro fossia পরেই ইহারা নিজেরাই মিশর দেশের আচার ব্যবহার লইয়া মিশরবাসীর মতই হইয়া পড়িলেন। রোম যখন গ্ৰী জয় করেন তখন জেতা হইয়াও গ্রীসের সভ্যতা নিজে ন। ভারতবর্ষেও দলে দলে এইরূপ ঘটনা ঘটয়াছে। যথার্থ পক্ষে উন্নতির এমনিই আকর্ষণ যে মহাবলশালীও তার কাছে মাথা নিচু করে। কিছুদিন পরে মিশরের আরও দক্ষিণ দেশস্থ “ণীবস"এর করদরাজা কর অস্বীকার করিয়া—মিশর দেশ হস্তগত করিয়া ফেলিলেন। ইনিই অষ্টাদশ বংশীয় রাজা। ইহাদের আগমনের পর বাইবেলে উক্ত মিশর দেশের ঘটনাগুলি ঘটে। ইহারাই ইহুদী দলপতি “জোসেফকে উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত করেন। এখন হইতে মিশরের প্রতাপের আর সীমা রহিল না। তারা জয়োল্লাসে নিস্ক্রান্ত হইয়া—আরো নিকটবৰ্ত্তী স্থানের রাজ্যসমূহ যথা "বেবিলন” “এসিরিয়া” প্রভৃতি জয় করি তারপর আসিরিয়ার লোকেরা আসিয়া অচিরে মিশর দেশ তাই সে দেশের জাপানের মত কত সহস্ৰ বৎসর "ি লেন। কিন্তু এরূপ সৌভাগ্য দেশ দিন রছিল না। ব্রিটিশ মিউজিয়ম ও মিশরের পুরাতত্ত্ব। - না করি মেলি এই প্রতাপশালী অষ্টাদশ বাণী ミ、○> রাজারাই মিশরের দক্ষিণে ও নীল নদীর পশ্চিম তীরবর্তী রাজধানী “থবস”নগর নানারূপ বড় বড় মূৰ্ত্তি গড়িয়া সাজাইলেন, এই মূৰ্বিরই গ্রীক জাতিরা “মেমন” নাম দিয়াছিল। ট্রয়যুদ্ধে কথিত আছে এই “মেমন” রাজাই লড়াই করিতে গিয়া হত হন। এই বংশের আর এক রাজা ভিন্ন দেশীয় মাতার গর্ভজাত বলিয়া এক নূতন ধৰ্ম্ম মতের আবির্ভাব করেন। র্তাহার মতে মিশরের চিরকালের দেবতা স্বৰ্য্যদেবকে পূজা করা উচিত নয়। কিন্তু তিনি এ পরিবর্তনে কৃতকাৰ্য্য হন নাই। আমাদের দেশেও সেই রূপ ভিন্ন জাতি আসিয়া বসবাস করার ফলে অনেক নূতন ধৰ্ম্মের সংস্থান হইয়াছে। শকদের আগমনে বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম উঠে। মুসলমানের আসার পর –“বৈষ্ণব ধৰ্ম্ম” বঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হয়। আবার অধুনা ইংরাজদের আগমনে— “ব্রাহ্ম ধৰ্ম্মও” প্রতিষ্ঠা লাভ করিতেছে। সংসর্গে সকল জিনিষই কাল ক্রমে পরিবৰ্ত্তিত হয়। তা ন হইলে অপরিবৰ্ত্তিত একই অবস্থাতে পৃথিবীর অবস্থা কি শোচনীয় হইত ? ইহাদের পরই উনবিংশ বংশে—খৃঃ পূঃ ১,৪০০ বিখ্যাত রাজা প্রথম “রামেসিস রাজা হন। ইনি বড় বড় অট্টালিকা ও মূৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠা করিয়া সৰ্ব্বাপেক্ষ বিদিত হইয়াছেন। ইনি সিরিয়াতে যুদ্ধ করিতে যান—এবং সেখানে ইহার বীরত্বের কথা থাবস্নগরের একজন কবি চিরস্মরণীয় করিয়া গিয়াছেন। নিউবিয়া দেশে থাবস্ নগরে নীল নদীর পার্শ্ববৰ্ত্তী পাহাড়ে খোদিত ইহঁারই চারিটি মূৰ্ত্তি মন্দিরের তলায় দণ্ডায়মান। সে ছবিটি এখানে দিলাম। মন্দিরের গায়ে গায়ে ইহার কীৰ্ত্তি কথা লিখা আছে। ইহার আমলেই ইহুদিজাতি এখানে আসিয়া নানারূপ অত্যাচার সহ করে। ধনাগার তৈয়ারী করিবার জন্ত তাহারাই ক্রীত দাসের মত খাটিয়া সে সব কাজ করিয়া দেয়। এ সময়ে “সেমিটক” বা অন্য জাতীয় লোক এখানে সংখ্যায় এত বাড়িয়া পড়ে—যে দেশের লোকের সংখ্যায় তারা অনেক বেশী হইয়া দাড়ায় । তাছাদের দিয়া সব কাজ করিয়া লওয়া হইত বলিয়া তাহারা বিদ্রোহী হয়-ও পরিশেষে ইহুদিরা মিসর ত্যাগ করিয়া বনে বনে লুকাইয়া পলায়। একেষ্ট বলে "একজোডাস" বা বাইবেলে কথিত পলায়ন অঙ্ক। ইহার পরই “মধ্য রাজ্যের” অবসান ও তার সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতার বিলুপ্তি—ও যত পরাজয়, উপসর্গ ও যন্ত্রণ ঘটে। বাইবেলে লিখিত আছে—“বিদেশী এসিরিয়ানরা মন্দির হইতে ও রাজপ্রাসাদ হইতে সব ধনরত্ন লুটিয়া লইয়া গিয়াছিল।” এই সময়কার রাজারা সব বিদেশীয়। তাহাদের মূৰ্ত্তি সকল—দেখিতে অন্তরূপ ও মুত্র। এইবার মিশর দেশের অধোগতির সময়। দুঃসময় বুঝিয়া উত্তর হইতে এসিরিয়ান ও দক্ষিণ হইতে এথিওপিয়ানরা আসিয়া মিশর -