পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२¢8 মধ্যে স্ত্রী পুরুষের মঠ আছে, শুধু তাহা নহে, ধৰ্ম্মপদবীতে উন্নত ভিক্ষুশ্রেণী আছে, মস্তক মুওন প্রথা, চিরব্রহ্মচর্য ও স্মারক চিহ্লের পূজা ও পাপস্বীকার পদ্ধতিও উহাদের মধ্যে আছে। উহাদের মোচ্ছব আছে, সমবেত উৎসব-যাত্রা আছে, প্রার্থনা-সংহিতা আছে, ঘণ্টা আছে, জপমালা আছে, শান্তিজল আছে এবং উহার সিদ্ধ মহাপুরুষদের মধ্যবৰ্ত্তিতায় বিশ্বাস করে।” উৎপত্তির হিসাবে ইহুদিধৰ্ম্মের অপেক্ষা আর্য ধৰ্ম্মসমূহের সহিত খৃষ্টধৰ্ম্মের যে অধিক যোগ তাহা বোধ হয় যথেষ্টরূপে সপ্রমাণ হইয়াছে। সেমিটিক ধৰ্ম্মসমূহের সহিত ইহুদি ধৰ্ম্মের একটা তুলনাত্মক সমালোচনা করিলেই ইহুদি ধৰ্ম্মের উৎপত্তি এবং ইহুদিধৰ্ম্ম ও খৃষ্টধৰ্ম্মের মধ্যে কি আকাশ-পাতাল প্রভেদ তাহাও স্পষ্টরূঞ্চেপ্রকাশ পাইবে । আলীরীয়দিগের ঈশ্বর যেমন জিহোবা, মুসলমানদের ঈশ্বর যেরূপ আল্লা, ইহুদিদের ঈশ্বর সেইরূপ জিহোবা। সমস্ত সেমিটক জাতির মধ্যে ঈশ্বরের স্বরূপ-কল্পনা একই প্রকার ; ইলু ( যাহা হইতে এলোহিয়, আল্লা, এল উৎপন্ন ) যাহার অর্থ মহাশক্তিমান,—কি পুরাতন কি আধুনিক, সমস্ত সেমিটক জাতির ঈশ্বর এই নামেই পরিচিত : এই ঈশ্বর আদেশপ্রচারক প্রভু ; আলীরীয়দিগের মধ্যে ইনিই অস্বর, এবং দেশের রাজা ইহঁারই মন্ত্রী ; ইহুদিদের মধ্যে ইনিই জিহোবা এবং মূসাই তাহার প্রবক্তা ; মুসলমানদের মধ্যে ইনিই আল্লা, এবং মহম্মদই আল্লার “নবী" বা প্রবাল । অসুর, জিহোবা ও আল্লা, বলের দ্বারা প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছেন ; নরহত্যার দ্বারা তাহদের নাম প্রচারিত হয়, এবং তলোয়ারই তাহদের সাংকেতিক চিহ্ন ছিল। তাঙ্গদের লইয়া যে যুদ্ধ তাহ দিগবিজয়ের যুদ্ধ ও ধৰ্ম্মপ্রচারের যুদ্ধ ; এইস্থলে দিগ্‌বিজয় ও ধৰ্ম্মপ্রচারের মধ্যে একটা দুশ্চেদ্য সম্বন্ধ বিদ্যমান ছিল। “লেশমাত্র দয়া প্রদর্শন করিবে না”—ইহাই তাহদের বীজমন্ত্র ছিল। এই জন্যই এই সকল ঈশ্বর বিশ্বজনীন ঈশ্বর হইতে পারে নাই , অক্ষর, চিরকালের মত অস্তুষ্ঠিত হইয়াছে ; জিহোবার উপাসকের পৃথিবীর সর্বাংশে বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়িয়াছে, এবং যে মুসলমান ধৰ্ম্ম কত কত সভ্যতার