পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৫২ নিক্রিয়,শস্ত,পরিপূর্ণ আত্মপ্রকাশ করিবার জন্যই জগৎগুষ্ট করিয়াছেন এবং তাহা হইতেই শুভ ও অশুভের মূলতত্ত্ব— অর্মর্জা ও আহরিমান নিঃস্তত হইয়াছে। পারসিকদিগের দ্বৈতবাদ সম্বন্ধে যে ভ্রম সাধারণের মধ্যে প্রচলিত আছে, সেই ভ্রমটি প্রসঙ্গক্রমে এই থানে সংশোধন করিয়া দিই। জেৰ্ব্বান –আক্কেরেন এক অদ্বিতীয় বস্তু; কিন্তু অর্মজুদ আহরিমান এই দুই প্রতিদ্বন্দী তত্ত্ব, যমজ হইলেও সমান নহে। ফলতঃ মঙ্গলের মূলতত্ত্ব অর্মজ প্রথমে জন্মগ্রহণ করে ; অর্মাদ আহরিমান অপেক্ষা অধিক শক্তিমান এবং কল্পকালের অস্তে, আহরিমান একেবারেই অস্তহিত হইবে। আর গ্রীক আৰ্যদের কথা যদি বল, সকলেই জানে,—পিথাগোরাস, সক্রেটিস ও প্লেটো, পরমেশ্বরের একত্ব অবগত ছিলেন এবং সেই সম্বন্ধে উপদেশও দিতেন। প্লেটো ঈশ্বরকে এক অদ্বিতীয় ও জ্ঞান-স্বরূপ বলিয়াছেন ; আৱিষ্টটেল বলিয়াছেন, “তিনি সেই চিৎ--যাহা আপনাকে আপনি চিন্তা করে।” ঈশ্বর সম্বন্ধে আৰ্য্যদিগের অতীন্দ্রিয় ধারণা ও ইহুদিদিগের মানবিক ধারণা—এই উভয়ের মধ্যে আকাশ পাতাল প্রভেদ। উহার মধ্যে একটি যেমন উন্নত ও দার্শনিক, অল্পটি তেমনি স্থল ও সীমাবদ্ধ। এখন, একেশ্বর বাদের উপর স্থাপিত যে শ্রেষ্ঠতার জন্য ইহুদিরা বড়াই করে, সেই স্পৰ্দ্ধাবাক্যে আমরা বেশী আশ্চর্য হইব কিংবা যে আৰ্য্যবংশধর খৃষ্টানদের ধৰ্ম্মগ্রন্থের দোহাই দিয়া ইহুদিরা আপনাদিগকে “নিৰ্ব্বাচিত জাতি” বলে—সেই খৃষ্টানদের অজ্ঞতায় বেশী আশ্চর্য্য হইব তাহ বলিতে পারি না । মিসরের "পারিয়া” হইতে যাহাদের উদ্ভব, যাহার অবিরত নিজ প্রতিবেশীগণের গ্রাম নগর লুটপাট করিত ; জয়লাভ করিলে, যাহারা আবালবনিতা সকলকে হত্যা করিয়া, শুধু মূসা-শ্রেণী পুরোহিতদিগের ব্যবহারের জন্য কুমারাদিগকে রাথিত ; পায়গম্বরদের নিষেধবাণী সত্বেও, যাহারা নিজ পৌত্তলিক দেবতাদের নিকট পুন:পুন: ফিরিয়া আসিত ; যাহারা স্বকীয় ধৰ্ম্মবিশ্বাসের জন্য কোন সাঙ্কেতিক চিন্তু আপনাদের মধ্যে না পাইয়া, ইজিপ্ট ও চ্যান্ডিয়ার আশ্রয় গ্রহণ করিতে বাধ্য হইয়াছিল ; যাহাদের না আছে শিল্পকলা, না আছে দর্শন, যাহার কেবল সাহিত্যক্ষেত্রেই যোগ্যতা