ভগ্নাবশেষের উপর স্বীয় সিংহাসন প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিল, তাহারও প্রতিপত্তি প্রবাসী। বিভীষিকা হইয়া দাড়াইয়াছিল, সেই ধৰ্ম্ম আজ পরাস্তৃত্যু হইয়াছে। কি স্পেন, কি আফ্রিকা, কি ইজিপ্ট কি তুর্কি, কি ভারতবর্ষ–এই সমস্ত দেশের আর্যদের নিকট ঐ ধৰ্ম্ম হটিয়া গিয়াছে। এইরূপ রোমকগণ কর্তৃক ইহুদি । ও আর্য্য-পারসিকগণ হইয়াছে – ইহুদিদের সাংকেতিক চিহ্ন সকল, আসলে ইহুদিদের নিজস্ব ছিল না। “মৈত্রী-তোরণ” মিশর দেশের একটা সাংকেতিক চিহ্ন এবং যে দুই দেবশিশু উহাকে আগলাইয় থাকত,-উহা আসরিয়া-দেশের সাংকেতিক চিহ্ন। জেরুসালেমের দেবালয়,-যুগপৎ মিসর ও ফিনিসিয়া দেশীয় ঃ- অনেক বিষয়ে ইহুদি ও সেমিটিক জাতি যে একস্বত্রে বদ্ধ,-তুলনা করিয়া তাহার বেশী দৃষ্টান্ত দেখাইবার আর প্রয়োজন নাই। আমি শুধু এইটুকু দেখাইতে চাছি যে, ইহুদিজাতি হইতে খৃষ্টধৰ্ম্মের উৎপত্তি হয় নাই। উহাদের সভ্যতা অতীব সীমাবদ্ধ ; মিশর দেশ হইতে বাহির হইবার সময়, মিশর দেশ হইতে, এবং যে ব্যাবিলো: নিয়া ও পারস্ত দেশ উহাদিগকে বশীভূত করিয়াছিল,— ঐ দুই দেশ হইতেও উহার কতকটা সভ্যতা প্রাপ্ত হয়। উহাদের একেশ্বরবাদ, অন্যান্য সেমিটিক জাতির একেশ্বর বাদেরই অনুরূপ ; এই একেশ্বরবাদের শ্রেষ্ঠতার কথা দূরে থাক, বরং উহার অপকৃষ্টতাই সপ্রমাণ হয় ; কেন না, উহাদের ঈশ্বরের স্বরূপ-কল্পনা মানবিকতার উপর প্রতিষ্ঠিত, উহাদের ঈশ্বর ‘ইহুদিজাতিরই ঈশ্বর-সীমাবদ্ধ ঈশ্বর উহাদের ঈশ্বর-কল্পনা অতীন্দ্রিয় একতায় উন্নীত হইতে পারে নাই । ইহাতে বিস্ময়ের বিষয় কিছুই নাই, কেননা উহার পশ্চাৎশিরস্ক জাতি,—অর্থাৎ ঐ সকল জাতির মস্তিষ্কের পশ্চাদ্ভাগ, পুরোভাগ অপেক্ষ অধিক পরিপুষ্ট। উহাদের দৈহিক বৃদ্ধির দ্রুততা প্রযুক্ত, মাথার খুলির অস্থিগুলা, ১৫/১৬ বৎসর বয়সেই, পরম্পরের সহিত দৃঢ়রূপে যোড় লাগিয়া যায় ; সুতরাং মস্তিষ্কের ধূসর অংশ পরিপুষ্ট হইতে পারে না। কর্তৃক আসীরায়ের বহিষ্কৃত (Occipital. পক্ষান্তরে, আর্য্যজাতীয় লোকের করোটার (মাথার | নিকট হইতে সংগ্রহ করে। প্রাচ্যখণ্ডের সমস্ত দর্শন শাস্ত্র | ... হ্রাস হইয়াছে। মধ্যযুগে যে ইসলাম ধৰ্ম্ম ਾਂ ! A. ব্যাঘাত হয় না । ৫ম সংথ্যা | | লী) অস্থিথওগুলা বেশী বয়সে পরপরের সহিত সম্পূর্ণ রূপে যোড় লাগে এবং এই কারণে উহাদের নড়াচড়ার এই দেহতাত্ত্বিক প্রভেদপ্রযুক্ত, কোন সেমিটিক জাতির পক্ষে, কোন প্রকার সমুন্নত অতীন্দ্রিয় বিষয়ের ধারণা একপ্রকার অসম্ভব বলিলেও হয়। উহাদের সাহিত্যিক কীৰ্ত্তিগুলিই ইহার প্রমাণ । খৃষ্টধর্যের প্রসাদেই ইহুদি জাতি প্রসিদ্ধি লাভ করিয়া এত উচ্চ আসন দখল করিয়া বসিয়াছে। কিন্তু খৃষ্টধৰ্ম্মের উৎপত্তি-বিবরণ ইহুদি জাতির সহিত যুড়িয়া দেওয়ায় খৃষ্টধৰ্ম্ম এখন বিপদে পড়িয়াছে। বিজ্ঞানের আলোকে চোখ ফুটিলেও, আধুনিক খৃষ্টধৰ্ম্ম ঐ দুৰ্ব্বত বোঝাটাকে স্কন্ধ হইতে ফেলিয়া দিতে পারিতেছে না। সত্য কথাটা প্রকাশ করিবার কিন্তু এখন সময় হইয়াছে। যে প্রাচ্যভূখণ্ডকে এত কাল কেহ আমলে আনে নাই—সকলেই কেবল “দূরছাই” করিয়া আসিয়াছে, এবং যাহার স্থায্য সিংহাসন, স্বকীয় পুরাতন কিংবদন্তী অনুসারে ইহুদিজাতি ১৮০০ বৎসর ধরিয়া জোর দখল করিয়া বসিয়া আছে, সেই প্রাচ্যথওকে এখন তাহার প্রাপ্য সিংহাসনে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করা আবশ্যক। বিভিন্ন সভ্যতা, একটার পর একটা ক্রমান্বয়ে আবিভূত হয়; প্রত্যেক সভ্যতা পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী সভ্যতার সমস্ত জ্ঞানসমষ্টি গ্রহণ করিয়া, তাহার নিজের বিশেষ প্রতিভার দ্বারা আবার তাহা হইতে নূতন পরিণাম-পরম্পর উৎপাদন করে। অতএব, এইরূপ সহসা মনে হইতে পারে যে, প্রাচীন সভ্যতা সমূহের উত্তরাধিকারী পাশ্চাত্য সভ্যতা অবশু প্রাচীন সভ্যতা সমূহ হইতে উৎকৃষ্ট। কিন্তু তথ্যের দ্বারা তাহা সপ্রমাণ হয় না। কোন জাতির শ্রেষ্ঠত তিন জিনিসের উপর নির্ভর করে ;–দর্শন, ধৰ্ম্মনীতি, ও শিল্পকলা। বৈষয়িক সভ্যতা, জ্ঞান ধৰ্ম্মের সভ্যতা অপেক্ষ নিকৃষ্ট । স্পিনোজা, লাইবনিজ, কান্ট, দেকাপ্ত হইতে আরম্ভ করিয়া ফিতে, স্পেনসার, শপেনহীেয়ুর পর্য্যস্ত, আমাদের মধ্যে এমন একটিও দর্শনতন্ত্র নাই যাহা আমাদের নিজস্ব রত্নখনি হইতে উৎপন্ন ; আমরাও এখনও গ্রীক দৰ্শন সম্প্রদায়ের দর্শনাদির অনুশীলন করিয়া থাকি ; আবার এই গ্রীকের তাহদের দার্শনিক তত্ত্বসকল গোড়ায় মিসরদেশীয় পুরোহিত ও ভারতের ব্রাহ্মণদিগের