দেখাইয়াছে এবং যাহার শুধু নিজ প্রবাসী । প্রভৃতি দীপ্তগৌরব প্রাচীন সভ্য দেশের সমক্ষে, এই কথা পদ্ধা করিয়া বলে কি না –তাহারা ঈশ্বরের "নিৰ্ব্বাচিত । জাতি”। ভারত প্রভৃতির যখন উন্নত অবস্থা তখন ইহুদি জাতির অস্তিত্বই ছিল না, এমন কি, উহার প্রাচীন গ্ৰীক দিগেরও পরে সমুদ্ভূত হইয়াছে। উহাদের এই পদ্ধাবাক্যের ভিত্তি কি ?—ন, উহারাষ্ট কেবল ঈশ্বরকে জানিত। আর সে ঈশ্বর কিরূপ ঈশ্বর ?—তিনি মহাশক্তিমান ঈৰ্ষাপরা ঈশ্বর, সৈন্য সামস্তের ঈশ্বর, সৰ্ব্বোচ্ছেদক, যথেচ্ছাচারী, বৈরনির্যাতক, নিষ্ঠুর ঈশ্বর ; মিসরে মহামারী আনয়ন করিবার উদ্দেশেই এই ঈশ্বর “ফ্যারাও”র হৃদয়কে পাষাণকঠিন করিয়া দিয়াছিলেন ; মমৃয্যের কোন এক বংশকে সৃষ্ট করিয়া তাহার অনুতাপ হইল এবং সেই বংশকে তিনি প্রলয় বঙ্গায় ডুবাইয়া মারিলেন। যে “লেভিটে”র স্বকীয় ভ্ৰাত, পুত্র, জনক জননীদের হত্যা করে সেই লেভিটদিগকে, মূসার (Moses) মুখ দিয়া এই ঈশ্বরই আশীৰ্ব্বাদ করেন। এইরূপ তাহদের ঈশ্বর-নিনামূলক ঈশ্বরের কল্পনা ! এই ঈশ্বর তাহদেরই ঈশ্বর, আর কাহারও ঈশ্বর নহেন। এখন খৃষ্টানেরা তাহাদের মধুর-প্রকৃতি মহাপুরুষ যিশু খৃষ্টকে এই ঈশ্বরেরই পুত্র বলিয়া কি স্বীকার করিতে পাবেন ? হায়! অষ্টাদশ শতাব্দী কালব্যাপী অজ্ঞতা আমাদের মধ্যে কত ভ্রমই বদ্ধমূল করিয়া দিয়াছে ! কিন্তু এক্ষণে বিজ্ঞানের আবির্ভাব হইয়াছে ; বিজ্ঞান, খৃষ্টধর্মের উৎপত্তি সম্বন্ধীয় জটিলতার নিরাকরণ করিয়া এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছে যে, আর্যজাতির মতবাদের কিয়দংশ, খৃষ্টধৰ্ম্ম আলেকজান্দ্রিয়ায় বিভিন্ন সম্প্রদায় হইতে, এবং অল্প অংশই সেমিটক জাতি হইতে প্রাপ্ত হইয়াছে। খৃষ্টধৰ্ম্মের ঈশ্বর সম্বন্ধীয় ধারণা প্রাচীনকালের আধা ধারণার অনেকটা কাছাকাছি ; সেই ঈশ্বর বিশ্বের ঈশ্বর তিনি শুদ্ধাত্মা ও পরিপূর্ণ। এবং খৃষ্টবাদও আর্য মতবাদ, উহা সেমিটক মতবাদ নহে। ফলত, ইহুদিদের “মেসায়া" (ওল্ড টেষ্টেমেণ্টে ঈশ্বরের অঙ্গীকৃত খৃঃ) পার্থিব মেসায় ডেভিডের বংশধর, একমাত্র ইহুদিদিগেরই মেসায়া; যে ঈশ্বরের পুত্র জগতের পরিত্রাণের জন্য আসিয়াছেন এলে | মেষ-বলি উঠাইয়া দিয়া তাহার স্থানে মানসিক বলি প্রবৰ্ত্তিত ৮ম ভাগ । | ৫ম সংখ্যা । ] ঐতিহাসিকদের কলাকৗশলে খাতি બહિન ન করিয়াছে, সেই ক্ষুদ্র ইহুদি জাতি মিসর, চ্যান্ডিয়া, ভারম্ভ । = আরস্তে ঈশ্বরের সহিত অসীম আত্মার সমবায়, যে অবতার প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যত । ২৫৩ করে। মতবাদ ছাড়িয়া, যদি খৃষ্ট ধৰ্ম্মের বিবিধ অনুষ্ঠান, সাংকেতিক চিহ্ল, ও ধৰ্ম্মভোজ আদির (sacrament) কথা ধরা যায়, তাহা হইলেও দেখিতে পাওয়া যাইবে, ইহুদি ধৰ্ম্ম অপেক্ষা আর্য ধৰ্ম্মাদি হইতেই উহার অধিকাংশ গৃহীত হইয়াছে —যথা অগ্নি ও স্বরাপাত্রের সাংকেতিক চিন্তু, ক্রুসের চিহ্ল, খৃষ্টের পুনরুত্থান উৎসবে ব্যবহার্যা মোম-বাতি, কোন কোন অনুষ্ঠানে ব্যবহার্য্য তৈল,- এই সমস্ত বৈদিক ধৰ্ম্মের সামগ্ৰী। অবগাহন-সংস্কার (baptism), দোষ স্বীকার-প্রথা, আচাৰ্য্য-নিয়োগ-অনুষ্ঠান, মস্তক মুণ্ডন—এ সমস্ত ব্রাহ্মণ্যিক ধৰ্ম্ম হইতে গৃহীত। সকল আর্য্য ধৰ্ম্মের মধ্যেই বিবাহ সংস্কার প্রচলিত ছিল । পুরোহিতদিগের চিরব্রহ্মচর্যা, দোষস্বীকার, অনুতাপ,–এই সমস্ত বৌদ্ধধৰ্ম্ম হইতে গৃহীত। - পুরুষ ও স্ত্রীলোকের মঠ, সজ, ধৰ্ম্মপ্রচার—এই সমস্তের জন্ত খৃষ্ট-মণ্ডলী cầągzistą fir-rĘ «st i Saint Basile বৌদ্ধ মঠের আদর্শে র্তাহার বৃহৎ ধৰ্ম্মসমাজ গঠিত করিয়াছিলেন। - আর সন্ন্যাসী তপস্বী সম্প্রদায়ের কথা যদি বল, যিশুখুষ্টের চতুর্দশ শতাব্দী পূৰ্ব্বে, ঐ সকল সম্প্রদায় ব্রাহ্মণিাক ভারতে ছিল। ক্যাথলিক পাদ্রিদের মধ্যে যে শ্রেণীর সোপানপরম্পরা আছে তাহার অবিকল আদর্শ বৌদ্ধতিব্বতে দেখিতে পাওয়া যায়। তিব্বতে ডালাই-লাম আছে,-লামাদের সভায় সেই ডালাই-লামা নিৰ্ব্বাচিত হইয়া থাকে। এই লামারা তাহাদের পদমর্য্যাদা অনুসারে, ক্রুস ধারণ ও “metre"of", শাদা আলখাল্লা প্রভৃতি পবিধান করিয়া থাকে। চীনের ক্যাথলিক পাদ্রি father Bury চীনের পুরোহিতদিগকে, ক্যাথলিক পাদ্রির মত মুণ্ডিত-মস্তক দেখিয়া, ও জপমালা ব্যবহার করিতে দেখিয়া বলিয়া উঠিয়াছিলেন —“আমাদের মধ্যে এমন একটিও পরিচ্ছদ নাই, পৌরোহিতিক কৰ্ম্ম নাই, ক্যাথলিক ধৰ্ম্মের অনুষ্ঠান নাই,—সয়তান যাহার নকল এ দেশে করে নাই।” দোয়া নহে। তাহার প্রমাণ, ইহুদিরা