প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতা । ২৫৫ আসিয়া, অ্যালেকজান্দ্রীয় দর্শনসম্প্রদায়ের মধ্যে কেন্দ্রীভূত হইয়াছিল ; এবং সমস্ত পাশ্চাত্যথগু সেই ভাণ্ডার হইতে আপন আপন খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করে। Saint Jerome, Magnusকে যে পত্র লেখেন তাহাতে এইরূপ আছে :–“খুষ্টধৰ্ম্মের আচাৰ্য্যদের কথা আর কি বলিব, যে প্রাচীনদিগের মত র্তাহারা খণ্ডন করিতে প্রবৃত্ত, সেই প্রাচীনদিগের অন্নেই তাহারা পরিপুষ্ট।”—যত কিছু উন্নত নীতি উপদেশ তাহা ভারত ও চীন হইতেই আসিয়াছে। পীত-জাতির মধ্যে আবার এই একটা অদ্ভূত ব্যাপার দেখা যায় যে, উহারা ঈশ্বরের কল্পনা বর্জন করিয়া, শুধু ধৰ্ম্মনীতির ভিত্তির উপর, উহাদের সভ্যতা গড়িয়া তুলিয়াছে। আমার প্রণীত "মনু ও ভগবদ গীতা” গ্রন্থে আমি যে সকল বাক্য উদ্ধৃত কুরিয়াছি তাহা হইতে ব্রাহ্মশ্যিক ভারতের অতীৰ উন্নত ও বিশুদ্ধ ধৰ্ম্মনীতির পরিচয় পাওয়া যায়। এবং সেই মধুর প্রকৃতি শাক্যমুনির এই সকল নীতি স্বত্র-যথা “কেহ তোমার অনিষ্ট করিলে ক্ষমা করিবে”, “ক্ষুদ্রতম জীবকেও হিংসা করিবে না,” “দরিদ্র ও ধনীকে সমভাবে দেখিবে”— এই সকল উপদেশ বাক্য অতিবড় নিষ্ঠুর জাতিদিগকেও সভ্য করিয়া তুলিতে,-কোমল ভাবাপন্ন করিয়া তুলিতে সমর্থ হইয়াছে। এ কথা সত্য, অবনতিগ্ৰস্ত ভারত, পারস্ত, গ্রীণ ও রোমের চিত্র যাহা আমাদের সম্মুখে এখন রহিয়াছে তাহা বড় একটা গৌরবজনক নহে ; কিন্তু আমি এ কথা বলিতে পারি না, আমাদের সভ্যতার চিত্র উহাদের অপেক্ষা কোন অংশে উৎকৃষ্ট । ধৰ্ম্ম সংক্রান্ত যুদ্ধবিগ্রহ, পাষণ্ড-দলনী বিচার-সভা, (Inquisition) দাসত্বপ্রথা—এই সমস্ত পাশ্চাত্য সভ্যতার রক্তময় কলঙ্ক ; আরও কাছাকাছি সময়ের কথা যদি ধর,— ৮৯র রাষ্ট্র বিপ্লব-স্বাধীনতা ও ন্যায়ের যুগ উদ্‌ঘাটন করা যাহার উদেশ্ব ছিল - সেই রাষ্ট্রবিপ্লবের রক্তাল্পত আতিশয্য ও অত্যাচার, বুদ্ধদেবের শান্তিময় বিপ্লবের কথা মনে করাইয়া আমাদের চিত্তকে বিষাদে আচ্ছন্ন করে। লোকে যাহার এত নিন্দ করে সেই হিন্দুদের বর্ণভেদ প্রথাও আমাদের মধ্যযুগের সামগু-তন্ত্র,—উহাদের অপব্যবহার সত্ত্বেও,—সভ্যতাকে যে অনেক পরিমাণে অগ্রসর করিয়া দিয়াছে তহাতে সন্দেহ নাই। তা ছাড়া, যে