সাইরসকে “ঈশ্বরের ? বলিয়া বিশ্বাস করিয়াছিল। তাহার অনেক পরে, বাদুকর সাইমন, সাইরসকেই মেসায় বলিয়া চালাইয়াছিল। তা ছাড়া ইহুদিরা যিশুকে মেসায় বলিয়া জানিত না, দেন,মিগু আপনাকে ঈশ্বরের পুত্র বলিতেন। সেন্ট-জনের rztgatra, ç'i Evangile strz খৃষ্টধর্মের দার্শনিক সিদ্ধাস্ত দিবি আছে, কাল-গণনার হিসাবে, চারিটা Evangleদর মধ্যে উহাই শেষ গ্রন্থ ; কেননা, উহা ১৬০ খৃষ্টাব্দে আবির্ভূত হয়, এবং কেবল ঐ এভাঙ্গিল-গ্রন্থেই খুষ্টকে দেবপ্রতিম, বিশ্বজনীন মেসায় বলা হইয়াছে—যিনি জগতের পরিাণের জন্য আসিয়াছেন। শব্দবাদ সম্বন্ধেও এই একই কথা বলা যাইতে পারে। সেন্টজন স্বীকার কবিয়াছেন ন্তির বহুপূৰ্ব্বে শব্দবাদ ( শব্দব্ৰহ্ম ) লোকের জানা ছিল এবং কিয়ং শতাব্দী ধরিয়া অ্যালেকজান্দ্রিয় সম্প্রদাষগণ পরবাদের কথা প্রকাষ্ঠভাবে বলিতেন। অবতারবাদও আর্য মতবাদ –উহা ভারতবর্ষ হইতে আসিয়াছে। অ্যালেকজান্দ্রিয়ায়, নামে এই মতবাদেরই শিক্ষা দেওয়া হইত। এই মতবাদ হইতেই "একে তিন, তিনে এক” এই ত্রিত্ববাদের জন্ম হইয়াছে। বাইবেলের পূর্বভাগে, এরূপ কোন মতবাদই খুজিয়া পাওয়া যায় না, ইহুদিধৰ্ম্মের সহিত উহাদের কোন সংস্রব নাই। তাছাড়া, Burnout তাহার “ধৰ্ম্ম বিজ্ঞান” গ্রন্থে কি বলেন শোনো :–“খুষ্টানদের সমস্ত দার্শনিক মতবাদই জেন্দাবেস্তার মধ্যে আছে —যথা, এক ঈশ্বর, জীবন্ত ঈশ্বর,অন্তরাত্মা, ঈশ্বর ঈশ্বরের বাণী, ঈশ্বরের মধ্যবৰ্ত্তী পুরুষ, পিতৃজাত পুত্র, শরীরের প্রাণ ও আত্মার পাবন। পতনবাদ, উদ্ধারবাদ, Hypostases বাদ ভারতে প্রভূত পরিপুষ্ট লাভ করিয়াছে সেই অবতারবাদের কিঞ্চিৎ আভাস, ধৰ্ম্ম সম্বন্ধে ঈশ্বরের প্রত্যাদেশ, Amschaspand s Darvend HfNo es s nes দেবদূত, আমাদের অন্তরে যে ঈশ্বরের বাণী অবস্থিত সেই বাণীর প্রতি অবাধ্যতা, এবং মুক্তির আবশ্যকতা—এই সমস্ত কথাও উহার মধ্যে পাওয়া যায়। আবেস্তা-ধৰ্ম্মে পশুবলি নাই। ইহুদিরাও খৃষ্টীয় পুনরুত্থান উৎসবে "গৌতম সম্বন্ধে আলোচনা" নামক গ্রন্থে Gerson da Cunha আরও এই কথা বলেন :–“এই সম্প্রদায় (যাহারা “মহাযান” মতাবলম্বী) অনেক বিষয়ে রোমান ক্যাথলিক- , দিগের সহিত উহাদের মিল দেখিতে পাওয়া যায় ; উহাদের